X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

যা আছে ই-কমার্স নির্দেশিকায়

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৬ জুলাই ২০২১, ০০:৪০আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২১, ০০:৪০

ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা রবিবার (৪ জুলাই) জারি করা হয়েছে।

সরকারের জাতীয় ডিজিটাল কমার্স পলিসি-২০২০ এর বিধানমতে এ নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়। নির্দেশিকা জারির ফলে ই-কমার্স ব্যবস্থাপনা সরকারের আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে এলো।

নির্দেশনার লক্ষ্যে বলা হয়- ডিজিটাল ক্রয়-বিক্রয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে ‘জাতীয় কমার্স নীতিমালা (সংশোধিত) ২০২০ এর সফল বাস্তবায়নের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলা।

এর উদ্দেশ্য হিসেবে বলা উল্লেখ করা হয়- ডিজিটাল কমার্স পরিচালনায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; ডিজিটাল ব্যবসার প্রসারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ডিজিটাল ব্যবসায় শৃঙ্খলা আনয়নের মাধ্যমে ভোক্তার আস্থা বৃদ্ধি ও অধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা।

নির্দেশনায় মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য ও সেবার তথ্য প্রদর্শন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাধারণ নিয়মাবলী

দেশের সংশ্লিষ্ট সকল প্রচলিত আইন ডিজিটাল কমার্স পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ওয়েবসাইট, মার্কেটপ্লেস বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা সংশ্লিষ্ট সকল বিবরণ ও শর্তাবলি যেমন- পণ্য ও মূল্য ফেরতের শর্তাবলি, পরিবর্তন, সরবরাহের সময়সীমা ইত্যাদি বিষয়ে সকল শর্তাবলী সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্সের মাধ্যমে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) বা নেটওয়ার্ক ব্যবসায় পরিচালনা করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যমে নেশা সামগ্রী, বিস্ফোরক দ্রব্য বা অন্য কোন নিষিদ্ধ সামগ্রী বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। জুয়া বা online betting বা online gambling এর আয়োজন বা অংশগ্রহণ করা যাবে না। ডিজিটাল মাধ্যমে ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। অনুরূপভাবে কোন দাহ্য পদাৰ্থ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে। বিক্রেতার ওয়েবসাইটে কোন বিশেষ সফটওয়্যার বা Cookies থাকলে তা ক্রেতাকে পূর্বেই অবহিত করতে হবে। ক্রয়-বিক্রয়কালে কোন ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হলে কী কী তথ্য সংগ্রহ করা হবে, তথ্য কোথায় সংরক্ষিত থাকবে, পরবর্তীতে কোথায় তা ব্যবহৃত হবে এবং কী প্রক্রিয়ায় তা প্রসেস করা হবে তা জানিয়ে ক্রেতার পূর্বানুমতি গ্রহণ করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন ক্রেতা দেখেছেন তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওয়েবসাইটে চেকবক্স (Check box) বা সম্মতি গ্রহণের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানসমূহ সরকারের পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোন ধরনের লটারি বা র‌্যাফেল ড্র’র আয়োজন করতে পারবে না। এক্ষেত্রে The Penal Code 1860 এর ২৯৪ (বি) ধারাও প্রযোজ্য হবে।

