X
রবিবার, ১৯ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিলে সেটি হবে রাজনৈতিক: ইআরএফের সেমিনারে বক্তারা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৩০আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৩০

শ্রম ইস্যুতে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কোনও অবস্থা বা পরিবেশ নেই। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম নীতির আওতায় বাণিজ্যের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা এলে সেটি হবে রাজনৈতিক।

সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক সেমিনারে তৈরি পোশাকশিল্পের নেতারা এসব কথা বলেন। সেমিনারজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেনিসয়াল মেমোরেন্ডাম নিয়েই বেশি আলোচনা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলে শামিম এহসান বলেন, শ্রম অধিকারে অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। ২৫০০ কারখানার ১৩০০টির ট্রেড ইউনিয়ন হয়েছে। তার অভিযোগ, শ্রমিক নেতাদের একটা অংশ শিল্প বাঁচাতে কাজ করে, আর একটা অংশ বিদেশ থেকে ডলার এনে নিজের স্বার্থ দেখে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্টের নতুন শ্রম নীতির দুটি দিক আছে। একটা পর্দার সামনে, অন্যটি আড়ালে। সরকারকে কূটনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে।

সেমিনারে বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য ড. মোস্তফা আবিদ খান বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বিধির আওতায় বাংলাদেশের ওপর সরাসরি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞায় কোনও বাধা নেই। শ্রম ইস্যুতে ব্যক্তি পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা রয়েছে। তবে কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা কী পর্যায়ে দেওয়া হতে পারে তা এখনও সুস্পষ্ট নয়।

তিনি বলেন, শ্রম ইস্যু নিয়ে প্রতিক্রিয়ামূলক না হয়ে আরও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সব কিছু সামাল দিতে হবে। ইপিজেডেও পূর্ণাঙ্গ ট্রেড ইউনিয়ন চর্চার সুযোগ রাখতে হবে। শ্রম সংক্রান্ত বড় দুর্বলতা হচ্ছে শ্রম আইনের কার্যকর বাস্তবায়ন না থাকা।

বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশের শ্রম পরিস্থিতি এত খারাপ অবস্থায় নেই যে নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে হবে। যদি সে ধরনের কিছু হয় তা হবে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে। শ্রম অধিকারের কারণে নয়। কেননা, কোনও ধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে শ্রমিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাহলে এ ধরনের পদক্ষেপে মার্কিন উদ্দেশ্য কী তা স্পষ্ট।

তিনি আরও বলেন, যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন তা সরকার, মালিক, শ্রমিক-এই তিন পক্ষ মিলে সমাধান করতে হবে।

বিজিএমইএর শ্রম বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আ ন ম সাইফুদ্দিন বলেন, পোশাক খাত ঐতিহাসিকভাবেই নানা সমস্যা মোকাবিলা করে এগিয়েছে। এবারও মার্কিন শ্রমনীতি ইস্যু সরকার, মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি, শ্রমিক সংগঠনের জোট ইন্ডাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের (আইবিসি) সভাপতি আমিরুল হক বলেন, নিষেধাজ্ঞায় পড়ার মতো খারাপ অবস্থা দেশে নেই। শ্রমমানের অনেক উন্নতি হয়েছে। শ্রম অধিকার বিষয়ে মৌলিক ১০টি কনভেনশনের মধ্যে ৮টি অনুসমর্থন করেছে বাংলাদেশ। আর যুক্তরাষ্ট্র অনুমোদন করেছে মাত্র দুটি কনভেনশন। ফলে বাংলাদেশের শ্রমমান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার যুক্তরাষ্ট্রের নেই।

আমিরুল হক আরও বলেন, ‌যারা নিষেধাজ্ঞা দিতে চায়, তারা আইএলও কনভেশনের কয়টি রেটিফাই করেছে? তারা কোর কনভেনশনের বেশিরভাগই অনুমোদন করেনি। তারা যদি বলে তোমার (বাংলাদেশের) শ্রমমান উন্নত নয়, তাহলে বলতে হবে, শ্রমমান নয়; তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে।

তবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি তৌহিদুর রহমান বলেন, ব্যবসা ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতিকে অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেটিও ভাববার বিষয়। চারজন শ্রমিকের মৃত্যু হলো। হত্যাকাণ্ডের কেন তদন্ত হলো না, কেন বিচার হচ্ছে না। এ প্রবণতা বন্ধ না হলে রফতানি বাণিজ্য ঝুঁকিতে পড়বে।

উল্লেখ্য, বিশ্বজুড়ে শ্রম অধিকার সুরক্ষায় গত ১৬ নভেম্বর প্রেসিডেনিসয়াল মেমোরেন্ডাম বা নতুন নীতিতে সই করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ওই দিনই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিশ্বজুড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, তা প্রয়োগ করা হবে।

এরই মধ্যে গত ২০ নভেম্বর ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সচিবকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, শ্রম অধিকার বিষয়ক নতুন এ নীতির লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বাংলাদেশ।

/জিএম/আরআইজে/
সম্পর্কিত
ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল!
জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
‘ভেবেছিলাম দেশের সমস্যা ক্ষণস্থায়ী, এখন আরও বেড়েছে’
সর্বশেষ খবর
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিকেশন অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠিত
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
চট্টগ্রামে লরি চাপায় মৃত্যু বেড়ে তিন
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
রাজধানীতে রিকশাচালকের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া, স্বামীর লাশ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
নির্মাণের উদ্দেশ্যে ভালো সড়ক কেটে ২ বছর ধরে খাল বানিয়ে রেখেছে
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?
গরমে সুস্থ থাকতে কোন কোন পানীয় খাবেন? ইলেক্ট্রোলাইট পানীয় কখন জরুরি?