চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বস্ত্র খাতে মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন খাতটির উদ্যোক্তারা। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও শ্রমিকদের বেতন দিতে ২ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ চান তারা।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো পৃথক চিঠিতে এই সহায়তা চেয়েছে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়াসহ বেশ কিছু দাবি সংবলিত চিঠি বুধবার (৩১ জুলাই) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মোহাম্মদ আলীকে দিয়েছে সংগঠনটি।
বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকনের সই করা চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ-বিষয়ক উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে।
চিঠিতে ক্ষতির বর্ণনায় বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে প্রায় দুই সপ্তাহের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে অধিকাংশ সময় বস্ত্র কারখানাগুলো বন্ধ ছিল। এতে রফতানি খাতের অনেক ক্ষতি হয়েছে। রফতানি আদেশ বাতিল হওয়া, উৎপাদন কমে যাওয়া, কারখানায় শ্রমিকদের অনুপস্থিতি ও কাঁচামাল সংকটে বস্ত্র কারখানার মালিকরা কঠিন সময় পার করছেন। এর মধ্যে শ্রমিকদের গত জুলাই মাসের বেতন পরিশোধের সময় এসে গেছে। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি বিশেষভাবে বিবেচনায় নিয়ে চলতি মাসের বেতন পরিশোধে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ সুদ হারে এক বছর মেয়াদে ব্যাংক ঋণ দেওয়া হলে কারখানাগুলোর পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। তা না হলে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ায় ব্যত্যয় হতে পারে।
একই সঙ্গে জুলাই মাসের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে একই হারে অর্থাৎ ২ শতাংশ হারে একই মেয়াদে ঋণ দেওয়া হলে বস্ত্র ও পোশাক খাতের মালিকরা উপকৃত হবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সহায়তার এই আবেদনকে প্রণোদনার আবেদন নয়, বরং ঋণ সহায়তা হিসেবেই চান তারা, যা ধারাবাহিকভাবে এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
বর্তমান সংকটের বাইরে আগে থেকে চলে আসা বস্ত্র খাতের সংকট তুলে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, কোভিড-১৯-পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার পর রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে সংকট তৈরি করেছে। এ কারণে ক্রমাগতভাবে বস্ত্র খাতের রফতানি আদেশ কমছে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কিছু কারণেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সংকট, প্রায় ২৫০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি, শ্রমিকদের ৭০ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি, ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধি, গৃহীত বিল পরিশোধ না হওয়া, চলতি পুঁজির ঘাটতি এবং তুলা ও অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে এলসি খুলতে ব্যাংকের অনীহা, সর্বোপরি নগদ সহায়তা কমানো– এসব কারণে রফতানি প্রবৃদ্ধি কমছে। এ কারণে শিল্পের উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিটিএমএর সদস্য মিলগুলো বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পের মধ্যে নিট খাতের প্রয়োজনীয় সুতার প্রায় ৯০ শতাংশ এবং ওভেন এ ৪৫ শতাংশ সরবরাহ করছে। এছাড়াও ডেনিম, হোম টেক্সটাইল ও টেরি টাওয়ালের শতভাগ দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রফতানি আয়ে ব্যাপক অবদান রাখছে।
স্বল্প সুদে ঋণের আবেদনের পাশাপাশি চলতি ঋণের কিস্তি স্থগিতের দাবি করেছে বিটিএমএ। এ সুবিধা চাওয়ার যুক্তি তুলে ধরে চিঠিতে বলা হয়, ক্রমাগত লোকসানে থাকা প্রচ্ছন্ন রফতানিমুখী ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের পক্ষে এখন মেয়াদি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা কঠিন। এ অবস্থায় সব মেয়াদি ঋণ আগামী ছয় মাসের জন্য সুদবিহীন করে কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখার দাবি করা হচ্ছে। ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে সরবরাহকৃত সুতা ও কাপড়ের বিপরীতে তৈরি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট এলসি (ঋণপত্র) প্রদানকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেসব বিল গ্রহণ করেছে, তা যথাসময়ে পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। এই বিলের অর্থ পাওয়া গেলে সদস্য কারখানাগুলো কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় চলতি পুঁজির সংকট থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাওয়া যাবে বলে চিঠিতে আশা করা হয়। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রেখে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প চালু রাখাই বিটিএমএর মূল লক্ষ্য।