সকল ধরনের ডিজিটাল ওয়ালেট, গিফট কার্ড, ক্যাশ ভাউচার বা অন্য কোন মাধ্যম যা অর্থের বিকল্প হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা অনুসরণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিরেকে তৈরি (Issue), ব্যবহার বা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ব্যতিরেকে ডিজিটাল মাধ্যমে কোন ধরনের অর্থ ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না। ক্রেতাকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোন পণ্য বা সেবা ক্রয়ের জন্য বাধ্য করা যাবে না। সকল ডিজিটাল কমার্স পরিচালনাকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট নিবন্ধন, TIN, ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (UBID) বা পারসোনাল রিটেইল একাউন্ট (PRA) নম্বর এর অন্তত একটি গ্রহণ করতে হবে এবং তার মার্কেটপ্লেস বা সোশ্যাল মিডিয়া পেজে তা প্রদর্শন করতে হবে। সকল ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য পর্যায়ক্রমে ইউনিক বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (UBID) বাধ্যতামূলক করা হবে। স্বচ্ছতার জন্য ব্যবসায় লেনদেন সংক্রান্ত সকল তথ্যাদি অন্ততপক্ষে ৬ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে এবং সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত যে কোন সংস্থা চাহিবামাত্র তা সরবরাহ করতে হবে। মার্কেটপ্লেস এর স্বত্বাধিকারী তার তালিকাভুক্ত বিক্রেতার বিক্রয়কৃত পণ্যের দাম বুঝে পাওয়ার সর্বোচ্চ ১০ (দশ) দিনের মধ্যে প্রযোজ্য কমিশন ও ডেলিভারি চার্জ কেটে রেখে সংশ্লিষ্ট তালিকাভুক্ত বিক্রেতাকে পুরোদাম পরিশোধ করতে হবে। তবে মার্কেটপ্লেস’র স্বত্বাধিকারী ও বিক্রেতা বা মার্চেন্ট এর মধ্যে ভিন্নতর কোন চুক্তি থাকলে সে অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা যাবে। মার্কেটপ্লেস’র মালিক নয় এমন বিক্রেতা বা মার্চেন্ট এর পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপনের পূর্বে মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ ও বিক্রেতা বা মার্চেন্ট এর মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। চুক্তি সম্পাদনের সময় মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা তার যোগ্য প্রতিনিধির নাম, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ঠিকানা ইত্যাদিসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেবে। ডিজিটাল কমার্স মার্কেটপ্লেস বা ফেসবুক পেজে ক্রয়-বিক্রয়, মূল্য ফেরত, পণ্য ফেরত বা পণ্য পরিবর্তন, ডেলিভারি পদ্ধতি, ডেলিভারির সময় এবং অন্যান্য শর্তাবলী বাংলায় লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং স্পষ্টভাবে তা প্রদর্শন করতে হবে। শর্তাবলি বাংলা ভাষার পাশাপাশি প্রয়োজনে অন্য ভাষায়ও লিপিবদ্ধ করা যাবে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন বা বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন শর্তাবলী মার্কেটপ্লেস সোশ্যাল মিডিয়া পেজে লিপিবদ্ধ করা যাবে না। বিদেশি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে অবশ্যই এদেশে নিবন্ধিত হতে হবে এবং ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মার্কেটপ্লেসে ঘোষিত পণ্য বা সেবার ঘোষিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করতে পারবে না।

মার্কেটপ্লেসে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের জন্য উপস্থাপন পদ্ধতি

মার্কেটপ্লেসে বিক্রয়যোগ্য পণ্য বা সেবার যথাযথ বিবরণ- যেমন, পণ্যের পরিমাপ, উপাদান, রঙ, আকৃতি, গুণগতমান ইত্যাদি, মূল্য এবং ডেলিভারিসহ অন্যান্য চার্জ যদি থাকে তা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। পণ্য বা সেবাকে চিহ্নিত করার জন্য পরিপূর্ণ বর্ণনা যা পণ্য বা সেবাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম এমন তথ্যাদি প্রদান করতে হবে। সুস্পষ্টতার জন্য বাস্তবসম্মত হলে পণ্যের ছবি, ভিডিও, রঙ, আকৃতি, পরিমাপ, ওজন, উপাদান ইত্যাদি এবং সেবার ক্ষেত্রে সেবার ধরন, সেবা প্রদান পদ্ধতি, পরিমাপ যোগ্যতা (যদি থাকে) ইত্যাদি তথ্য প্রদান করতে হবে। পণ্যের বিস্তারিত বিবরণ (ব্র্যান্ড, মডেল, ডেলিভারি সময়, country of origin ইত্যাদি) ক্রেতাদের জন্য দিতে হবে যাতে ক্রেতা জেনে-বুঝে পণ্য বা সেবা ক্রয় করতে পারে। পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যের উপাদান ও উপাদানের পরিমাণ, রাসায়নিক গঠন (সম্ভব হলে) ইত্যাদি বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করতে হবে। পণ্য ব্যবহারে মানুষ ও প্রাণীর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কিছু রয়েছে কিনা অথবা শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে কিনা তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। যে সকল পণ্যের ক্ষেত্রে কোন মান নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের সনদ গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে পণ্যের বিবরণে মান নিয়ন্ত্রণ সনদের উল্লেখ থাকতে হবে। মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা দ্রব্য সামগ্রী বিক্রয় বা সরবরাহ করা যাবে না। মেধাস্বত্ব সংরক্ষণের নিয়ম যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। কোন নকল বা ভেজাল পণ্য প্রদর্শন বা বিক্রয় করা যাবে না। বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্য বিক্রেতা বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে এবং বিজ্ঞপ্তিতে কী পরিমাণ পণ্য স্টকে রয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে এবং প্রতিটি বিক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উক্ত পণ্যের স্টক হালনাগাদ করতে হবে। বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্য বিক্রেতা বা তার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ‘স্টকে নেই’ বা ‘Out of stock’ কথাটি স্পষ্টভাবে পণ্যের পাশে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং এক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ ৩.২.১০ এ বর্ণিত অবস্থা ব্যতিরেকে কোনও ধরনের পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে। নিত্যপণ্য ও খাদ্য সামগ্রীর বা সংখ্যায় প্রকাশ করা যায় না এমন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে স্টকের পরিমাণের পরিবর্তে ‘Available for delivery’ কথাটি লিখা থাকতে হবে। অগ্রিম মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে প্রদর্শিত পণ্য অবশ্যই দেশের ভেতরে রেডি টু শিপ’ (মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে বা মার্কেটপ্লেসে নিবন্ধিত থার্ড পার্টি বিক্রেতার নিয়ন্ত্রণে) পর্যায়ে থাকতে হবে। সম্পূর্ণ মূল্য গ্রহণের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারি পারসন বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হস্তান্তর করার মত অবস্থায় নেই এমন পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যমূল্যের ১০% এর বেশি অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত এসক্রো সার্ভিস’র মাধ্যমে ১০০% পর্যন্ত অগ্রিম গ্রহণ করা যাবে। কোন ধরনের অফার, ডিসকাউন্ট, ফ্রি ডেলিভারি বা অন্য কোন সুবিধা থাকলে তা পরিষ্কারভাবে পণ্যের বর্ণনায় থাকতে হবে। কোন তৃতীয় পক্ষ বা মার্চেন্ট’র পণ্য বা সেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রয় হলে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির নাম ওয়েবসাইটে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। তবে মার্কেটপ্লেসে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্চেন্ট এর যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নম্বর, ই-মেইল ইত্যাদি সংরক্ষণ করবে এবং কোন অভিযোগ বা বিরোধ দেখা দিলে প্রয়োজনে তা সরবরাহ করতে হবে।

