বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন, সমালোচনা ও বিতর্কে বছর পার

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনবায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ) পদ্ধতিতে মোবাইলফোনের সিম নিবন্ধন নিয়ে সমালোচনা এবং বিতর্ককে ঘিরেই পার হচ্ছে ২০১৬ সাল। তবে সমালোচনা, বিতর্ক যা-ই হোক না কেন বছর শেষে দেখা যাচ্ছে, দেশের মোট মোবাইলফোন ব্যবহারকারীর সিমের মধ্য থেকে ১১ কোটি ৮৪ লাখ সিমের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রতিনিয়তই এ পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিমের সংখ্যা বাড়ছে।

সরকারের দাবি অনুযায়ী, সিম নিবন্ধনের ফলে দেশে মোবাইলকেন্দ্রিক অপরাধ কমেছে, যা হচ্ছে সেগুলো সহজে চিহ্নিত করা এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সহজ হয়েছে।

গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দেশে শুরু হয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন। এর আগে ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় পরীক্ষামূলক নিবন্ধন। তারও আগে ২১ অক্টোবর পরীক্ষামূলক সিম নিবন্ধন পদ্ধতির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। সচিবালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সজীব ওয়াজেদ জয় টেলিটকের একটি সিম কিনে নিজের নামে নিবন্ধন করে এই প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন। ফলে নতুন বছরের শুরু থেকেই নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে মুখর ছিল সারা দেশ। সিম নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিকভাবে সারা দেশে ৮১ হাজার ৫০০ বায়োমেট্রিক ডিভাইস সরবরাহ করে মোবাইলফোন অপারেটরগুলো। পরবর্তীতে তা এক  লাখে উন্নীত করা হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ে সিম নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময় ছিল ৩০ এপ্রিল। বলা হয়েছিল ১ মে থেকে অনিবন্ধিত সব সিম বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তা বাড়িয়ে ৩১ মে রাত ১১টা ৫৯ মিনিট করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, ১ জুন থেকে অনিবন্ধিত সিম বন্ধ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে তা নিবন্ধন করে চালু করা যাবে।  আরও বলা হয়, কেবল প্রবাসীরা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে পরবর্তী সময়ে সিম নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ৩১ মে সিম নিবন্ধন শেষ হয়ে গেলেও এখনও চলছে সিম নিবন্ধন। বন্ধ হয়ে যাওয়া সিম নিয়ে সংশ্লিষ্ট মোবাইলফোন অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার বা খুচরা সিম বিক্রেতাদের কাছ থেকে সিম নিবন্ধন করানো যাচ্ছে।

বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন শুরু হলে চারদিকে গুজবের জন্ম নেয়। শুরু হয় বিতর্ক। সমালোচকরা বলেন, বায়োমেট্রিক ডিভাইসের মাধ্যমে আঙুলের ছাপ নেওয়ার সময় সেই ছাপের তথ্য মোবাইলফোন অপারেটররা সংরক্ষণ করছে। তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে তা বেহাত হয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় অনেক মোবাইলফোন ব্যবহারকারী সিম নিবন্ধন থেকে বিরত থাকেন বলে জানা যায়। ওই সময় সরকারের পক্ষ থেকে ডাক ও টেলিযোগাযাগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধনের কারণে যাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তারাই এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এটা নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে। সিম নিবন্ধনে আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ডাটাবেজে রক্ষিত আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনোভাবেই তা আলাদা কোথাও সংরক্ষণ করা হচ্ছে না। এটা করার কোনও সুযোগও নেই।’ মূলত প্রতিমন্ত্রীর এ ধরনের আশ্বাসের ফলে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে আসে সিম নিবন্ধন কার্যক্রমে। 

অন্যদিকে বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনে ভুল বা জালিয়াতি নিয়েও অভিযোগ উঠেছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একাধিক জালিয়াত চক্রকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে তারানা হালিম বলেছিলেন, ‘বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত মোবাইল সিমে এরর (ভুল বা অশুদ্ধ) ১ শতাংশেরও কম হয়েছে। টেলিযোগাযোগে যেকোনও ধরনের এররের ক্ষেত্রে যেখানে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয় ২-৩ শতাংশ, সেখানে আমাদের বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধনের এরর ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মানের চেয়ে নিচে রয়েছে। যদিও এতে তৃপ্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা চেষ্টা করছি, কিভাবে এররের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা যায়।’

ভবিষ্যত পরিকল্পনা বিষয়ে তারানা হালিম বলেন, ‘সিম নিবন্ধন ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি। এখন পরবর্তী কাজগুলোকে নিয়ে এগোনোর পালা।’ তিনি জানান, তিনি যেকোনও কাজের আগে টার্গেট নির্ধারণ এবং গুরুত্ব নির্বাচন করে এগোন। প্রতিমন্ত্রী বলেন,‘আমার আগামী কাজের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে এমএনপি (মোবাইলফোন নম্বর পোর্টেবিলিটি) সেবা চালু, ডাক বিভাগের উন্নয়ন (ডাকঘরগুলোকে পোস্ট ই-সেন্টারে রূপান্তরসহ আরও অনেক কাজ), টেলিটক মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক উন্নয়ন এবং সেবাকে আরও গ্রাহকবান্ধব করে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিয়ে আসা।’ তিনি মনে করেন, টার্গেট ঠিক করে এগোলে কাজগুলো সঠিকভাবে করা যায়। সময় হয়তো কিছুটা এদিক-সেদিক হয়, কিন্তু কাজগুলো পদ্ধতি মতো শেষ করা যায়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ আগামী বছর অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা তরঙ্গের নিলাম, দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া, চার দেশের ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে প্রকল্পে যুক্ত হওয়া, নতুন গন্তব্যে ব্যান্ডউইথ রফতানি, মোবাইলে অযাচিত প্যাকেজ সংখ্যা কমিয়ে আনা, ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আরও গ্রাহকবান্ধব করার কাজগুলো শেষ করতে চায়। এছাড়া মোবাইলফোনের গ্রাহক সেবা এবং কলড্রপ ও নেটওয়ার্ক সমস্যার উন্নয়নে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।

আরও পড়ুন- 


যে পাঁচ ধাপে চলে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণা

/এইচএএইচ/ এপিএইচ/আপ-এফএস/