X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

শহরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি

গোলাম মওলা
২১ এপ্রিল ২০১৭, ০৯:০৪আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০১৭, ০৯:১৮

গ্রামীণ অর্থনীতি (ছবি: সংগৃহীত)

শহরের চেয়ে এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে,  গত এক বছরে গ্রামীণ এলাকায় শহরের তুলনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একই সময়ে আনুপাতিক হারে শহরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আগের চেয়ে প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাস ভিত্তিক তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, এক বছর আগে ঋণের ১০০ টাকার মধ্যে শহরের ব্যবসায়ীরা নিতেন গড়ে ৯০ টাকা ১৫ পয়সা। আর বাকি ৯ টাকা ৮৫ পয়সা পেতেন গ্রামের মানুষ। এখন ১০০ টাকার মধ্যে গ্রামের মানুষ পাচ্ছেন গড়ে ১০ টাকা ১৭ পয়সা। আর শহরের ব্যবসায়ীরা নিচ্ছেন ৮৯ টাকা ৮৩ পয়সা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬০ ভাগের বেশি গ্রামে বাস করে। তিনি উল্লেখ করেন, গ্রামের উন্নতি মানেই সমগ্র দেশের উন্নতি। এ কারণে গ্রামের মানুষের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ব্যাংকের শাখা স্থাপন, এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংসেবা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকগুলোকে শহরের সমান অনুপাতে গ্রামে শাখা খোলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকের সেবা দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয়েছে।

গ্রামীণ অর্থনীতি (ছবি: সংগৃহীত)

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে গ্রাম এলাকায় ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তিন মাস পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের মার্চ শেষে ঋণ বিতরণ আনুপাতিক হার বেড়ে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৬ সালের জুনে আরও বেড়ে ১০ দশমিক শূন্য এক শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায়। একইভাবে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে গ্রাম এলাকায় ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে মোট ঋণের ১০ দশমিক ১৭ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে শহর এলাকায় ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে মোট ঋণের ৯০ দশমিক ১৫ শতাংশ। তিন মাস পর অর্থাৎ ২০১৬ সালের মার্চ শেষে ঋণ বিতরণ আনুপাতিক হার কমে দাঁড়ায় ৯০ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে। ২০১৬ সালের জুনে আরও কমে দাঁড়ায় ৮৯ দশমিক ৯৯ শতাংশে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে শহর এলাকায় ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে মোট ঋণের ৮৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, গ্রামাঞ্চলে আগের চেয়ে এখন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ হচ্ছে। কৃষিখাতের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে অকৃষি খাতে পল্লি এলাকার মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ছে। এর ফলে  জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান সুসংহত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, পল্লি এলাকায় কৃষিখাতের বাইরে ছোট-বড় প্রায় ৫৬ লাখ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা দেশের মোট প্রতিষ্ঠানের সাড়ে ৭১ শতাংশ। এই হিসাবে এক দশকের ব্যবধানে গ্রামীণ এলাকায় ৩২ লাখ ৬৭ হাজার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে। অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

এদিকে রাজশাহীর কৃষিবহির্ভূত অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ শীর্ষক এক সেমিনারে উল্লেখ করা হয়, রাজশাহীতে গত ১০ বছরে গ্রামীণ এলাকায় শহরের তুলনায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় ১০ শতাংশ বেড়েছে। সেমিনারটি গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর রাজশাহী জেলা সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত হয়।

সেমিনারে উল্লেখ করা হয়, ২০০৩ সালের শুমারি অনুযায়ী, শহরে ৫১ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলত, তখন গ্রামে চলত ৪৮ দশমিক ৩১ ভাগ প্রতিষ্ঠানে। ২০১৩ সালে গ্রামে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে ৫৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ। শহরে এ সূচক কমে হয় ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ।  দেশের তৃতীয় ওই অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ থেকে ৩১ মের মধ্যে পরিচালিত হয়। সব অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসম্পন্ন খানা এবং সব ধরনের স্থায়ী-অস্থায়ী প্রতিষ্ঠানকে এই শুমারির অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রামমুখী হচ্ছে ব্যাংকের সেবা। সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোও গ্রামে শাখা খুলতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে। এক বছরে তফসিলি ব্যাংকগুলো ২৫৭টি শাখা খুলেছে। এর মধ্যে গ্রামে খোলা হয়েছে ১৩২টি। এ সময়ে বেসরকারি ব্যাংকের গ্রামীণ শাখা বেড়েছে ১১৬টি। এর বাইরে এজেন্ট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও গ্রামের দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৫৭টি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের মোট শাখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬৫৪টি; যা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ছিল ৯ হাজার ৩৯৭টি।

/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব: আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব: আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
গিলের ডাবল সেঞ্চুরির পর ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ধসিয়ে ভারতের দাপট
গিলের ডাবল সেঞ্চুরির পর ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার ধসিয়ে ভারতের দাপট
ভারতীয় পর্যটন প্রচারের আকর্ষণ এখন ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
ভারতীয় পর্যটন প্রচারের আকর্ষণ এখন ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল