মেসি কোথায়, উত্তর মিলেছে

২০০৬ থেকে ২০২২। মাঝে ষোলোটা বছর। সময়ের বহমান স্রোতধারায় ষোলো হয়তো কিছুই নয়, আবার অনেক কিছুও। খেলোয়াড়দের গোটা ক্যারিয়ার ধরে যায় এই সময়কালের ভেতর। প্রথম বিশ্বকাপ থেকে পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে মেসি নিজেকে এমন এক উচ্চতায় তুলে ধরেছেন, তা কেবলই বিস্ময়ের উদ্রেক করে।

প্রথম ম্যাচে সৌদির কাছে হার। সোশাল মিডিয়ার জমানায় মানুষের ধৈর্য প্রায় গোল্ড ফিশের রেকর্ডকেও ভেঙে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই গুচ্ছ গুচ্ছ মিম ভেসে উঠলো ফেসবুকের টাইমলাইনে ‘হয়্যার ইজ মেসি?’। জবাব দিয়েছেন মেসি। উত্তর মিলেছে, মেসি এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর তর্কসাপেক্ষে নয়, তর্কাতীতভাবেই তিনি এখন সর্বকালের সেরা!

তার কাছে ক্যানভাস, প্যালেট কিংবা তুলি নেই। রয়েছে বাঁ পা। ওই পা দিয়েই তিনি দেড় যুগ ধরে এঁকে চলেছেন কালজয়ী ছবি। ক্যানভাস তার সবুজ ঘাস। সেখানে ফুটবল নিয়ে ডজ, ড্রিবল, ফেইন্টের রং ছড়ানো তার সহজাত প্রতিভা। তিনি ছন্দে থাকলে জয়ের কবিতা লেখে আর্জেন্টিনা। আর প্রতিপক্ষ শোনে পরাজয়ের ফরমান।

ক্লাব ফুটবলে যা যা জেতা দরকার, সবই জিতেছেন, বাকি নেই কোনও ব্যক্তিগত অর্জনও। আর্জেন্টিনার হয়ে জিতেছেন অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ, অলিম্পিক, কোপা আমেরিকা ও ফিনালেসিমা। তবুও যেন হাহাকার, বিশ্বকাপ যে জেতা হয়নি! জাতীয় দলের হয়ে নামলে বারবার প্রশ্ন ওঠে, ‘মেসি কোথায়?’ কিংবা মিমে ভরে যায় ‘মেসি একা কী করবে’ ট্রলে।

ফাইনালের আগে রাজনীতি থেকে দর্শন, বিনোদন থেকে বিবিধে একটাই প্রশ্ন, কে জিতবে? মেসি না এমবাপ্পে?

ফুটবলপ্রেমীদের আবেগের বিস্ফোরণ আর্জেন্টিনার জয় চাইলেও মস্তিষ্কের সায় ফ্রান্সের দিকে। কাগজে-কলমে কিছুটা হলেও এগিয়ে ছিল আইফেল টাওয়ারের দেশ। তার ওপর গতবার এমবাপ্পেদের কাছে ওমনভাবে বিধ্বস্ত হয়েছিলেন মেসিরা।

নিভে যাওয়ার আগে মরুদেশে কি শেষবার জ্বলে উঠবে শিল্পের প্রদীপ? ফরাসি সুগন্ধ ভুলিয়ে তিনি কি পারবেন ম্যারাডোনাকে ছুঁতে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলেছে গত রাতে। পেরেছেন মেসি। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। করলেন জোড়া গোল। টাইব্রেকার স্নায়যুদ্ধে জিতে ঘোচালেন ৩৬ বছরের দুঃখ-দুঃস্বপ্ন।

আশির দশক বা তারপর যাদের জন্ম, তাদের কাছে ডিয়েগো ম্যারাডোনা কেবলই এক ঈশ্বরের নাম। ’৮৬-র মতো তেমনই এক রাত উপহার দিলেন মেসি-ডি মারিয়ারা। এই বিস্ময়, এই ম্যাজিকের জন্যই রাতজাগা। এমন রাতে ধরাধামে ম্যারাডোনা না থাকলেও একজন মেসি আছেন।

ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ শৈল্পিক পাস, আপাত-নিস্পৃহ অবস্থা থেকে হঠাৎ ক্ষিপ্র দৌড় পৃথিবী মাতাতে পারেন যেই ছন্দের জাদুকর, লিও মেসি, আপনাকে কুর্নিশ।