X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি ৫ ব্যাংকে

গোলাম মওলা
৩১ জুলাই ২০১৭, ২৩:৫৮আপডেট : ০১ আগস্ট ২০১৭, ০০:১১

ঋণখেলাপি দেশের ব্যাংকিং খাতে পাঁচ ব্যাংকের দাপট বেড়েছে। পুরো ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের অর্ধেকেরও বেশি এই পাঁচটি ব্যাংকেরই। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৬-এর তথ্য অনুযায়ী, এই পরিমাণ ৫১ দশমিক ৮ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বাকি ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ আছে বাকি ৫২টি ব্যাংকে। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিপোর্টে খেলাপি ঋণের পাহাড় গড়া ব্যাংক পাঁচটির নাম উল্লেখ করা না হলেও এই তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রিপোর্টে ব্যাংকের নাম না থাকলেও দেখা যাবে ওই পাঁচ ব্যাংক হলো রাষ্ট্রায়ত্ত পুরনো ও বড় ব্যাংক। এ কারণেই খেলাপির পরিমাণ এই ব্যাংকগুলোতেই বেশি। এছাড়া, সরকারি ব্যাংক হওয়ায় কিছুটা শিথিলতাও তো আছে। রাজনৈতিক চাপ, প্রভাবশালীদের কারণেও খেলাপির পরিমাণ বাড়ে।’
সোমবার (৩১ জুলাই) ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, চরম ঋণ ঝুঁকিতে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকসহ ১০টি ব্যাংক। বাকি পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে তিনটি বেসরকারি ব্যাংক, বিশেষায়িত খাতের এক ব্যাংক ও বিদেশি একটি ব্যাংক। এই ১০টি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে ব্যাংকিং খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৬৫ দশমিক ৯ শতাংশ। বাকি ৪৭ ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ এখন ব্যাংকিং খাতের একটি প্রকট সমস্যা। এ কারণে রাজনৈতিক বিবেচনায় আর কোনও ঋণ দেওয়া যাবে না, আদায়ের ক্ষেত্রে কোনও শিথিলতা দেখানো যাবে না।’ খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও অ্যাটার্নি জেনারেলের কার্যালয়কে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এখানে উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে বিশেষ সুবিধায় বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করা হয়েছে। তারপরও এই খাতে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, খেলাপি থেকে বাঁচতে টাকা ফেরত না দিয়ে বরং ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করেছে কয়েকটি ব্যাংক। ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১০টি ব্যাংক ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন করেছে। আর পাঁচটি ব্যাংক করেছে ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন। আবার মোট ঋণের দুই-তৃতীয়াংশ বিতরণ করেছে মাত্র ১০টি ব্যাংক মিলে।
ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সার্বিক ব্যাংকিং খাতে সম্পদের ৩২ দশমিক ২০ শতাংশ পাঁচটি ব্যাংকে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। আর ১০টি ব্যাংকের অনুকূলে এই সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ার পরিমাণ ৪৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এই ১০টি ব্যাংকের মধ্যে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও ছয়টি বেসরকারি ব্যাংক।
রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, বিশেষ সুবিধায় বিপুল পরিমাণের খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার পরও ব্যাংকিং খাতে অনাদায়যোগ্য (কু-ঋণ) খেলাপি ঋণের পরিমাণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ খাতে মোট খেলাপি ঋণের ৮৪ দশমিক ৪ শতাংশই মন্দমানের বা কু-ঋণ।
রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচনের সময় ফজলে কবির বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে বড় অঙ্কের ঋণগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।’ খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য বড় ঋণ কমাতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এবং খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হলে বড় ঋণ দেওয়ার হার কমিয়ে আনতে হবে। এজন্য বড় আকারের ঋণ না দিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণ করতে হবে।’
বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা ও সক্ষমতার চিত্র তুলে ধরা ওই রিপোর্টে দেখা গেছে, ২০১৫ সালে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ছিল ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৯ দশমিক ২ শতাংশ। এসময়ে মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ মাসের শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের পরিমাণ প্রায় সাত লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। এর সঙ্গে অবলোপন করা খেলাপি ঋণের প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা।

আরও পড়ুন-

বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো মালিকদের ওপর ক্ষুব্ধ অর্থমন্ত্রী

১০০ টাকা প্রাইজবন্ডের প্রথম পুরস্কারের নম্বর ০৫৪৭৩৬৬

গুটিকয়েক মানুষকে ঋণ দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার নির্দেশ গভর্নরের

/টিআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে বাস দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ২০
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
মুক্তির পর থেকেই মামুনুল হককে ঘিরে অনুসারীদের ভিড়
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