বেসিসের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা

প্রযুক্তিভিত্তিক উদ্যোগ ইনশিওরটেকের আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে

দেশের সামগ্রিক বিমা খাতের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আনতে ইনশিওরটেকের (ইনস্যুরেন্স+টেকনোলজি) সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকাকে জোরদার করার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বুধবার (১৫ জুন) রাজধানীর কাওরান বাজারে বেসিস অডিটোরিয়ামে ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইনশিওরটেক প্রযুক্তির সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সংগঠন বেসিস (বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস)। বৈঠকে বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিমা কোম্পানি, ইনশিওরটেক প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য খাত সংশ্লিষ্টরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন বেসিস ফিনটেক স্ট্যান্ডিং কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও সূর্যমুখী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফিদা হক।

বেসিস ফিনটেক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ফাহিম মাশরুর বলেন, ইনশিওরটেক শিল্পের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে এবং গ্রাহকদের ভালোভাবে সেবা দিতে বিমা পলিসিগুলোকে সঠিকভাবে সমন্বয় ও নতুনভাবে ডিজাইন করার জন্য আমাদের আজকের বৈঠক কয়েকটি যুগান্তকারী ধারণা এবং পরামর্শ প্রস্তাব করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (বিএফআইইউ) মাসুদ রানা বলেন, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ যে নীতিমালা তৈরি করেছে সেই নীতিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা উচিত যাতে বিমা এবং প্রযুক্তি কোম্পানি চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের প্রযুক্তিগুলোর সমন্বয়ে নতুন ইনস্যুরেন্স পণ্যের বিকাশ ও পরিবর্ধন করতে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারে।

বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসিসের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সামিরা জুবেরী হিমিকা।

আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক এহসানুল কবির, পিআইসিএল’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুর রহমান, জিডিআইসিএল’র এসইভিপি মো. মনিরুজ্জামান খান, ইন্সটাশিওরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেল কবির, বিমাফাই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলভি নিজাম প্রমুখ। ইনশিওরটেক ইন্সটাশিওরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাফেল কবির জানান, তিনি প্রযুক্তি পণ্যের বিমা (মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ) ও ট্রাভেল ইনস্যুরেন্স নিয়ে কাজ করছেন। তিনি মনে করেন, ইনশিওরটেক  নিয়ে দেশের বিমা পলিসিতে কিছু জটিলতা, সমস্যা রয়েছে। আগে সেসব দূর করতে হবে। যারা বিমা করবেন তথা গ্রাহকরা যেন অন্যান্য বিমার ক্ষেত্রে মনে না করেন যে বিমা করলে টাকা পাওয়া যায় না। এই মানসিকতা থেকে সবাইকে বের করে আনতে হবে। গ্রাহকদের মধ্যে এটা নিয়ে আস্থা তৈরি করতে হবে যে বিমা করলে টাকা পাওয়া যায়। স্বচ্ছতাও থাকতে হবে। তাহলেই গ্রাহকরা এই সেবা কিনতে আগ্রহী হবে।

 

উপমহাদেশসহ অন্যান্য দেশে বিমা খাতের বাজার এবং বিমাসেবার বৈচিত্র্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করেন বক্তারা। বিশেষজ্ঞরা ইনশিওরটেক খাতে বর্তমানে বিরাজমান হতাশাজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছেন।

সুপারিশগুলো হলো- ১. ইনশিউরটেক কোম্পানিগুলোকে ডিজিটাল ইন্স্যুরেন্স এজেন্ট হিসেবে কাজ করার অনুমতি দিয়ে বা তাদের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে বিমা আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত একটি এনওসি প্রদান করা। ২. বর্তমান বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যমান বিধান এবং আদেশের উল্লেখযোগ্য সংশোধন করা প্রয়োজন। বেসিস দেশের সব সফটওয়্যার এবং আইটিইএস সংস্থাগুলোর শীর্ষস্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন হিসেবে পরিস্থিতি সমাধানে সহায়তা করার জন্য নিয়ন্ত্রক, বাণিজ্য সংগঠন এবং শিল্প বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ৩. প্যানেলটি নিয়ন্ত্রকদের, নিয়মিত এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে ইনশিওরটেক শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ১২- ১২টা ইনশিওরটেক কোম্পানি কাজ করছে।