X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিমওয়ালা ইলিশে বাজার সয়লাব

শফিকুল ইসলাম
২২ আগস্ট ২০১৯, ২০:৫২আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০৫




 নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর সাগর ও নদীতে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারগুলো এখন ইলিশে সয়লাব। কিন্তু বাজারে আসা বেশির ভাগ ইলিশের পেট ডিমে ভরা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এই ইলিশ যদি এখন ধরা না পড়তো, তাহলে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বেশির ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়তো। এ অবস্থায় বিক্রেতাসহ অনেকেরই প্রশ্ন— ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় কখন?

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার আগে ও পরে ১৫ দিন ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ সময় নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। দেখা গেছে, নির্ধারিত এ সময়ের পরেও ইলিশ অধ্যুষিত নদীগুলোতে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ে। সময়ের এই তারতম্যের কারণে সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়কে আরও সাত দিন বাড়িয়ে মোট ২২ দিন ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ করেছে। এই ২২ দিন ইলিশ অধ্যুষিত নদীগুলোয় ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু সেই সময়তো সামনে। এর আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে ডিমওয়ালা ইলিশ জালে ধরা পড়ায় ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রকৃত সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

তাদের প্রশ্ন, সরকার ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই সময়টি ঠিক আছে কিনা?

এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আশ্বিনের দ্বিতীয় পক্ষ ও কার্তিকের প্রথম পক্ষ এই ২২ দিন দেশের সব নদ-নদীতে ইলিশ মাছ ধরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মৎস্য মন্ত্রণালয়। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমা ইলিশের ডিম ছাড়ার সময়। পরিণত ইলিশ এই সময় ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে মিঠাপানির নদীতে আসে। ডিম ছাড়ার সময়টিকে নির্বিঘ্ন করতেই সরকার ওই সময় সব ধরনের মাছ শিকারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তারিখের হেরফের হয় বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয় সূত্র। আগে এই সময় সাত দিন থাকলেও পরে তা ১৪ দিন এবং বর্তমানে তা ২২ দিন করা হয়েছে।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সরোয়ার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সাগর থেকে নদীতে ইলিশ আসেই ডিম ছাড়ার জন্য। তবে এক্ষেত্রে সময়ের তারতম্য ঘটতেই পারে। সরকারের নির্ধারিত সময় অনেক সময় ঠিক থাকে না। আগে ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দেওয়ার সময় ১৫ দিন থাকলেও এখন ২২ দিন করা হয়েছে। এরপরেও দেখা যায় নদীতে জেলের জালে প্রচুর ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ছে। তিনি জানান, আসলে ইলিশ কখন ডিম ছাড়বে তা অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে।

তিনি জানান, ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে- ইলিশ ডিম ছাড়তে সাগর থেকে নদীতে চলে আসবে। তবে নদীতে আগমনে বাধা সৃষ্টি হলে বিশেষ করে নদীতে প্রয়োজনীয় স্রোত ও গভীরতা না পেলে ইলিশ ফিরে যায়। নদীতে আসার পথে যদি ডুবোচরে বাধাপ্রাপ্ত হয় তাহলেও ইলিশ পুনরায় সাগরে ফিরে যায়। এক্ষেত্রে ডিম ছাড়ার স্থান ও সময়ের তারতম্য ঘটতে পারে। তখন বাধ্য হয়ে ইলিশ সাগরে ফিরে গিয়ে ডিম ছেড়ে দেয়। সেক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত সময় এবং নির্দিষ্ট করা নদীতে যেখানে ইলিশের জন্য অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে সেখানে ইলিশ আসেও না, ডিমও ছাড়ে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনার পাথরঘাটার ইলিশের জেলে আকমল হোসেন জানিয়েছেন, আসলে ইলিশের ডিম ছাড়ার জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে বলে তো মনে হয় না। কারণ সারা বছরতো নদীতে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা পড়ে। এছাড়া চাইলে সারা বছরই বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ কিনতে পাওয়া যায়। তবে সরকার আশ্বিনের ভরা পূর্ণিমার সময় যে দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছে সেই সময়ে বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে। তাই ওই সময় নদীতে জাল ফেলা বন্ধ থাকে।

সরকার দেশে ইলিশের জন্য আগে মোট পাঁচটি অভয়াশ্রম নির্ধারণ করে দিলেও বরিশালের আশপাশের ৮২ কিলোমিটার নদীপথকে নিয়ে নতুন অভায়শ্রম ঘোষণা করেছে। এই ছয়টি অভয়াশ্রম হচ্ছে- পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, চর ইলিশার মদনপুর থেকে ভোলার চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, ভোলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনার ১০০ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার এবং বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এবং হিজলার মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাংগুলি ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিক অভয়াশ্রমটির অন্তর্ভুক্ত।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ইলিশ জাতীয় সম্পদ। সরকার ইলিশ রক্ষায় ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেই বাজারে এখন ইলিশের ছাড়াছড়ি। যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলেই ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।

তিনি জানান, এক কেজি ওজনের ইলিশ এক সময় ছিল স্বপ্ন। কিন্তু এখন বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ কোনও ব্যাপারই না। ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, জাটকা বড় হওয়ার সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে ইলিশ সঠিক সময় ডিম ছাড়তে পারছে, আমরা সেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছি। একই সঙ্গে জাটকা সংরক্ষণের বিষয়টিও নিশ্চিত করেছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, নির্ধারিত সময়ের পরেও জেলেদের জালে ডিমওয়ালা কিছু ইলিশ ধরা পড়ার বিষয়টি খুবই স্বভাবিক। এ ক্ষেত্রে শতভাগ সফল বা ব্যর্থ হওয়ার বিষয় নয়। বিশাল সাগর শতশত কিলোমিটার দীর্ঘ নদীতে নির্ধারিত সময়ের পরে কোনও ডিমওয়ালা ইলিশ থাকবে না এমনটি কল্পনা করাটাই তো বোকামি। তবে আমরা চাই বেশিরভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পাক। এতে আমাদের দেশে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