X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতিকে যা মোকাবিলা করতে হবে

গোলাম মওলা
০১ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০০আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১২:৩৪

কোভিডের মধ্যে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া থাকলেও ২০২১ সালে দেশের সার্বিক অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন বছরের অর্থনীতি আরও চাঙ্গা থাকবে। তবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।


স্বল্প আয়ের মানুষরা চাপে থাকবে

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ২০২১ সালের মতো ২০২২ সালেও জিনিসপত্রের দাম নিয়ে বেশ খানিকটা ভোগান্তিতে থাকবেন সীমিত আয়ের মানুষেরা। ফলে অতীব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও খাদ্যপণ্য  কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ চাপে থাকবে। বিশেষ করে চালের দাম আরও বাড়তে পারে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী। ধারণা করা যায়, এর ধারাবাহিকতা নতুন বছরেও থাকবে। অবশ্য বিশ্বজুড়েই এখন মূল্যস্ফীতি বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও চালের দাম চড়া। এর প্রভাব বাংলাদেশেও কিছুদিন থাকবে।

 

ব্যালেন্স অব পেমেন্টে চাপ পড়বে

আহসান এইচ মনসুর বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে হলে চাল আমদানি আরও বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিতে পারে। তার মতে, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক ব্যালেন্স অব পেমেন্টেও চাপ পড়বে। কারণ, আমদানি ব্যয় যেভাবে বাড়ছে এবং প্রবাসী আয় যেভাবে কমছে, তাতে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে আবার বিশ্বব্যাপী  ওমিক্রনের আঘাতের শঙ্কাও রয়েছে। এছাড়া ইতোমধ্যে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ আমদানি বেশি হচ্ছে, কিন্তু প্রবাসী আয় কমে গেছে। বিদেশে শ্রমিক কম যাওয়ায় সামনের দিনগুলোতেও রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও কমতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন, মুদ্রা বিনিময় হারে অসামঞ্জস্য আছে। ডলারের মূল্য ব্যাংকে এখন ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। আর খোলাবাজারে তা ৯১-৯২ টাকা। পার্থক্য অনেক বেশি। এতে ব্যাংকব্যবস্থায় অর্থের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে।

 

বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়েও অস্বস্তি থাকবে

আহসান এইচ মনসুরের মতে বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়েও অস্বস্তিতে আছে সরকার। এই অস্বস্তি আরও কিছুদিন থাকবে।

প্রসঙ্গত, সরকারের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য অর্জন করতে হলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী ৭ মাসে (ডিসেম্বর থেকে জুন) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে। এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায়ে  ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। এই সময়ে এনবিআর এক লাখ ২৬৭ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করেছে।

আহসান এইচ মনসুরের মন্তব্য হলো- রাজস্ব আদায় কম হলে সরকার খরচ কমিয়ে সামাল দিতে পারে।  লক্ষ্য বেশি থাকায় এবারও টার্গেট অনুযায়ী  রাজস্ব অর্জিত হবে না। ফলে সরকারকে উন্নয়ন খরচ কমাতে হবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। উন্নয়ন খরচ কমালে মানুষের কাছে টাকার প্রবাহ কমবে। সব কিছুর পরও ২০২১ সালের মতো নতুন বছরে দেশের সার্বিক অর্থনীতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।

 

ওমিক্রনের আঘাত

ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির যে ঝুঁকি রয়েছে, তাকে ভালোভাবে সামাল দিতে না পারলে সামনে অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় পড়ে যেতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড জায়েদ বখত।

তিনি বলেন, ওমিক্রনের আঘাত কেমন হবে, তার উপর নতুন বছরের অর্থনীতি অনেকটা নির্ভর করছে। তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি ধরে রাখতে হলে এটাকে ভালোভাবে সামাল দিতে হবে। তার মতে,  নতুন বছরের অর্থনীতিতে কয়েকটি চ্যালেঞ্জ থাকলেও সম্ভাবনা আছে বেশি। ইতিমধ্যে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। তৈরি পোশাক রফতানি ভালো হচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে দাম কমেছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও চালের দাম চড়া। এটাকে মাথায় রেখে নতুন বছরের প্রস্তুতি নিতে হবে।

এদিকে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প আবারও করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের চাপ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম।

তিনি জানান, আমরা গত কয়েক মাসে কেবল কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিলাম, এরই মধ্যে আবার ওমিক্রনের চাপ এসে পড়েছে। ইতিমধ্যেই বিশ্বের ১০৬টির বেশি দেশে ওমিক্রনের সংক্রমণ ছড়িয়েছে বলে জেনেছি। দেশগুলোর মধ্যে অনেক দেশেই বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বাজার রয়েছে। এসব দেশেও বাংলাদেশ থেকে রফতানির ওপর ওমিক্রনের চাপ আসতে শুরু করেছে।

 

প্রবাসী আয় কমছে

টানা সাত মাস ধরে প্রবাসী আয় কমেছে। গত মে মাসে ২১৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা সাম্প্রতিক কালে কোনও এক মাসে সর্বোচ্চ। এরপর প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স কমেছে। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। প্রবাসে শ্রমিক যাওয়াও কমেছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে রেমিট্যান্সের সুখ না–ও থাকতে পারে।

 

ব্যাংক ব্যবসা

আহসান এইচ মনসুর বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান  ও ড. জায়েদ বখত রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান। এই দুই অর্থনীতিবিদ জানান, এ বছর ব্যাংক ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে ব্যাংকগুলো। করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমতো করা হয়নি। যেগুলো একটু দুর্বল প্রতিষ্ঠান, সেগুলো আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চলতি বছর।

এদিকে ব্যবসায়ীরা আগামী বছরের জুন পর্যন্ত ঋণের টাকা ফেরত দিতে চাচ্ছেন না। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তাতে আগামী বছরে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে।

/এমএস/
সম্পর্কিত
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া কি আলোর মুখ দেখবে?
বিএনপির চিন্তাধারা ছিল অন্যের কাছে হাত পেতে চলবো: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী