সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়

প্রয়াত ফরহাদ হোসেন তালুকদার ও শামসুন্নাহার দম্পতির ১০ ছেলে-মেয়ে। পাঁচ ছেলের মধ্যে দুজন ফুটবলকে আলোকিত করে চলেছেন। টাঙ্গাইলের গোপালপুর থেকে উঠে দুজন কোচ নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। একজন গোলাম রব্বানী ছোটন, সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে দলকে শিরোপা এনে দিয়ে উচুঁতে অবস্থান করছেন। অন্যজন তার চেয়ে দুই বছরের ছোট, গোলাম রায়হান বাপন। তিনি নিজ জেলার গণ্ডি ছাড়িয়ে নারী ফুটবল লিগে অন্যতম সেরা কোচ। এবার এই প্রথম দুই ভাই ডাগআউটে মুখোমুখি হচ্ছেন। মগজ অস্ত্রের লড়াইয়ে হচ্ছেন সামিল । তাই তাদের মধ্যে উত্তেজনা কিংবা রোমাঞ্চ কম নয়।

ছোটন এই প্রথম নারী লিগে ডাগ আউটে দাঁড়াতে যাচ্ছেন আর্মি দলের হয়ে। টানা ১৪ বছর বাফুফেতে নারী দলের কোচ হয়ে কাজ করার পর গত বছর আর্মি দলে যোগ দিয়েছেন। ক্যারিয়ারে সফল একজন কোচ এবারই প্রথম নারী লিগে ডাগ আউটে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছেন।

নারী লিগে কাল শনিবার উদ্বোধনী ম্যাচে ছোট ভাইয়ের দল আতাউর রহমান কলেজের মুখোমুখি হচ্ছেন, ছোটনের মনে এ নিয়ে উত্তেজনা কম নয়। দীর্ঘদিন জাতীয় দল নিয়ে বিভিন্ন দেশের বিপক্ষে লড়াই করে গেছেন। এবার দেশে ক্লাবের মধ্যে লড়াই। তাও আবার শুরুতে ছোট ভাইয়ের বিপক্ষে!

ছোটন অবশ্য সবকিছু পেশাদারিত্বের চোখে দেখছেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘এখানে কে বড় ভাই কিংবা ছোট ভাই তা দেখছি না। ঘরে আমরা দুই ভাই। চমৎকার সম্পর্ক। তবে মাঠে প্রতিপক্ষ। তাই আমি আমার মেধা দিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবো। তবে ভাই হিসেবে ও কী করে তাও দেখার আছে। বলতে পারেন একধরনের চ্যালেঞ্জ তো আছেই।’

মাঠের লড়াইয়ে ছোট ভাই বাপনকে আলাদা চোখে দেখলেও তার প্রশংসা করতে ভুল করেননি ছোটন, ‘বাপন নিভৃতে থেকে কাজ করতে পছন্দ করে। ও নারী ফুটবলে অনেক কাজ করেছে। ওর অবদান কম নয়। ও ভালো কোচ। আশা করছি ও দল নিয়ে ভালো করতে পারবে। আমি ওকে শুভকামনা জানাই। তবে কালকের ম্যাচে আমরা জয়ের জন্য খেলবো। তখন ভাই নয়, প্রতিপক্ষের কোচ হিসেবে ওকে দেখবো!’

এক যুগেরও বেশি সময় বাফুফেতে নারী দলের হয়ে কাজ করে ৯টি ট্রফি জিতেছেন ছোটন। এবার ক্লাব দলের হয়ে প্রথমবার দায়িত্ব সাফল্য পেতে চাইছেন। তবে শিরোপার চেয়ে ইতিবাচক ফুটবলের দিকে দৃষ্টি বেশি ৫৫ বছর বয়সী কোচের, ‘আমাদের দলটি পেশাদারিত্বের মোড়কে ঘেরা। আমি চাইবো সবাই লড়াকু পারফরম্যান্স দেখাক। সবার সঙ্গে লড়াই করে যতদূর যাওয়া যায়। ভালো ফুটবল খেলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি।’

বড় ভাইয়ের আপ্তবাক্যগুলো ছোট ভাই বাপনকে শোনানোর পর তিনিও নির্লিপ্ত অনেকটাই। এএফসি বি লাইসেন্সধারী এই কোচ গোপালপুল সুতি ভি এম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরি করেন। সেই স্কুলকে পাঁচবার আন্তঃস্কুলে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। জেএফএ কাপে টাঙ্গাইলকে সেরা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। 

এছাড়া নারী লিগে আতাউর রহমান গতবার রানার্সআপও হয়েছে বাপনের হাত ধরে। ঢাকার নিচের সারির লিগে খেলা সাবেক ডিফেন্ডার গ্রামে ফিরে ফুটবল আঁকড়ে পড়ে ছিলেন। ১৯৯৭ সাল থেকে সেই যে আছেন, আর কোথাও যাননি। 

বড় ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই নিয়ে বাপনের সোজাসাপ্টা কথা, ‘মাঠে তো ভাই হিসেবে কেউ কাউকে দেখে না। ওটা তো বাসায়। আমি আমার মতো দলকে খেলিয়ে যাবো। আশা করছি এবারও আমরা সাফল্য পাবো। ট্রফিতে আমাদের চোখ। আর প্রথম ম্যাচে বড় ভাইয়ের দলকে হারানোর লক্ষ্য আমাদের।’

তবে বড় ভাইকে শ্রদ্ধা করে বাপন বলেছেন, ‘ছোটন ভাই দেশের সেরা কোচ। দেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। সাফ শিরোপা এসেছে তার হাত ধরে। আমিও চাই ক্লাবের পাশাপাশি একসময় জাতীয় দলের হয়ে ডাগ আউটে দাঁড়াতে, বড় ভাইয়ের মতো সাফল্য পেতে। যদিও আমি এখন যা আছি তা নিয়েই খুশি।’

ডাগ আউট কিংবা লিগে দুই ভাইয়ের লড়াই বেশ জমবে, সেই ইঙ্গিত এখনই মিলছে!