দেশে ৪৩৫টি জর্দা কারখানা এবং ৪৮টি গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ২১৮টি জর্দা ও গুল কারখানা কর দেয়। ‘ফ্যাক্টরস ইনহিবিটিং স্মোকলেস টোবাকো ট্যাক্স পেমেন্টস বাই স্মোকলেস টোবাকো ম্যানুফ্যাকচারারার্স ওপেনিং আউটসাউড দ্য ট্যাক্স নেট ইন বাংলাদেশ’-শীর্ষক গবেষণায় এমন তথ্য জানা গেছে।
গবেষণায় জানানো হয়েছে, ৮টি বিভাগের ২৯টি জেলায় করজালের বাইরে থাকা ৮৮ জন ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীর (৮১ জর্দা এবং ৭ গুল) মধ্যে ৩৩ শতাংশের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স নেই। বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের করজালের বাইরে রয়েছে বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা)’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সোমবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করা হয়। তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উবিনীগ, ভয়েস এবং প্রজ্ঞা’র উদ্যোগে আয়োজিত ওয়েবিনারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও গবেষক দলের প্রধান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন। ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন সিটিএফকের মোস্তাফিজুর রহমান, মারিয়া জি. কারমোনা এবং বন্দনা শাহ।
ওয়েবিনারে যুক্ত হয়ে এনবিআর সদস্য জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘শুধু রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবহার কমলে স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমবে।’
গবেষণায় জানানো হয়, দেশের ৯১ শতাংশ উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত হাতে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদন করেন। সাধারণত বাড়িতে বা ক্ষুদ্র পরিসরে কারখানায় এসব তামাকপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব কারখানায় মোট মাসিক গ্রস টার্নওভারের পরিমাণ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এনবিআরের দক্ষ জনবলের সংকট, মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামো এবং সনাতন সরঞ্জাম ও পদ্ধতি, আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং শক্তিশালী ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি অভাবে এখাতে উৎপাদনকারীরা কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পায়।
গবেষণায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোর মধ্যে মূল্য পার্থক্য কমিয়ে সহজলভ্যতা কমানো, স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন পদ্ধতি প্রচলন, আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ এনবিআর জনবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান, ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি হিসেবে এসব পণ্যে ব্যান্ডরোল ব্যবহার, অনিবন্ধিত কারখানাগুলোকে করজালের আওতায় আনতে স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে ক্ষমতা দেওয়া এবং তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের পুরস্কার প্রদান না করারও সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২০.৬ শতাংশ মানুষ (২ কোটি ২০ লাখ) এবং ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী বিদ্যালয়গামী শিশুদের ৪.৫ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন।