X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ছিল হার্ডওয়্যার স্যানিটারি হয়ে গেল টিভি-ফ্রিজ!

গোলাম মওলা
১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৬আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ১২:২৪

মেঘনা ব্যাংক ও সেন্ট্রায় ইন্সুরেন্স ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ২০১৬ সালে হার্ডওয়্যার স্যানিটারি ব্যবসায়ী নূর উদ্দিন মেঘনা ব্যাংক থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণের বিপরীতে তখন হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারির ওপর বীমা করা হয়। সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স এই ঋণের বীমা করে। কিন্তু পরবর্তীতে বীমার দাবি উত্থাপন করা হলে কোম্পানি থেকে জানানো হয়— ওই ঋণের বিপরীতে বীমা হয়েছে টিভি ও ফ্রিজের ওপর। এই ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দুটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ সাত জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, বীমার টাকা আত্মসাৎ করতেই ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির কর্মকর্তারা যোগসাজশে পলিসির কভার নোট পরিবর্তন করেছে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের জুন মাসে মেঘনা ব্যাংকের ছয়ানি শাখা (নোয়াখালী) থেকে ৭৫ লাখ টাকা ঋণ নেন রাজগঞ্জ বাজারের হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারি ব্যবসায়ী মেসার্স নূর হার্ডওয়্যার অ্যান্ড স্যানিটারির মালিক নূর উদ্দিন। হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারি মালামালের স্টকের জন্য এই ঋণ মঞ্জুর করেন ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা। শর্তানুসারে নিজ দায়িত্বে এ ঋণের টাকার ঝুঁকি গ্রহণের জন্য সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টাকার অগ্নিবীমা পলিসি করে ঋণ দেয় ব্যাংকটির ছয়ানি শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মাইনুর আলম চৌধুরী।

এদিকে গত মঙ্গলবার ব্যবসায়ী নূর উদ্দিন নোয়াখালী ৩ নম্বর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দণ্ডবিধি ৪০৬, ৪৬৮.৪৭১ ৪২০ ও ১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ৬৮১)। বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক মাসফিকুল হক।

মামলায় আসামি করা হয়েছে— সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু তাহের চৌধুরী, প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা) মো. জাহিদ আনোয়ার খান ব্রাঞ্চ কন্ট্রোল বিভাগের ফিরোজা আখতার, মেঘনা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এইচএন আশিকুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আদিল ইসলাম, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল আমিন এবং ব্যাংকটির ছয়ানি শাখার তৎকালীন ম্যানেজার মো. মাইনুর আলম চৌধুরীকে।

এ বিষয়ে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহিদ আনোয়ার খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যাংকের কারণে এই ভুল হয়েছে। ব্যাংকের কর্মকর্তা হার্ডওয়্যার স্যানিটারির পরিবর্তে টিভি ফ্রিজের বিষয়টি তুলে ধরেছেন।’

বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আবুল কাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বীমা গ্রাহক নূর উদ্দিন ব্যাংক থেকে ঋণ নেন হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারি মালামালের ওপর। বীমাও করা হয় এসব মালের ওপরই। কিন্তু বীমার দাবি উত্থাপন করা হলে বীমা কোম্পানি থেকে জানানো হয়— বীমা করা হয়েছে টিভি ও ফ্রিজের ওপর।’ তিনি উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জালিয়াতির মাধ্যমে এ কভার নোটটি পরিবর্তন করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ‘আইন অনুসারে বীমা করার দায়িত্ব ব্যাংকের। পলিসি করা হয় যাতে ব্যাংকের ঋণটি ঝুঁকিমুক্ত থাকে।  অর্থাৎ ঋণকৃত মালামালের কোনও ক্ষতি হলে বীমা কোম্পানি থেকে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা। তাই যেসব মালামালের ওপর ঋণ মঞ্জুর করা হয়, সেসব মালামালের ওপরই বীমা করা হয়। অন্যকোনও মালামালের ওপর বীমা করার কোনও সুযোগ নেই।

জানা গেছে, ঋণটির পলিসির ঝুঁকি গ্রহণপত্র বা কাভার নোট নম্বর ০০৮০-০৬-২০১৬। এই কাভার নোটের ফটোকপি ঋণ গ্রহীতা নূর উদ্দীনকে দেওয়া হয়, এতে হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারি মালামালের ঝুঁকি গ্রহণের কথা বলা রয়েছে।

২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাতে আগুন লেগে ঋণ গ্রহীতা মো. নূর উদ্দীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বাজারের অন্যান্য দোকানপাট পুড়ে যায়। এরপর সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখার ম্যানেজার মাইনুর আলম চৌধুরীর মাধ্যমে বীমাকারী সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের কাছে বীমার দাবি উত্থাপন করেন নূর উদ্দিন। ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণে নিয়োজিত সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের জরিপকারী সরেজমিনে গিয়ে নূর উদ্দীনের অগ্নিবীমা পলিসির অন্য একটি কাভার নোট উপস্থাপন করে। এ কাভার নোট নম্বর ০০৯৯-০৯-২০০৬। এই কাভার নোটে মালামালের বিবরণ দেওয়া হয় ফ্রিজ, টিভি এবং এসি। শুধু তাই নয়,বীমার দাবিও নাকচ করে দেয় সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্স। যদিও ফ্রিজ, টিভি এবং এসি নূর উদ্দিনের দোকানে ছিলই না। 

এ প্রসঙ্গে নূর উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারির ব্যবসা করি। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ২০১৬ সালের জুনে মেঘনা ব্যাংক থেকে হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারি মালামালের স্টকের জন্য ঋণ নিয়েছি। তখন আমার দোকানের হার্ডওয়্যার ও স্যানিটারি মালামাল বীমা করা ছিল। ব্যাংক ম্যানেজার নিজ দায়িত্বে বীমা করেছেন। আমাকে কাভার নোটের ফটোকপিও দিয়েছেন। ওই বছরের ডিসেম্বরে দোকানে আগুন লেগে সব মালামাল পুড়ে ছাই যায়। এর পর আমি বীমার দাবির উথাপন করলে তারা টিভি,এসি ফ্রিজের কথা বলে আমার দাবিটি নাকচ করে দিয়েছে।’ তিনি মনে করেন, ব্যাংক আর বীমা কোম্পানির কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে প্রতারণা করে জালিয়াতির কাভার নোট বদলিয়েছে।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
তৃণমূলের আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
তৃণমূলের আরও ৬১ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি
জমি নিয়ে বিরোধ, বৈদ্যুতিক শকে চাচাতো ভাইকে ‘হত্যা’
জমি নিয়ে বিরোধ, বৈদ্যুতিক শকে চাচাতো ভাইকে ‘হত্যা’
আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং
আগামী সপ্তাহে ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন শি জিনপিং
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
চট্টগ্রামে যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