X
সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কাঁচা মরিচ-টমেটো-শসার দাম লাগাম ছাড়া

শফিকুল ইসলাম
২৮ জুন ২০২৩, ১৬:০১আপডেট : ২৮ জুন ২০২৩, ১৬:১৬

কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে বাজারে অস্বাভাবিক দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ, শসা আর টমেটো। ক্রেতাদের অভিযোগ, চিরাচরিতভাবে সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে এই তিন পণ্য। ঈদে আপ্যায়নের অনুষঙ্গ সালাদ, কোরবানির ঈদে মাংসের সঙ্গে এটি প্রায় সবার কাছেই গুরুত্বপূর্ণ আইটেম। তবে বৃষ্টি আর ঈদকে উছিলা করে সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীদের নজর এবারও এড়াতে পারেনি এ পণ্য তিনটি। ফলে লাগামহীম দামে বিক্রি হচ্ছে কাঁচা মরিচ, শসা আর টমেটো। সবাই যখন কোরবানির পশু কেনা এবং সেগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে ব্যস্ত সেই সুযোগেই বাজার চড়েছে এ তিনটি পণ্যের ওপর।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা দরে। টমেটো ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আর শসা ১৫০ টাকা। আমদানির অনুমতি দিয়েও কাঁচা মরিচের দাম একটি যৌক্তিক পর্যায়ে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। যারা আমদানি করছেন, তারাও দেশীয় বিক্রেতাদের সঙ্গে মিল রেখেই কম দামে আমদানি করা কাঁচা মরিচ বেশি দামে বিক্রি করছেন। ঈদের সময় চাহিদাকে পুঁজি করেই তারা সুযোগটি নিয়েছে। সরকারি ছুটি থাকার কারণে বাজারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনুপস্থিত। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাঁচাবাজারে মনিটরিং করে না। এটাকেই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নিয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বাইরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকের কাছ থেকে কম মূল্যে কিনে এনে তা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করছে সুবিধাবাদী সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা। অতি বৃষ্টির কারণে ক্ষেতে কাঁচা মরিচ ও গাছ দুটোরই ক্ষতি হচ্ছে। বৃষ্টির মৌসুমে যে এমন হয় তা সব কৃষকদেরই জানা। তাই তারা অতিবৃষ্টির কবল থেকে কাঁচা মরিচ রক্ষা করতে আগেভাগেই তা ছিঁড়ে এনে বিক্রি করে দেন। এই সুযোগে মধ্যস্বত্বভোগী সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীরা কৃষককে জিম্মি করে কম দামে এসব কাঁচা মরিচ কিনে এনে তা বেশি দামে বিক্রি করছে।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও দু-চারদিন পরে স্বাভাবিক নিয়মেই কাঁচা মরিচের দাম কমে যাবে। কারণ, তখন চাহিদা কমবে, একইসঙ্গে আমদানির সুযোগে সরবরাহ বাড়বে। কিন্তু এই দু-চারদিনেই ভোক্তাদের পকেট পরিষ্কার করে অধিক মুনাফা করে নেবে সুযোগসন্ধানী সেই ব্যবসায়ীরা।

একই অবস্থা টমেটো আর শসার ক্ষেত্রেও। বলা হচ্ছে শসা আর টমেটো গ্রীষ্মকালীন সবজি নয়। এ দুটি শীতকালীন সবজি বলে অনেকে দাম বেশি নিচ্ছে। তবে এখন দেশে গ্রীষ্মকালীন টমেটো আর শসা উৎপাদন হচ্ছে ব্যাপক হারে। কাজেই বাড়তি কোনও খরচ লাগছে না টমেটো আর শসা উৎপাদনে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বগুড়ার কাহালু উপজেলার কৃষক জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, এখন সারা বছরই টমেটো আর শসা চাষ করি। ফলনও ভালো পাওয়া যায়। তবে মৌসুমের জন্য বীজ ও পরিচর্যার ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। শীতকালীন টমেটো আর শসার বীজ অন্য মৌসুমে বপন করলে ফলন পাওয়া যাবে না। এমনকি গাছও বাঁচবে না। আবার এই সময়ের বীজ শীতের দিনে লাগালেও ফলন হবে না। তাই আবহাওয়ার সঙ্গে সহনীয় বীজ বপন করলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। আমরা সেভাবেই করি। এ ক্ষেত্রে সরকারের কৃষি বিভাগ আমাদের সময় অনুযায়ী পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে বাড়তি দামের বিষয়টি সম্পর্কে শ্যামবাজার কাঁচামার্কেটের ব্যবসায়ী মোখলেস উদ্দিন জানিয়েছেন, বাজারে কোথায় সিন্ডিকেট তা আমাদের জানা নেই। আমরা যে দামে কিনি, সেই দামের সঙ্গে নিজেদের কিছুটা মুনাফা যুক্ত করে বিক্রি করি। সেখানে প্রতি কেজিতে ১ থেকে দেড় টাকা বেশি হতে পারে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই সুযোগটি নেয়। তারা নানা অজুহাতেই সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম নিজেদের ইচ্ছেমতো বাড়িয়ে বিক্রি করে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের একটা কমন অভিযোগ, তা হচ্ছে পাইকারি বাজারে পণ্যের মান যাচাই করার সুযোগ নাই। পাইকারি ব্যবসায়ীরা পচা ও নষ্ট মাল কিনতে তাদের বাধ্য করে। আরেকটি অভিযোগ হচ্ছে, পাইকারি বাজারে পণ্যের ওজনে কম দেওয়া হয়। তারা বলেন, এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) মাল কিনলে কমপক্ষে আধা কেজি ঘাটতি থাকে। সেই ঘাটতি ও পচা নষ্ট মালের দাম পুষিয়ে নিতে হয়। সে কারণে তারা পাইকারি বাজারের তুলনায় কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করছেন। 

