X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্বল ব্যাংকের তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন নয়: মুখপাত্র

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ মার্চ ২০২৪, ১৯:১৮আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৪, ১৯:১৯

কয়েকটি গণমাধ্যমে দুর্বল ও সবল ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত কোনও প্রতিবেদন নয় বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক। তিনি বলেন, দুর্বল ও সবল ব্যাংক নিয়ে প্রতিবেদন অভ্যন্তরীণ গবেষণার জন্য করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মুখপাত্র বলেন, একটি বিভাগ তাদের নিজস্ব কিছু তথ্য গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ বিভিন্ন কম্পোনেন্ট নিয়ে অ্যাসেসমেন্ট করে। রেগুলার ফাইনান্সিয়াল রিস্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য করা হয়, এটা প্রকৃত হেলথ ইনডিকেটর নয়। তাই এটি দিয়ে কোনও ব্যাংকের সার্বিক আর্থিক অবস্থা নির্ণয় বা তুলনা করা ঠিক হবে না।

পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ব্যাংকগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে একটা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। এখানে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। চলতি বছরের ব্যালেন্স সিটের ওপর ভিত্তি করে এটা করা হবে। যেটা কার্যকর হবে ২০২৫-এর মে মাস থেকে।

দুর্বল ব্যাংক একীভূত (মার্জ) করা প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক অনুযায়ী কোনও কোনও দুর্বল ব্যাংক ইচ্ছাকৃতভাবে মার্জার না হয় তাহলে আগামী ডিসেম্বরের পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে মার্জার করে দেবে।

প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক রেটিং সিস্টেম ব্যবহার করে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মের অধীনে সব ব্যাংক-কে সংকলন করেছে। এর মধ্যে ছয়টি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তা হলো, মূলধনের পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণমান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন, তারল্য এবং বাজারের ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা। এতে ১ রেটিং সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়, আর ৫ রেটিং সবচেয়ে খারাপ হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রতিবেদনটির বিচারে রেড জোনের ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ (পুওর) এবং ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল (উইক)। আর গ্রিন জোনের ব্যাংকগুলো ভালো মানের (গুড)। অর্থাৎ দেশে এখন সবলের চেয়ে দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যাই বেশি। প্রতিবেদনে লাল ও হলুদ জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেক্স অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি ২০২৩ সালের জুন থেকে অর্ধবার্ষিক আর্থিক কর্মক্ষমতার ভিত্তিতে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য ব্যাংকের স্বাস্থ্য সূচক তৈরি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা বিভাগ।

স্বাস্থ্য সূচক হিসেবে তৈরি করা ৫৪টি ব্যাংকের মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই খারাপ, যার ৯টি ইতোমধ্যে রেড জোনে চলে গেছে। ইয়েলো জোনে আছে ২৯টি ব্যাংক; এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক রেড জোনের খুব কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টি বিদেশি ও ৮টি দেশি ব্যাংক রয়েছে।

তবে অভ্যন্তরীণ স্বাস্থ্য সূচক গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে প্রেস বিফ্রিং করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক।

বর্তমানে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। তবে ওই প্রতিবেদনে ৫৪টি ব্যাংকের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এই ৫৪টি ব্যাংকের ছয়টি ষাণ্মাসিক তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য ছয়টি ষাণ্মাসিকে এই ৫৪ ব্যাংকের মধ্যে ৩৮টির অবস্থার অবনতি হয়েছে। আর ১৬টির অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বাকি ৭টির মধ্যে তিনটির আর্থিক অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালের ১২ জুলাই আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন।

ওই বছরের ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেন তিনি। কিন্তু গত দেড় বছরে এ ১০টি ব্যাংকের অবস্থারও উন্নতি হয়নি। এসব ব্যাংকের অধিকাংশের অবস্থানই রেড জোনে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভালো অবস্থায় রয়েছে প্রাইম ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক আলফালাহ, উরি ব্যাংক, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি ব্যাংক এনএ, হাবিব ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

রেড জোনে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

৩টি ইয়েলো জোনে থাকলেও রেড জোনের কাছাকাছি থাকা ব্যাংকগুলো হলো, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), সোনালী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক।

ইয়েলো জোনে থাকা ২৯টির মধ্যে ২৬টি ব্যাংক হলো, আইএফআইসি ব্যাংক, মেঘনা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, আল আরাফাহ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা,  গ্লোবাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, সাউথ বাংলা, মধুমতি, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।

/জিএম/এমএস/
সম্পর্কিত
সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের বিবৃতিবাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের স্বাধীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের দাবি
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর
সর্বশেষ খবর
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
চীনের দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক ধসে নিহত ৩৬
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
রাশিয়ার বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘনের অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
কেনিয়ায় বন্যায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৮১
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!
সিয়াম-পরীর গানের ভিউ ১০০ মিলিয়ন!