X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

নভেম্বরে উৎপাদনে আসছে জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন কারখানা

শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে
১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:২৬আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:২৮

চট্টগ্রামে জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানা ভবন

দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত কোম্পানি জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের নতুন কারখানা আগামী নভেম্বর মাস থেকে উৎপাদনে যাচ্ছে। ইস্পাত শিল্পে বিশ্বের সর্বাধুনিক ও সর্বশেষ প্রযুক্তিতে নির্মিত এই কারখানার মেশিনারিজ সংস্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে। এখন উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি চলছে।

সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানার সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও জিপিএইচ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় জিপিএইচ ইস্পাতের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলমাস শিমুল উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় জানানো হয়, জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন কারখানাটি উৎপাদনে এলে এটি দেশের ইস্পাত শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কারণ, এ কারখানায় আধুনিকতম প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা দাবি করেন, বিশ্বে দ্বিতীয় প্রকল্প হিসেবে জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানায় দুটি বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।

জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানায় ব্যবহারের জন্য রাখা স্ক্র্যাপ

জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন কারখানাটি চালু হলে কোম্পানির রড উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হবে বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ টন। বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতা ১ লাখ ৬৪ হাজার টন। নতুন কারখানায় ৫০০ ডব্লিউ টিএমটি বার ও বিভিন্ন গ্রেডের রডের পাশাপাশি সেকশান, অ্যাঙ্গেল, চ্যানেল, এইচ বিম, আই বিমসহ নানা ধরনের পণ্য উৎপাদিত হবে। উৎপাদিত হবে প্রি-ফেব্রিকেটেড বিল্ডিং নির্মাণের নানা উপকরণ। নতুন প্ল্যান্টে এমএস বিলেট উৎপাদন হবে বছরে ৮ লাখ ৪০ হাজার টন। আর রি-বার সেকশানের উৎপাদন হবে ৬ লাখ ৪০ হাজার টন।

জানা গেছে, জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন কারখানায় ব্যবহৃত নতুন প্রযুক্তিটি হচ্ছে কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস। এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে ফার্নেস বা লোহা গলানোর চুল্লি থেকে নির্গত তাপকে ধারণ করে তা অন্য ইউনিটে ব্যবহার করা হয়। এ কারণে কোয়ান্টাম আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে নির্মিত ইস্পাত কারখানায় জ্বালানির সাশ্রয় হয়। জীবাশ্ম  জ্বালানি মাত্রই পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তাই জ্বালানির সাশ্রয় মানেই পরিবেশ সংরক্ষণে সহায়তা।

কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিশুদ্ধ ইস্পাত উৎপাদনের নিশ্চয়তা। প্রচলিত পদ্ধতির ইস্পাত কারখানায় ইস্পাত চুল্লিতে স্ক্র্যাপ বা পরিত্যাক্ত লোহা গলানোর পর ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত অপদ্রব্য বা খাদ থেকে যায়। কিন্তু, জিপিএইচে ব্যবহৃত কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তিতে খাদ থাকবে ১ শতাংশেরও কম। এই প্রযুক্তিতে উৎপাদিত প্রতি টন ইস্পাতে সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম পর্যন্ত খাদ থাকবে।

অন্যদিকে, এই প্রযুক্তির চুল্লিতে লোহা গলিয়ে ইস্পাত উৎপাদনকালে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মেশানো হবে। এর ফলে উৎপাদিত সব পণ্যে একই পরিমাণে থাকবে বিভিন্ন উপাদান।

জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানা পরিদর্শনে যাওয়া সাংবাদিকবৃন্দ

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, জিপিএইচ ইস্পাতকে কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস সরবরাহ করেছে অস্ট্রিয়ার প্রাইমেটাল টেকনোলজিস, যা জার্মানির সিমেন্স ও জাপানের মিৎসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজের যৌথ মালিকানার একটি কোম্পানি। প্রাইমেটাল এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক। জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানাটি বিশ্বে কোয়ান্টাম ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস প্রযুক্তির দ্বিতীয় কারখানায়। এই প্রযুক্তির প্রথম কারখানাটি স্থাপিত হয়েছে মেক্সিকোয়। বাংলাদেশের পর সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন এই প্রযুক্তির কয়েকটি কারখানা স্থাপন শুরু করেছে।

জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন কারখানায় উইনলিংক নামের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যে কোনও দৈর্ঘের পণ্য উৎপাদনে সহায়ক। এই প্রযুক্তির প্রথম কারখানাটি স্থাপিত হয়েছে যুক্তরাস্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যে। জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানাটি হবে এই প্রযুক্তির দ্বিতীয় কারখানা।

দ্বিতীয়ত এই কারখানা থেকে কার্বন নিঃসরণ হবে বিশ্বব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমার পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র। জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানা থেকে নির্গত প্রতি ১ হাজার ঘনফুট বাতাসে সর্বোচ্চ ১০ মাইক্রোগ্রাম কার্বন থাকবে। বিশ্বব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী ৫০ মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ গ্রহণযোগ্য।

তৃতীয়ত এই কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় পানির ৩০ ভাগ মাত্র ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে নেওয়া হবে। বাকি ৭০ ভাগ পানির চাহিদা মেটানো হবে জমিয়ে রাখা বৃষ্টির পানি থেকে। সীতাকুণ্ড পাহাড়ে বৃষ্টি হলে যে পানি গড়িয়ে সাগরে গিয়ে নামে, তারই একটি অংশ বড় পুকুরে জমানো হবে ব্যবহার করার জন্য। এ লক্ষ্যে জিপিএইচ ইস্পাত একটি পাহাড় কিনেছে। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসা পানি ধরে রাখতে কাটা হয়েছে বড় একটি জলাশয়।

চতুর্থত জিপিএইচ ইস্পাতের কারখানায় রয়েছে সবচেয়ে আধুনিক পানি পরিশোধন ব্যবস্থা। এই কারখানায় এই পানিকে পরিশোধন করে বার বার ব্যবহার করা হবে। ফলে এটি পানির ওপর কোনও বাড়তি চাপ তৈরি করবে না। অন্যদিকে, এই কারখানা থেকে ন্যূনতম দূষিত পানি কারখানা প্রাঙ্গণের বাইরে যাবে না।

জিপিএইচ ইস্পাতের নতুন কারখানার একাংশ

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গ্রুপ চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের নতুন ইউনিট স্থাপনে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই অর্থের একটি অংশ রাইট শেয়ার ইস্যু থকে সংগৃহীত তহবিল ও কোম্পানির রিজার্ভ থেকে যোগান দেওয়া হয়েছে। বাকি অর্থের জোগান দিয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের ৩০ ভাগ বিনিয়োগ এসেছে কোম্পানির নিজস্ব তহবিল থেকে। আর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাকি ৭০ ভাগের জোগান দিয়েছে। নতুন প্রকল্পটি চালু হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

বর্তমানে জিপিএইচ গ্রুপের বার্ষিক লেনদেন ৮ হাজার কোটি টাকা। নতুন প্রকল্প চালু হওয়ার পরবর্তী ৩ বছরের মধ্যে লেনদেন আরও  ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে আশা করছেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা।

 

/এসআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
তাইওয়ান প্রণালীতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
তাইওয়ান প্রণালীতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
দলবল নিয়ে উঠান বৈঠকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে
দলবল নিয়ে উঠান বৈঠকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
লাইনে দাঁড়িয়ে ১০ টাকার টিকিট কেটে চোখ পরীক্ষা করালেন প্রধানমন্ত্রী
স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন ওবায়দুল কাদের
স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন ওবায়দুল কাদের
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক