সিদ্দিকুরের অনুপ্রেরণা প্রথম এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা

গলফার সিদ্দিকুর রহমানকরোনাভাইরাসের প্রকোপে সবাই এখন ‘ঘরবন্দি’। দেশের সব খেলাও বন্ধ। অবসর সময়ে অনেক খেলোয়াড়ই অনলাইনে এসে স্মৃতিচারণমূলক আড্ডায় মেতে উঠছেন। সেই আড্ডায় উঠে আসছে তাদের খেলোয়াড়ি জীবনের নানান দিক। এই যেমন দেশসেরা গলফার সিদ্দিুকর রহমান ও ভারতের শিব শঙ্কর চৌরাসিয়া মেতে উঠেছিলেন আড্ডায়। আজ (সোমবার) বিকেলে ‘দ্য গলফ হাউস গলফ টক’ প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন তারা।

আন্তর্জাতিক গলফে সিদ্দিকুরের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী চৌরাসিয়া। দুজনের ক্যারিয়ার শুরু গল্পটা প্রায় একই। দুজনেই বলবয় দিয়ে শুরু করে এখন নিজ নিজ দেশে আইডল। গলফ কোর্সে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও ব্যক্তিগত জীবনে কিন্তু দুজনের বন্ধুত্ব দারুণ। লাইভে এসে পৌনে দুই ঘন্টা আলাপচারিতায় সেই বন্ধুত্বের গল্পের সঙ্গে তারা জানালেন অজানা অনেক কথা।

৩৫ বছর বয়সী সিদ্দিকুর ২০০৫ সালে পেশাদার গলফের আঙিনায় পা রেখেছিলেন। বাংলাদেশের একমাত্র গলফার যিনি দুইবার এশিয়ান ট্যুর জিতেছেন, ২০১০ ও ২০১৩ সালে। এছাড়া ২০১৬ সালে ব্রাজিলের অলিম্পিকে খেলেছেন সরাসরি।

৯ বছর বয়স থেকে কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে তার শুরুটা হয়েছিল বলবয় দিয়ে। সেই স্মৃতি রোমন্থন করে সিদ্দিকুর বলেছেন, ‘আমি যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ি তখন কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। একজন আত্মীয়ের মাধ্যমে সুযোগ আসে। কাজের সন্ধানে যাই। সেখান থেকে আস্তে আস্তে এখন আমি দেশের পতাকা বহন করছি। দেশের জন্য গলফ খেলছি। যতদিন পারব খেলে যাব।’

সাম্প্রতিক সময়ে সিদ্দিকুরের ফর্ম ভালো যাচ্ছে না। অনেকদিন হলো এশিয়ান ট্যুর জেতা হয়নি। একাধিক প্রতিযোগিতায় কাছাকাছি গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি তিনি। সেই হতাশা আছে তার মনে, ‘আমি গলফ দ্রুত শিখেছি। মাঝেমধ্যে অবশ্য খেই হারিয়ে ফেলি। অনেক প্রতিযোগিতাতেই বাজে খেলেছি। অনেক সময় আমি চাপ নিতে পারিনি। চাপ না নেওয়ার কারণে হেরে যাই।’

দুটি এশিয়ান ট্যুর জিতেছেন সিদ্দিকুর। ২০১৩ সালেরটি সেরা অর্জন হলেও ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন তিনি ২০১০ সালে প্রথম এশিয়ান ট্যুরের শিরোপা জয়ের মাধ্যমে। সিদ্দিকুরের ভাষায়, ‘আমার অন্যতম সেরা অর্জন হলো ২০১৩ সালের শিরোপাটি। দাদাও (চৌরাসিয়া) আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। তবে ব্রুনেই ওপেন ২০১০ জেতাটা সবচেয়ে স্মৃতিময়। যখন আমি অর্থনেতিক সংকটে ভুগছিলাম, তখন এটা বেশ কাজে দেয়। এরপর আমি ঘুরে দাঁড়াই, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’

সিদ্দিকুরের মতো চৌরাসিয়াও বড় হয়েছেন গলফ ক্লাবে। কলকাতা গলফ ক্লাবে তার বাবা কাজ করতেন। সেখানেই সবুজ ঘাসের সঙ্গে পরিচয়। ৪১ বছর বয়সী এই গলফার ক্যারিয়ারে ছয়টি এশিয়ান ট্যুর জিতেছেন। এছাড়া তার ঝুলিতে রয়েছে চারটি ইউরোপিয়ান ট্যুরের ট্রফি।

সিদ্দিকুরের কাছে ২০১৩ সালে হিরো ওপেনে হেরে যাওয়া চৌরিশিয়া বলেছেন, ‘আমাদের দুজনের কাহিনী প্রায় একই। আমি গলফ ক্লাবে বড় হয়েছি। আমার বাবা সেখানে কাজ করতেন। ছোটবেলা থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। এছাড়া ক্যাডি বয় থেকেও শিখেছি। সিদ্দিকের সঙ্গে প্রায় প্রতিযোগিতাতেই খেলা হয়। ২০১৩ সালে তো তার কাছে হেরেছি। আমি আসলে ইলিশ মাছ পছন্দ করি। সিদ্দিক যদি আমন্ত্রণ নাও জানায়, তারপরও আমি বাংলাদেশে আসতে চাই।’