এ প্রসঙ্গে মোখলেস উদ্দিন জানিয়েছেন, বেশি পণ্য একসঙ্গে মাপার কারণে ওজন কিছুটা কমতে পারে, তবে তা কোনোভাবেই এক পাল্লায় আধা কেজি নয়। সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৭০ গ্রাম। আর পচা নষ্ট মাল আমরা পাইকারি বাজারে বিক্রি করি না। কারণ, আমরা যখন মাঠ থেকে মাল কিনি তা যাচাই বাছাই করেই কিনি। খুচরা বিক্রেতাদের এসব অভিযোগ নিঃসন্দেহে দুরভিসন্ধিমূলক। দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তারা এসব বলছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হঠাৎ কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় গত রবিবার (২৫ জুন) কাঁচা মরিচ ও টমেটো আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। পরদিন (সোমবার) কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে তা কোথাও ৪০০ আবার কোথাও ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়। গত দুই দিনের বৃষ্টি এতে নতুন পালক যুক্ত করেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার কাঁচা মরিচ আমদানির অনুমতি দিলেও ঈদের আগে দাম কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ, আমদানি করা কাঁচা মরিচ দেশে আসতে সময় লাগবে।

ঈদের ছুটিতে বাজার মনিটর ও অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় কী এ বিষয়ে জানতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামানকে ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন- জোর হাওয়া লেগেছে মসলার দাম বাড়ার পালে

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বাড্ডায় দুর্বৃত্তদের এলোপাতাড়ি গুলিতে বিএনপি নেতা নিহত
দাবি-দাওয়ায় বিপর্যস্ত রাজধানী, সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা
মগবাজারে দিনে-দুপুরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে যুবকের ব্যাগ ছিনতাইয়ের ভিডিও ভাইরাল
সর্বশেষ খবর
পুতিনকে ‘উন্মাদ’ বললেন ট্রাম্প
ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ হামলাপুতিনকে ‘উন্মাদ’ বললেন ট্রাম্প
আজও সচিবালয়ে সমাবেশ করবেন কর্মচারীরা
আজও সচিবালয়ে সমাবেশ করবেন কর্মচারীরা
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আ.লীগ নেতা, এসিল্যান্ডের দুঃখ প্রকাশ
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আ.লীগ নেতা, এসিল্যান্ডের দুঃখ প্রকাশ
যুবলীগ নেতা ডাবলু রিমান্ডে
যুবলীগ নেতা ডাবলু রিমান্ডে
সর্বাধিক পঠিত
সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে সব ধরনের আমদানি-রফতানি
সোমবার থেকে বন্ধ থাকবে সব ধরনের আমদানি-রফতানি
রাস্তার পাশাপাশি মেট্রোস্টেশনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
রাস্তার পাশাপাশি মেট্রোস্টেশনে আন্দোলনকারীদের অবস্থান, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ জারি
বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশসহ একাধিক দেশে সামরিক উপস্থিতি বিবেচনা করছে চীন: যুক্তরাষ্ট্র
বিক্ষোভে উত্তাল সচিবালয়
বিক্ষোভে উত্তাল সচিবালয়