পণ্য ডেলিভারির নির্দেশিকা

বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পণ্য বা পণ্য সামগ্রী ডেলিভারিম্যান বা ডেলিভারি সংস্থার নিকট হস্তান্তর করতে হবে এবং ক্রেতাকে তা টেলিফোন, ই-মেইল বা এসএমএস এর মাধ্যমে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে ডেলিভারি সংস্থা বা মার্কেটপ্লেস ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারে। পণ্যের সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করা হয়ে থাকলে ক্রেতা ও বিক্রেতা একই শহরে অবস্থান করলে ক্রয়াদেশ গ্রহণের পরবর্তী সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) দিন এবং ভিন্ন শহরে বা গ্রামে অবস্থিত হলে সর্বোচ্চ ১০ (দশ) দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি প্রদান করতে হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্ষেত্রে ডেলিভারির সময় আরও সংক্ষিপ্ত হবে এবং ক্রেতাকে তা ক্রয়াদেশ গ্রহণের সময় সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে।

কোন একটি ক্রয়াদেশ (purchase order)-এ একাধিক পণ্য থাকলে আলাদা আলাদা পণ্যের জন্য সাধারণত আলাদা আলাদা ডেলিভারি চার্জ আরোপ করা যাবে না। তবে মার্কেটপ্লেসে পণ্যে আলাদা আলাদা ডেলিভারি প্রদান করা হলে আলাদা আলাদা চার্জ গ্রহণ করা যাবে। এক্ষেত্রে ক্রেতাকে ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করার সময় বা ইনভয়েসে পূর্বেই অবহিত করতে হবে। পণ্য বিক্রয় ও সরবরাহের ক্ষেত্রে মার্কেটপ্লেসে প্রদর্শিত পণ্যের মান ও সঠিকতা মার্কেটপ্লেসের স্বত্বাধিকারীকে নিশ্চিত করতে হবে। তবে বিক্রেতা বা মার্চেন্ট’র সঙ্গে ভিন্নতর চুক্তি থাকলে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। সময়মত ডেলিভারি প্রদান এবং মালামালের সুরক্ষার জন্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান বা ডেলিভারি পারসন’র সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি সম্পাদন করবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে। পণ্য সরবরাহের সময় মুদ্রিত বিল প্রদান করতে হবে যাতে প্রদেয় বা প্রদত্ত ভ্যাট ও আয়কর (যদি থাকে) উল্লেখ থাকতে হবে। যেসব পণ্যের ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি আছে, তার জন্য ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি পিরিয়ড ও সেবা প্রাপ্তির স্থান ও যোগাযোগের বিস্তারিত ঠিকানাসহ অন্যান্য শর্ত সম্বলিত কার্ড বা ডিজিটাল কার্ড পণ্যের সঙ্গে সরবরাহ করতে হবে। পচনশীল দ্রব্য দ্রুততম সময়ে ডেলিভারি দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ডেলিভারির সময় যাতে পণ্যের কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

