একবার না পারিলে দেখো পাঁচবার

২০১৪ সালের ১৩ জুলাই, ব্রাজিল বিশ্বকাপে মারাকানার বিজয় মঞ্চে এসে পরাজিতের মেডেল গ্রহণ করেন মেসি। পুরস্কারটি যখন নিতে যাচ্ছিলেন, পাশেই শোভা পাচ্ছিল আরাধ্য বিশ্বকাপ ট্রফি। ওটা যে ততক্ষণে জার্মানির সম্পদ!

ঠিক এক বছর পর ২০১৫ সালে সান্তিয়াগোর এস্তাদিও ন্যাসিওনেলের বিজয় মঞ্চে সিলভার মেডেল নিতে এলেন মেসি। পাশেই শোভা পাচ্ছিল লাতিনের সেরা কোপা আমেরিকার ট্রফি। সেবার ওটারও দখল গেলো ‘রেড হট’ চিলির হাতে! এত কাছে, তবু কত দূরে। একবারও ট্রফি দুটি ছুঁয়ে দেখার যোগ্য হতে পারলেন না মেসি!

২০১৬ সাল যুক্তরাষ্ট্রের মেটলাইফ স্টেডিয়াম। সেখানে টাইব্রেকারে পেনাল্টি মিস করে পরাজয়ের খলনায়ক মেসি। চিলির বিপক্ষে ফাইনালেই সবাই চেয়েছিল মেসি গোল করুন। তার গোলেই শিরোপা জিতুক আর্জেন্টিনা। কিন্তু হলো উল্টোটা। মেসির বল চলে গেলো আকাশে।

২০১৯ সালের কোপার সেমিতে ব্রাজিলের সঙ্গে হেরে বিদায়। দেশের হয়ে মাঠে নামলেই মেসি যেন গ্রিক মিথোলজির কোনও ট্র্যাজিক হিরো।

সেই ধারা ভাঙলো ২০২১ সালের কোপা জিতে, জিতলেন ফিনালেসিমাও।

টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু। চারদিকে রব রব, বোধহয় কিছু একটা হবে এবার। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দুর্বল সৌদি আরবের সঙ্গে হেরে আবারও সংশয়, শঙ্কার মেঘের ওড়াউড়ি। কিন্তু না, এই হার যে বড্ড অহমে লেগেছে আলবিসেলেস্তেদের। পরের ম্যাচে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠলো আর্জেন্টিনা। দুর্দান্ত খেললেন লিওনেল মেসি। যোগ্য সঙ্গ দিলেন জুলিয়ান আলবারেজ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে আবারও স্বপ্নের ফাইনাল।

৮০ মিনিট পর্যন্ত মেসি ও ডি মারিয়ার গেলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। এবার হয়তো খালি হাতে ফেরা নয়। কিন্তু সেখান থেকেই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ফ্রান্সের নেপথ্যে কিলিয়ান এমবাপ্পে, ২-২ সমতা। অতিরিক্ত সময়ে আবারও মেসি ম্যাজিক। ৩-২ গোলে এগিয়ে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফুটবল ঈশ্বর বুঝি এবারের গল্পটা ভিন্নভাবে লিখেছিলেন। ফের এমবাপ্পের পেনাল্টিতে সমতায় ফ্রান্স। খেলা টাইব্রেকারে। এবার আর ভাগ্যদেবী ফেরালেন না মেসিদের। স্নায়ুযুদ্ধে জিতে চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

গর্বিত গ্রীবা আর উদ্ধত দৌড়ে মেসিদের উদযাপন। বিশ্বকাপ নেই নেই বলে নিন্দুকদের জ্বালাতন সহ্য করতে হবে না আর তাদের। সর্বকালের সেরা লিখতে আর দিতে হবে না যতিচিহ্ন।

ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে বিশ্বকাপে এসেও ফিরেছেন খালি হাতে। একে একে পাঁচ-পাঁচটি বিশ্বকাপ, পঞ্চমবারে এসে দেখা মিললো সফলতার। চাইলে মেসি এখন বলতেই পারেন, ‘একবার না পারিলে দেখো পাঁচবার।’