একজন আলোকচিত্রীর অন্যরকম প্রতিবাদ

আলোকচিত্রী বি করিম আলো ঝলমলে বিয়ের স্টেজে সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে যে থাকে, সে হচ্ছে নতুন বর-কনে। তারা কীভাবে সাজলো, কীভাবে ছবি তুললো-সবকিছুই দেখা চাই মনোযোগ দিয়ে। সেই স্টেজে কনে যদি প্ল্যাকার্ড হাতে বলেন, ‘স্মার্ট ছেলেরা হেলমেট বাদে বাইক চালায় না,’ তবে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুটি খানিকটা বাড়তি মনোযোগ পাবেই। এমনই ব্যতিক্রমী কায়দায় জনসচেতনতা তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছেন কুষ্টিয়ার আলোকচিত্রী বি করিম।

ছবি তোলা পেশা তার। কখনও বিয়ের ছবি, কখনওবা কারোর শখের ছবি তোলেন। বি করিমের ছবিতে প্রায়ই লাল টুকটুকে বউকে দেখা যায় বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে। হেলমেট পরার জন্য যেমন তিনি সচেতন করেন সবাইকে, তেমনি রক্তদানে উৎসাহী করতেও চালান প্রচারণা। রাজাকারদের জন্য ঘৃণা, যুদ্ধের জন্য ধিক্কার জানান নতুন বর-কনের সহায়তায়। ধর্ষণ বন্ধে কণ্ঠ তোলেন। এই প্রতিবাদের শুরুর কথা জানতে চাইলে করিম জানান, ছোটবেলার দুজন বন্ধুর কথা। যারা হেলমেট না থাকার কারণে ছোট শিশু রেখে দুর্ভাগ্যজনকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সেটা ২০১৩ সালের কথা। তখনই তিনি শুরু করেন ব্যতিক্রমী এই সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

52460290_10217984919004321_2933629565597122560_n
কখনও হেলমেট নিয়ে, কখনও রক্তদান আবার কখনও অন্য কোনও ইস্যুতে মানুষকে সচেতন করার এই প্রয়াস তিনি চালিয়ে গেছেন। মানুষের আবেগকে নাড়া দিয়ে তাদের সচেতন করতে প্ল্যাকার্ডে ব্যবহার করেন বিভিন্ন উক্তি।

18423863_10212777559463587_5587797985640525327_n
বি করিম জানালেন, এখন পর্যন্ত অনেকেই হেলমেট পরেছেন তার সচেতনতামূলক পোস্ট দেখে। অনেকে আবার জোর করে তার স্বামীকে বা বন্ধুকে পরিয়েছেন হেলমেট। তাদের দেওয়া ধন্যবাদই এই প্রয়াসের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

40096966_10216664049503409_801746565961089024_n
এই উদ্যোগের প্রশংসা যেমন পেয়েছেন, তেমনি মুখোমুখি হতে হয়েছে বিভিন্ন তিক্ত ঘটনারও। বললেন, ‘একবার একটা গ্রুপ প্রচার করতে শুরু করলো যে আমি রোগীর কাছ থেকে টাকা নিই! রক্ত চুরি করি! অনেক লেখালেখি চললো ফেসবুক জুড়ে। কেউ আমার পক্ষে কেউ বিপক্ষে। অনেক কাছের মানুষ পর্যন্ত ভুল বুঝলো। কিন্তু আমি থেমে যাইনি। নিজ জায়গা থেকে চালিয়ে গেছি মানুষকে সচেতন করার কাজ। প্রতিবাদ করেছি অন্যায়ের।’

49948575_10217679165640678_9192994690947874816_n
বি করিম মনে করেন এখনকার সময়টাই শো অফের। তবে শো অফটা অবশ্যই পজেটিভ কিছুর হওয়া উচিত। কারণ এখন মানুষ অনুসরণ করতে পছন্দ করে। যদি একটা শো অফের কারণে একজন রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হয়, তবে খারাপ কী? আমরা হয়তো নিজে রাস্তায় ময়লা ফেলি না। তবে ব্যাপারটি নিয়ে যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শো অফ করি এবং সেটা দেখে আরেকজনও সচেতন হয়, তবে এই শো অফের অবশ্যই দরকার আছে।  

28467651_10215315414508377_2192435146716268083_n
‘অনলাইনে আমরা সামাজিক সমস্যার সমাধান নিয়ে কথা বলি না। শুধু সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করে পরিস্থিতি আরও কঠিন করি। এটা না করে যদি আমরা নিজেদের পজেটিভ অভ্যাসগুলো বেশি বেশি প্রচার করি, তাহলে আমার যে সার্কেলটা থাকবে তারা আমাকে ফলো করতে বাধ্য হবেই। যে ছেলে চিপসের প্যাকেট ফেলতো রাস্তায়, সেও সেটা পকেটে রেখে দেবে। আমরা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হই, প্তিবাদরি- একদিন মানুষ নিশ্চয় সচেতন হবে’- বলেন এই তরুণ আলোকচিত্রী।