অভিযোগ ও প্রতিকার

পণ্য ও সেবার বিষয়ে অভিযোগের জন্য মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অভিযোগ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাপ বা প্ল্যাটফর্মে ফোন নম্বর, ইমেইল বা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। প্রতিটি ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানে একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ দিতে হবে যিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় সাধন করতে পারে। কোন পণ্যের বা সেবা প্রদান বিষয়ে ক্রেতার অভিযোগ রেকর্ডের যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং যেকোন অভিযোগ প্রাপ্তির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের ব্যবস্থা করে ক্রেতাকে ফোন, ই-মেইল বা এসএমএস’র মাধ্যমে তা জানাতে হবে। পণ্যের বা সেবার বিষয়ে ক্রেতা বা অন্য কারও রেটিং এবং মতামত জানানোর ব্যবস্থা ওয়েবসাইট, অ্যাপ কিংবা প্ল্যাটফর্মে রাখতে হবে যাতে ভবিষ্যতে ক্রেতারা পণ্যের ব্যাপারে অন্য ক্রেতাদের মতামত বা রিভিউ দেখে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান (মার্কেটপ্লেস বা মার্চেন্ট) বা এর কোন স্টাফ বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বা মার্চেন্ট’র সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ রিভিউর বা রেটিং এ অংশগ্রহণ করতে পারবে না। এ রিভিউ মুছে ফেলা যাবে না। সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের পর মানুষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কোন কারণে (Force majeure) ক্রেতার চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব না হলে, অর্ডার দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্রেতাকে তা ফোন, এসএমএস, ই-মেইল বা অন্যান্য মাধ্যমে জানাতে হবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত প্রদান করতে হবে এবং অন্য কোন পণ্য ক্রয় করার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাধ্য করা যাবে না।

এ নির্দেশিকার বিধান প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে কর্তৃপক্ষ বিক্রেতা বা মার্কেটপ্লেস’র ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানি রেজিস্ট্রেশন, ভ্যাট নিবন্ধন ইত্যাদি বাতিল করাসহ সংশ্লিষ্ট মার্কেটপ্লেস নিষিদ্ধকরণসহ অন্যান্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিকারের জন্য প্রেরণ করতে পারবে। এ নির্দেশিকা প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা ক্রেতা বা কোন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আইনানুগ প্রতিকারের জন্য অভিযোগ দায়ের করতে পারবে।; ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সুষ্ঠুভাবে ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করবে।

অগ্রিম পরিশোধিত মূল্য সমন্বয়

ক্রেতা কোন মাধ্যমে (ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং, অন্যান্য) অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করলে এবং বিক্রেতা কোন কারণে নির্ধারিত সময়ে সে পণ্য সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে মূল্য পরিশোধের সর্বোচ্চ ১০ দিন (সংশ্লিষ্ট অর্থ প্রদানকারী মাধ্যমের ব্যবহৃত সময় ব্যতীত) এর মধ্যে ক্রেতার পরিশোধিত সম্পূর্ণ অর্থ যে মাধ্যমে ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করেছেন সেই একই মাধ্যমে (ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস ইত্যাদি) ফেরত প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন চার্জ থাকলে মার্কেটপ্লেস বা বিক্রেতাকে তা বহন করতে হবে। মূল্য ফেরতের বিষয়ে ক্রেতাকে ইমেইল, এসএমএস, ফোন বা অন্য মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে ক্রেতার পরিশোধিত মূল্যের অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা যাবে না। ক্রেতা যথাসময়ে পণ্য বা সেবা গ্রহণে ব্যর্থ হলে এ সময়সীমা শিথিল করা যাবে। যে কোন ধরনের ঘোষিত ডিসকাউন্ট বিক্রয় কার্যক্রম’র সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর করতে হবে। ক্যাশব্যাক অফার মূল্য পরিশোধের পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর হতে হবে। ক্যাশব্যাক অফার বা মূল্য ছাড় অফারের ঘোষিত অর্থ সংশ্লিষ্ট পণ্য বা সেবা বিক্রয় সম্পন্ন হওয়ার পর কোন ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের ওয়ালেটে জমা রাখা যাবে না। ডিজিটাল কমার্সে লেনদেনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ‘এসক্রো সার্ভিস’ গ্রহণ করা যেতে পারে।

 

/ইএইচএস/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
১০ মাসে এলো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স
১০ মাসে এলো রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
টেকনাফে অপহরণের শিকার একই পরিবারের ৩ জনকে উদ্ধার
টেকনাফে অপহরণের শিকার একই পরিবারের ৩ জনকে উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে