তিনি ব্রাজিলের সাংবাদিকতার ‘পেলে’

ব্রাজিলের অনুশীলন কেন্দ্রে সরব উপস্থিতি তার। অনুশীলন কেন্দ্রের পাশাপাশি মিডিয়া সেন্টারে সাবলীলভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই প্রবীণের নাম বাতিস্তা নাদাল। ব্রাজিলের রেডিও লাগোয়া দৌরাদার হয়ে কাতার বিশ্বকাপ কাভার করতে এসেছেন তিনি। এখন মনে হতে পারে বিশ্বকাপ কাভার করতে তো অনেক সাংবাদিক এসেছেন। তাহলে সেই প্রবীণ ভদ্রলোকের প্রসঙ্গ কেন এলো?

তার পরিচয় বিস্তারিত দিলেই সবকিছু পরিষ্কার হবে। সেই ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০টি বিশ্বকাপ কাভার করেছেন মাঠে বসেই, তাহলে তার কথা না লিখে উপায় কী?

বিশ্বকাপে কিংবদন্তি পেলের যেখানে সাফল্যের শেষ, সেই ১৯৭০ সালে বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর কাভার করা শুরু করেন বাতিস্তা। মেক্সিকোর ওই আসর দিয়ে শুরু। এরপর ১২টি বিশ্বকাপ মাঠে গড়িয়েছে, তার মধ্যে ১০টি সরাসরি মাঠে বসে কাভার করেছেন। কাতার বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে তার দশম বিশ্বকাপ।

ব্রাজিলের অনুশীলনের কেন্দ্র আল আরাবি স্পোর্টস ক্লাব। সেখানেই দেখা বাতিস্তার সঙ্গে। নেইমার-আলিসন-পাকেতাদের নিউজ সংগ্রহ করতে বয়সকে সংখ্যা বানিয়ে চলে এসেছেন মাঠে। ক্লাব ভবনের ভেতরে মিডিয়া কর্মীদের জন্য বানানো মিডিয়া সেন্টারে তার সঙ্গে চললো আলাপ। প্রথম আবেদনেই সাড়া দিতে কার্পণ্য করেননি। যখন বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনলেন সতীর্থদেরও চিৎকার করে তখনই শুনিয়ে দিলেন।

ব্রাজিলের হলুদ জার্সিরই অনুরূপ এক টি-শার্ট পড়েছেন। বয়সের চাপে ন্যুব্জ হলেও মনের জোর কিন্তু কম নেই। আস্তে আস্তে চলাফেরা করছেন। আর কথা বলার সময় চেয়ারে সাবলীলভাবে বসে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিলেন। কোনও সময় নিজেই বলছেন, আবার দোভাষীর সাহায্য নিচ্ছেন। সেখানে কৌতূহলী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রায় সবার প্রশ্ন ছিল—পেলে না ম্যারাডোনা সেরা? চিরাচরিত সেই প্রশ্নের উত্তরে বাতিস্তা অকপটে বললেন, ‘এদসন আরেন্তোস দো নাসিমেন্তো পেলে। ম্যারাদোনা নয়। লিওনেল মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো দুর্দান্ত, কিন্তু পেলেই সেরা।’

এরপরই আরও যোগ করলেন, ‘এই শতকের সেরা ক্রীড়াবিদ। কারণ ও ১০০০ গোল করেছে। এছাড়া জাতীয় দলের হয়ে ৮৪ গোল করেছে। সে অতিসাধারণ একটা মানুষ। সবার সঙ্গে মিশতে পারে। সবাইকে সম্মান করে। কাউকেই এড়িয়ে যায় না।’

এই বিশ্বকাপে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড, জার্মানিসহ বড় দলগুলোকে নিয়ে আশার শেষ নেই। কাতারে কোন দল ফেভারিট? বাতিস্তা একবাক্যে সবাইকে অবাক করে বলেন, ‘আর্জেন্টিনাই ফেভারিট!’

এসব যখন বলছিলেন তখন সতীর্থরা পাশ থেকে বলে যাচ্ছিলেন, ‘বাতিস্তাই আমাদের সাংবাদিকতার পেলে।’ তা শুনে প্রবীণ ভদ্রলোক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেন না। তবে পুরো পরিবেশটাই যে উপভোগ করছেন তা বলার আর বাকি থাকেনি।