৩ কোটি টাকার ওপরে বিদ্যুৎ বিল, ফেডারেশন কর্তাদের মাথায় হাত

করোনাকালেও ফেডারেশনগুলোর চাকা সচল ছিল। তবে হঠাৎ তাদের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) এক চিঠিতে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে! গত ২৫ জানুয়ারি এক চিঠিতে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের তাগাদা দেওয়া হয়েছে। ৫১টি ক্রীড়া ফেডারেশন ও সংস্থাকে মোট ৩ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ৬১৬ টাকার বিল ১৫ দিনের মধ্যে দিতে হবে। যার শেষ দিন বৃহস্পতিবার। এমন নোটিশে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা বিস্মিত ও হতবাক। বেশিরভাগেরই আয়ের উৎস না থাকায় কীভাবে দেবেন, পড়েছে বিপাকে। এই অবস্থায় ফেডারেশনগুলো নিজেদের মধ্যে সভা করে বকেয়া পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে এই বকেয়া নিয়ে বিস্তারিত বলতে পারছে না এনএসসি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্দিষ্ট বকেয়ার কথা লিখে নোটিশ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ফেডারেশনগুলোকে।

নোটিশে সবচেয়ে বেশি ৬৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮৭ টাকা বকেয়া হকি ফেডারেশনের। এর পরেই আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি), বকেয়া ৩৯ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৭ টাকা। তৃতীয় স্থানে ভলিবল ফেডারেশন, ২৯ লাখ ৮১ হাজার ৭১৯ টাকা। ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ও তাদের আওতাধীন মহানগনর ফুটবল লিগ কমিটির বকেয়া ২৮ লাখ ৯ হাজার ৫৯২ টাকা। বাকি ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোরও কমবেশি বকেয়া আছে।

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পক্ষ থেকে তাগাদাপত্র স্বাক্ষর করেছেন পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মুহাম্মদ সারওয়ার জাহান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেছেন, ‘আমরা কিন্তু নিয়মিত বিল পরিশোধ করে যাচ্ছি। সেই বকেয়াগুলো তো আদায় করতে হবে। কতদিন এই ভার বয়ে বেড়াবে এনএসসি? তাই আমরা চিঠি দিয়েছি। দেখা যাক, ফেডারেশনগুলোর কাছ থেকে কী ধরনের সাড়া পাওয়া যায়। এত টাকা বকেয়া হয়ে গেলে তো মুশকিল। অনেক ধনী ফেডারেশন আছে। তাদের মধ্যেও বিল দেওয়ার প্রবণতা নেই। ছোট ফেডারেশনগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম।’

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিদ্যুতের পয়েন্ট একটি। সেখান থেকে সাব-মিটার করে ফেডারেশনগুলো আলোকিত হয়। এনএসসির সচিব পরিমল সিংহ হঠাৎ এমন তাগাদাপত্র নিয়ে বলেছেন, ‘প্রতিটা ফেডারেশনের জন্য সাব-মিটার করা আছে। ব্যবহার অনুযায়ী তাদের বিলের টাকা আমাদের কাছে পরিশোধ করার কথা। অথচ প্রায় ৯০ শতাংশ ফেডারেশনের বকেয়া রয়েছে। তাই দীর্ঘদিনের এই বকেয়ার জন্য একটা তাগাদাপত্র দেওয়া হয়েছে।’

এই সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্তের কথাও মনে করিয়ে দিলেন এই কর্মকর্তা, ‘আগের চেয়ারম্যানের সময় একটা সিদ্ধান্ত ছিল, যারা বকেয়া রেখেছে, তাদের বার্ষিক বরাদ্দ থেকে ভাগে ভাগে কেটে রাখার। যদিও বরাদ্দ বড্ড সামান্য। আমরাও কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করিনি। সেটা করার সিদ্ধান্তও নেই। অল্প অল্প করে দিলেও একটা ধারাবাহিকতা থাকে।’

সোমবার এ নিয়ে সভায় বসেছিলেন ফেডারেশন কর্তারা। ক্রীড়া ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের সংগঠনের সভাপতি ও হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান কোহিনুর অসহায় সুরে বলেছেন, ‘ক্রীড়া ফেডারেশনগুলো অনেক কষ্ট করে বছরব্যাপী খেলাধুলা পরিচালনা করে থাকে। ক্রীড়া পরিষদ বার্ষিক যে বরাদ্দ দেয় তা দিয়ে স্টাফ বেতনও হয় না। এ অবস্থায় বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার অবস্থা আমাদের নেই। আমাদের পক্ষে বিল দেওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় আমরা ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

সবচেয়ে বেশি বকেয়া হকি ফেডারেশনের। সেই ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, ‘দেখুন, আমরা অনেক কষ্ট করে খেলা চালাই। স্পন্সরের টাকা এনে যদি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করি তাহলে কোনও খেলা চালাতে পারবো না। হকি স্টেডিয়ামের নিচে অনেক দোকান আছে। এ সব থেকে রাজস্ব কিন্তু এনএসসি নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কোনও লাভ হচ্ছে না। এখন তারা যদি দোকানগুলো ক্রীড়া ফেডারেশনের কাছে বরাদ্দ দিতো, আমাদের একটা স্থায়ী আয়ের উৎস হতো। ক্রীড়াবান্ধব সরকার ও প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় বিষয়টি দেখবেন।’

বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ মনে করিয়ে দিলেন, ‘বছরে আমরা এনএসসির কাছ থেকে বরাদ্দ পাই চার কিস্তিতে, ২০ লাখ টাকা। এর বাইরে কিছুই পাই না। আমরা কখনোই বিদ্যুৎ বিল দেই না। এখন যদি সেটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, অন্যায় হবে।’