X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

কর অব্যাহতি পাবে শরিয়াহভিত্তিক বন্ড সুকুক-এর মুনাফা

গোলাম মওলা
৩০ মে ২০২১, ১৩:০০আপডেট : ৩০ মে ২০২১, ১৩:০০

শরিয়াহভিত্তিক ইসলামি বন্ড সুকুক-এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এরই মধ্যে এই বন্ডে বিনিয়োগও শুরু হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর কর্মকর্তারা বলছেন, আসন্ন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে 'সুকুক'কে জনপ্রিয় করার উদ্যোগ থাকছে।

নতুন বাজেটে ইসলামি বন্ড ‘সুকুক’ সম্পর্কে জনসাধারণকে আকৃষ্ট করতে এর মুনাফায় কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। গত ৪ মার্চ এনবিআরকে এ বিষয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা করে দুই দফায় মোট ৮ হাজার কোটি টাকার সুকুক বন্ড নামে সার্টিফিকেট বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করবে। বিপরীতে তারা মুনাফা পাবে।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উৎস কর দিতে হয় না। কিন্তু সুকুক বন্ডে ৫ শতাংশ উৎসে কর আছে।

গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো সুকুক বন্ড ইস্যু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বন্ডে বিনিয়োগকারীরা মূলধনের ওপর ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ হারে মুনাফা পাবেন। বন্ডের মেয়াদ পাঁচ বছর। বিনিয়োগকারীরা সুকুক থেকে বছরে দুবার মুনাফার টাকা পাবেন। সুকুক-এর দ্বিতীয় ধাপের নিলাম হবে আগামী ২৮ জুন।

সুকুক একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে সিলমোহর লাগিয়ে কাউকে অধিকার ও দায়িত্ব দেওয়ার আইনি দলিল। এখন সরকারের অর্থ সংগ্রহের নতুন একটি উৎস হয়েছে এ সুকুক।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের ‘সারা দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্প’-এর সম্পদের বিপরীতে ছাড়া হয়েছে এই সুকুক। ওই প্রকল্পের জন্য চার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে সরকার। সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক এই বন্ড ইস্যু করছে।

প্রথম নিলামে ৩৯টি আবেদন জমা পড়ে। আনুপাতিক হারে সবাই বন্ড পায়। ৪ হাজার কোটি টাকার বন্ডের জন্য আবেদন পড়ে ১৫ হাজার ১৫৩ কোটি ১০ লাখ টাকার। বন্ড পাওয়া গ্রাহকদের মধ্যে দুজন ব্যক্তি ও বাকিগুলো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

জানা যায়, আগ্রহী ক্রেতারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা ও এর গুণিতক পরিমাণ অর্থ নিলামের জন্য দাখিল করার সুযোগ পায়। এই বন্ডের বিপরীতে বছরে ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ হারে মুনাফা দেবে সরকার। মুনাফা বিতরণ করা হবে প্রতি ছয় মাস অন্তর। ইসলামি এ বন্ডের হার নির্দিষ্ট, কারণ, এটি ইজারা (ভাড়া) সুকুক।

ইসলামি বন্ড সুকুক কীভাবে চলবে

বিনিয়োগকারীদের টাকায় গড়ে উঠবে এই প্রকল্প। সরকার এই প্রকল্প ভাড়া নেবে। এই ভাড়ার টাকা থেকে মুনাফা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। আর মেয়াদ শেষে পুরো প্রকল্প কিনে বিনিয়োগকারীদের মূল টাকা ফেরত দেবে সরকার। এভাবে প্রথম এ বন্ডের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

প্রচলিত বন্ড ও সুকুক-এর পার্থক্য

ঋণদাতা ও ঋণগ্রহিতার মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিই হচ্ছে বন্ড। এতে ঋণের পরিমাণ, পরিশোধের সময় ও সুদের হার উল্লেখ থাকে। প্রচলিত বন্ডে সুদ, ফাটকা ইত্যাদি থাকায় তা শরিয়াহসম্মত নয়। আর সুকুক হচ্ছে এমন একটি বিনিয়োগ সনদ, যাতে সম্পদের ওপর মালিকানা দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে। সাধারণত সুকুকধারীরা সম্পদের মালিকানা লাভ করেন এবং মুনাফা পান।

কেন সুকুক জনপ্রিয় করতে চায় সরকার?

অবকাঠামো খাতে সরকারের বিনিয়োগ প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব অত্যন্ত বেশি। যা বেসরকারি খাতের মাধ্যমে আশা করা যায় না। এ কাজ করতে যে ঘাটতি অর্থায়ন করতে হয়, সরকার এতদিন তা করে আসছে প্রচলিত ব্যাংক ও আর্থিক ব্যবস্থা থেকে। অবশ্য গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে সুকুক-এর কার্যক্রম।

এর আগে সুকুক-এর মাধ্যমে অর্থায়নের জন্য ৬৮টি প্রকল্পের তালিকা তৈরি করেছিল অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পের জন্য টাকা লাগবে ১২ হাজার কোটি। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার ৫টি, ৪০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকার ১২টি এবং ২০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ৪৬টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হয়।

দেশে ইসলামি ব্যাংকিং সেবাদাতা ব্যাংকগুলোর একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুদারাবা (মুনাফায় অংশীদারি), মুশারাকা (লাভ-লোকসান ভাগাভাগি), মুরাবাহা (লাভে বিক্রি), ইশতিসনা (পণ্য তৈরি), করজ হাসান (উত্তম ঋণ), সালাম (অগ্রিম ক্রয়) ও ইজারা (ভাড়া) সুকুক প্রচলিত আছে।

সুকুক ছাড়ার দিক থেকে বর্তমানে মালয়েশিয়া বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া বাহরাইন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রেও সুকুক প্রচলিত। মুসলিম দেশের পাশাপাশি অমুসলিম দেশেও এখন সুকুক চালু রয়েছে।

জানা গেছে, পুরো ব্যাংক ব্যবস্থায় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্ব প্রায় ২৫ শতাংশ। অথচ সরকারের ঘাটতি অর্থায়নে দেশে শরিয়াহভিত্তিক কোনও উপকরণ নেই। ফলে একদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অধিকতর নিরাপদ এ খাতে বিনিয়োগ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকছে, অন্যদিকে সরকার তার ঘাটতি অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ব্যবহার করতে পারছে না। ঘাটতি অর্থায়ন সুকুক-এর মাধ্যমে করা হলে সরকারের সুদের ব্যয়ও কমবে।

/এফএ/
সম্পর্কিত
বড় হচ্ছে ‘সুকুক’ বন্ডের বাজার
বাণিজ্যমেলায়  ইসলামি ব্যাংকের প্রিমিয়ার স্টল উদ্বোধন
অভিযোগের আঙুল শাখা ম্যানেজারের দিকেকৃষকের গম-ভুট্টা চাষের টাকা গেলো ব্যবসায়ীদের পকেটে
সর্বশেষ খবর
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
‘আমাদের জন্য যারা বেইমান, ভারতের তারা বন্ধু’
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
টানেলে অপারেশনাল কাজে গেলে টোল দিতে হবে না জরুরি যানবাহনকে
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি, সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী