বিটিসিএলকে ‘টাওয়ার শেয়ারিং’ লাইসেন্স দিতে সংশোধন হচ্ছে গাইডলাইন

মোবাইল টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স পেয়েছে ৪টি প্রতিষ্ঠান। লাইসেন্সের গাইডলাইন অনুযায়ী নতুন করে আর কোনও কোম্পানিকে লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ নেই। দিতে হলে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স গাইডলাইন সংশোধন করতে হবে। এবার সেটাই সংশোধন করে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে।  

এরইমধ্যে বিটিসিএল-এর অনুকূলে ‘পারমিট’ ইস্যু করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। অন্যদিকে গাইডলাইন সংশোধনের জন্য কমিশনের বৈঠকে কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে (২৫০তম) এই সিদ্ধান্ত হয়। বিটিসিএল-এর আবেদন অনুযায়ী টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রাপ্তির আগপর্যন্ত বিটিসিএলকে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক বর্তমান টাওয়ারগুলো ভাড়া দেওয়ার জন্য শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১ (সংশোধিত-২০১০)-এর ধারা ৪০ (২) অনুযায়ী ‘পারমিট’ ইস্যু করার সিদ্ধান্ত হয়।

এর আগে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি বিটিসিএল কমিশনে টাওয়ার লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা এবং লাইসেন্স প্রদান না করা অবধি সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক বিটিসিএল-এর বর্তমান টাওয়ারগুলো ভাড়া দিতে অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়।

 

নতুন টাওয়ার হবে না

‘পারমিট’ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. রফিকুল মতিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা টাওয়ার শেয়ারিংয়ের জন্য পারমিট পেয়েছি। লাইসেন্স এখনও পাইনি। আমাদের বলা হয়েছে, নতুন করে টাওয়ার নির্মাণ করা যাবে না। বিদ্যমান টাওয়ারগুলোর সক্ষমতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার করা যাবে।

তিনি জানান, বিটিসিএল-এর প্রায় ৫৫০টি টাওয়ার আছে সারাদেশে। বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সমিশনের জন্য টাওয়ারগুলো ব্যবহার হয়। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এগুলো ব্যবহার করে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, যারা টাওয়ার ব্যবহার করতে চাইবে তাদের দেওয়া হবে। বিটিসিএল-এর সারাদেশে অনেক রিসোর্স আছে। সেগুলোর যথাযোগ্য ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব আয় করা সম্ভব। আমরা রাজস্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আশা করি এই উদ্যোগে সফল হওয়া যাবে। টেলিটক বিশেষ কোনও সুবিধা পাবে কিনা জানতে চাইলে রফিকুল মতিন বলেন, যেহেতু টেলিটক একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ব মোবাইলফোন অপারেটর, বাড়তি সুবিধা তো পাবেই।

 

টাওয়ার শেয়ারিং ব্যবসায় বিটিসিএল

২০১৮ সালের ৬ আগস্ট বিটিসিএলসহ ৮টি প্রতিষ্ঠানের টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স ইস্যুর জন্য কমিশনের সুপারিশসহ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠায় বিটিআরসি। টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইনে ‘ইনকামবেন্ট অপারেটর’-এর বিষয়টি উল্লেখ না থাকায় বিটিসিএলকে অন্যান্য আবেদনকারীর মতো মূল্যায়ন করা হয়।

ওই বছরেরই ১৪ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিটিসিএল বাদে ৪টি কোম্পানিকে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদানের অনুমোদন দেয়। আবার একই বছরের ১০ জুন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিটিসিএলকে ‘ইনকামবেন্ট অপারেটর’ হিসেবে চাহিত ফি ব্যতিরেকে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়ে কমিশনে চিঠি দেয়।

পরে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর ও ২০২০ সালের ১ মার্চ বিটিআরসির কাছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ বিটিসিএলকে ইনকামবেন্ট অপারেটর হিসেবে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদানের বিষয়টি চিঠি দিয়ে পুনঃবিবেচনা করা এবং এ বিষয়ে বিটিআরসির কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইনে সর্বোচ্চ ৪টি টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স প্রদানের বাধ্যবাধকতা থাকায় পঞ্চম কোম্পানি হিসেবে বিটিসিএলকে লাইসেন্স দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবে সরকার বিটিসিএলকে টাওয়ার শেয়ারিং লাইসেন্স দিতে চাইলে সেক্ষেত্রে গাইডলাইন সংযোধনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে কমিশন উল্লেখ করে।

 

সংশোধন হচ্ছে গাইডলাইন

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০০১ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৪০ (২) অনুযায়ী বিধান রয়েছে, ‘ধারা ৪০ (২): উপ-ধারা (১)-এ উল্লিখিত অনুমতি লাভের উদ্দেশ্যে পরিচালনাকারী, কমিশনের কাছে কোনও আবেদন করলে, কমিশন সরকারের পূর্বানুমতিক্রমে প্রয়োজনীয় অনুসন্ধানপূর্বক একটি প্রতিবদেন সরকারের কাছে পেশ করবে এবং সরকার উক্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যদি সন্তুষ্ট হয় যে, আবেদনকৃত অনুমতি প্রদত্ত হলে লাইসেন্সকৃত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পরিচালনা বা সেবা প্রদানের ওপর বিরূপ কোনও প্রভাব পড়বে না, তা হলে, উক্ত আবেদন মঞ্জুর করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে এবং কমিশন তদানুসারে নির্ধারিত মেয়াদের জন্য তদকর্তৃক নির্ধারিত শর্তে পারমিট ইস্যু করবে।’

আর টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইনের ক্লজ নম্বর ৫.৪ ও ৭-এ উল্লেখ আছে, গাইডলাইনের শর্তঅনুসারে যেহেতু বিটিসিএল-এর ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস একসেস (বিডাব্লিউএ) অপারেটরস লাইসেন্স রয়েছে, সেহেতু বিটিসিএলকে টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইন লাইসেন্স প্রদানের সুযোগ নেই। কিন্তু শেষপর্যন্ত গাইডলাইন সংশোধন করে এ লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। এর আগে সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে পারমিট দেওয়া হয়েছিল।

কমিশন বৈঠকে টাওয়ার শেয়ারিং গাইডলাইনের ক্লজ নম্বর ৫.৪ ও ৭-সহ প্রয়োজনীয় ক্লজ সংশোধনের জন্য একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয় এবং পারমিট ইস্যুর জন্য সরকারের পূর্বানুমোদন গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।