আবার লাল-সবুজ পতাকা বহনের স্বপ্ন রত্নার

শারমিন আক্তার রত্নামাহনুর কারনাইনের এক বছর পূর্ণ হবে আগামী ২৩ অক্টোবর। মেয়েকে জন্মদিনের অগ্রিম উপহার দিতেই বোধহয় অনেক দিন পর স্বরূপে শারমিন আক্তার রত্না। এবারের জাতীয় প্রতিযোগিতা দিয়ে দীর্ঘদিন পর শুটিং রেঞ্জে ফিরে তিনি সাফল্যে উজ্জ্বল। ৫০ মিটার থ্রি পজিশনে সোনা জিতেছেন, নিজের প্রিয় ইভেন্ট ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে প্রাপ্তি রুপা। অথচ কত ঝামেলাই না পোহাতে হয়েছে তাকে! ২০১৫ সালে ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের’ কারণে ছয় মাস সাসপেন্ড হয়েছিলেন, গত দুই বছর সংসারের জালেও আবদ্ধ ছিলেন তিনি।

গত মার্চে এয়ার গান চ্যাম্পিয়নশিপ দিয়ে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন রত্না। কিন্তু প্রস্তুতি ভালো না থাকায় তেমন সুবিধা করতে পারেননি। নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন এবারের জাতীয় প্রতিযোগিতাকে ঘিরে। রেখে। লক্ষ্যপূরণ হয়েছে অনেকটাই। এবার  তিনটি ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। একটি করে সোনা ও রুপা জিতলেও প্রোন ইভেন্টে প্রথম তিন জনের মধ্যে থাকতে পারেননি।

তবু দু বছর পর শুটিং রেঞ্জে ফিরে দুটি পদক প্রাপ্তিকে সাফল্য বলতেই হবে। রত্নাও নিজের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বললেন, ‘নানা কারণে শুটিংয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছিলাম। বছরের শুরুতে এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপে কোনও প্রত্যাশা ছাড়াই  অংশ নিয়েছিলাম। এবারের জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আগে কিছুটা প্রস্তুতি ছিল। অল্প দিনের অনুশীলনে ফল খারাপ হয়নি। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে একটুর জন্য সোনা আসেনি। ৫০ মিটারে ২০১৫ সালে সোনা ছিল, এবারও পেয়েছি। সেজন্য আমার কোচ জিএম হায়দার সাজ্জাদের অনেক অবদান। তার কোচিংয়েই সাফল্য এসেছে।’

২০০৪ সালে শুটিংয়ে পথচলা শুরু রত্নার। ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে ঘরোয়া আসরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাফল্য পেয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক আসরে তার পদক সংখ্যা ৬। ২০০৯ সালে বিকেএসপিতে সাউথ এশিয়ান শুটিংয়ে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ব্যক্তিগত ও দলীয় বিভাগে রুপা পেয়েছিলেন। পরের বছর ঢাকায় অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে এসেছিল সোনা-রুপা দুটোই। ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ শুটিংয়েও জিতেছিলেন সোনা ও রুপা। ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় দীর্ঘদিন ১০ মিটার একক ইভেন্টের শ্রেষ্ঠত্ব ছিল রত্নার দখলে।

কিন্তু সাফল্যের পথে তিনি থাকতে পারেননি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনি ফেডারেশনে রদবদলের পর নেমে এসেছে সাসপেনশনের খাঁড়া। এই শাস্তি নিয়ে রত্নার মনে ভীষণ আক্ষেপ, ‘শুটিং থেকে যে দূরে থাকতে হবে, তা কখনও চিন্তাও করিনি। পারফরম্যান্স হেরফের হতেই পারে। আমি হয়তো অনেক সময় অপ্রিয় কথা বলে ফেলি, যা শুনে কেউ কেউ মনঃক্ষুন্ন হয়। কী কারণে সাসপেন্ড করা হয়েছিল, তা এখনও আমার জানা নেই।’

ঘরোয়া আসরে ফিরেছেন, তবে আন্তর্জাতিক আসরে অংশগ্রহণ নিয়ে রত্নার মনে যথেষ্ট সংশয়। তার কথাতেই তা পরিষ্কার, ‘আমার কাজ আমি করেছি, দুটি ইভেন্টে পদক জিতেছি। আমার অতীত ও বর্তমান সাফল্য বিবেচনা করে ফেডারেশন যদি মনে করে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাকবে, তাহলে ভালো। না ডাকলে তো কিছু করার নেই। নিজের ভাগ্য ফেডারেশনের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। লাল-সবুজ পতাকা বহন করতে কার না ভাল লাগে!’