পর্নোগ্রাফি বন্ধে লিংক পাঠাতে পারেন আপনিও

৯০দেশের অভিভাবকদের পক্ষ থেকে আপত্তি ওঠায় পর্নোগ্রাফিতে ঠাসা আপত্তিকর ওয়েবসাইটগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে পারেন আপনিও। এ জন্য বিশেষ কিছুই করতে হবে না, নিজে ইন্টারনেটে কাজ করার সময় যদি আপত্তিকর এমন কিছু চোখে পড়ে তাহলে সেই ওয়েবসাইটের লিংকটি সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দিলেই চলবে। এরপর তা যাচাই-বাছাই ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিটির।  

জানা গেছে, পর্নোগ্রাফি সংক্রান্ত কনটেন্ট, ছবি ও ভিডিও থাকার অভিযোগে দেশে এরই মধ্যে বন্ধ করা হয়েছে ৫৬০টি ওয়েবসাইট। একই ধরনের অভিযোগে বন্ধের প্রক্রিয়ায় রয়েছে আরও কিছু দেশি-বিদেশি ওয়েবসাইট। ধারাবাহিক এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এসব আপত্তিকর সাইট বন্ধে সাধারণ মানুষের কাছেও তথ্য ও লিংক আহ্বান করা হয়েছে। বিটিআরসির শর্টকোড নম্বর ২৮৭২ এবং ই- মেইলbtrc@btrc.gov.bd ঠিকানায় পর্নোগ্রাফি সাইটের ঠিকানা বা লিংক পাঠানো যাবে।

কাজটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সচেতন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যদি সার্চ করতে গিয়ে এখনও কোনও পর্নোগ্রাফি সাইট দেখেন তাহলে তার লিংক বা ঠিকানা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির শর্টকোড ও ই-মেইল ঠিকানায় পাঠালে এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ কাজের জন্য গঠিত কমিটি বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে যাচাই করে দেখবে। সত্যতা পেলে অভিযুক্ত সাইটটি বন্ধ দেওয়ার পদক্ষেপ নেবে কমিটি।   
এদিকে, সাইট বন্ধের দায়িত্বে থাকা (আসলে লিংক ব্লক করার দায়িত্বে থাকা) প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আপত্তিকর সাইটগুলো বন্ধের প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে শতভাগ সফল হওয়া সম্ভব হচ্ছে না কিছু সাইট ক্লাউডে হোস্ট করা থাকায়। তবে এরই মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি সাইট বন্ধ করা গেছে। বাকিগুলো বন্ধ করতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সচিব সরওয়ার আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট বন্ধ করার উদ্যোগটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা অবশ্যই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবো। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যদি এ ধরনের কোনও সাইট বা লিংক পান তাহলে কমিশনে পাঠিয়ে দিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কমিশন মনে করে, সবার সম্মিলিত উদ্যোগ এবং অংশগ্রহণের ফলেই এ কাজে চূড়ান্ত সফলতা আসতে পারে।’ 
ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক বলেন, ‘সরকার পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইটের যে তালিকা আমাদের দিয়েছিল তার ৯০ ভাগ বন্ধ করা হয়েছে। বাকি ১০ ভাগ সাইটে কিছু জটিলতা রয়েছে। এগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।’

তিনি আরও বলেন,‘বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারগুলোকে নিয়ে যে মনিটরিং কমিটি করা হয়েছে ওই কমিটি শিগগিরই এই কাজের সফলতার ওপর একটি প্রতিবেদন দেবে।’ 
প্রসঙ্গত, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব বরাবর ‘এক পিতার লেখা চিঠি’র সূত্র ধরে সরকার পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট বন্ধের উদ্যোগ নেয়। গত ২৮ নভেম্বর সচিবালয়ে অনলাইনে আপত্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক বৈঠকে পর্ণ ওয়েবসাইট বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বৈঠকে একটি কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়। 
বর্তমানে দেশে ব্যবহার হচ্ছে ৩৫০ জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ। এর ২০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ব্যবহার হয় পর্নোগ্রাফি দেখায়। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের ধারণা, বন্ধ বা নিষিদ্ধ করে অনলাইনে পর্নোগ্রাফি দেখা থেকে কাউকে বিরত রাখা কঠিন হবে। সচেতনতা বাড়িয়ে, পারিবারিক মূল্যবোধ তৈরি করে, স্কুল কলেজে এ বিষয়ে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে এসব থেকে তাদের ফেরানো যেতে পারে। বরং পর্নোগ্রাফি ছাড়াও যে ইন্টারনেটে আরও মজার এবং শিক্ষণীয় বিষয় আছে সেসব বিষয়ে ছোট থেকেই শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারলে তা ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।

আরও পড়ুন: পাচক থেকে শীর্ষ জঙ্গি নেতা