X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষম বণ্টনের বাজেট প্রায় চূড়ান্ত

শফিকুল ইসলাম
২২ মে ২০১৬, ১১:৫৫আপডেট : ২২ মে ২০১৬, ১৭:১২


বাজেট-২০১৬-১৭ আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট হবে  উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষম বণ্টনের। এই স্লোগান সামনে রেখে প্রায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী হিসেবে ৮৩ বছর বয়সে দশমবারের মতো নতুন বাজেট পেশ করবেন।|
জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ কমবে। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাতে ২৫ হাজার কোটি টাকা রাখা হলেও নতুন অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রস্তাবিত বাজেটে তা কমিয়ে করা হচ্ছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রণোদনা খাতে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, নগদ ঋণ সহায়তা খাতে ৭ হাজার কোটি ও ভর্তুকি খাত বাবদ ৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। প্রণোদনার মধ্যে রয়েছে কৃষিতে ৯ হাজার কোটি টাকা, রফতানি খাতে ৩ হাজার কোটি টাকা এবং পাটজাত দ্রব্যে ৫০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি)ভর্তুকির জন্য প্রতিবছর একটি বিশাল পরিমাণের টাকা রাখা হলেও আগামী বাজেটে কোনও অর্থ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না বলে জানা গেছে। কারণ, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বলানি তেলের দাম কম।|
আগামী ২ জুন বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দশমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করবেন। যদিও শেখ হাসিনা সরকারের মোট তিন মেয়াদের ১৪তম বাজেট হবে এটি।
বরাবরের মতো এবারের বাজেটেও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এবারও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ভালো বরাদ্দ দিতে পারবো। অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ধরা হচ্ছে ১৯ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। এবার মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে বাজেট তৈরি করা হচ্ছে। ওই হিসেব অনুযায়ী নতুন বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৭৩৫ কোটি টাকা। এবার বাজেট ঘাটতি হবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে। যা কখনোই বিপদজনক হবে না। চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ছিল ৮০ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা (এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা)। অনুদানসহ হিসাব করলে এই বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ, তবে অনুদান ছাড়া ৫ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। এর মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ নেওয়া হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর স্বল্প মেয়াদী ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটের ঘাটতি পূরণে এ ঋণ নেওয়ার প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ২ ধরার কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা হতে পারে। আর বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হারের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের মূল ও বড় বিষয়গুলো অর্থমন্ত্রী মুহিত নিজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে বৈঠক করে অনুমোদন করিয়ে নিয়ে এসেছেন।

জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হতে পারে ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে মূসক থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৮০ হাজার কোটি টাকার মতো। কিন্তু তা আদায় নিয়ে ইতোমধ্যেই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই মূসক আইন সংশোধনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে।

আর বাজেট ঘাটতি থাকছে ৯৭ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা, যা বরাবরের মতোই জিডিপির ৫ শতাংশেরও কম।

নতুন অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থাকছে ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার। তবে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন বরাদ্দসহ এর পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। যা আগেই এনইসিতে অনুমোদন করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ ২৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা এবং স্বল্প মেয়াদী ঋণ ১৪ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা।

তার আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যদিও সরকার ওই বছর ব্যাংক খাত থেকে প্রকৃতপক্ষে ঋণ নেয় ৩১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা।

দশমবারের মতো বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সংরক্ষণে মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে সম্মানি ভাতার হার বৃদ্ধি, চিকিৎসা ও রেশন প্রদান, সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ, বিশেষ ক্ষেত্রে ভিআইপি মর্যাদা প্রদান করা হচ্ছে। আসন্ন বাজেটেও মুক্তিযোদ্ধাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
তবে এখনও শিক্ষার পর পরই পরিবহন ও জ্বালানি খাত বেশি বরাদ্দ পাচ্ছে। কারণ এ দুটি খাতই ভেরি ডিস্টার্ব (খুব সমস্যা) বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী নিজে। নতুন পে-স্কেলে সরকারি চাকরিজীবীরা চলতি অর্থবছরে শুধু বর্ধিত বেতন পেয়েছেন। আগামী অর্থবছরের শুরুর প্রথমদিন ১ জুলাই থেকে নতুন হারে ভাতা পাবেন। ফলে আগামী অর্থবছরে ৮ম পে-স্কেল পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে। নতুন পে- স্কেলে বেতন বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতার পরিমাণও বাড়বে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মোট বাজেট বরাদ্দের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। আর কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২২ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। উভয়ের জন্য ভাতা বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা পরিশোধে খরচ হচ্ছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। তাই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা বাবদ খরচ হবে বাজেটের ২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের ১৯ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটের আকার বাড়ার কারণে মোট বরাদ্দের শতকরা হারে তেমন কোনও পরিবর্তন হয়নি।

জানা গেছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকারের ২২টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অধীনে বর্তমান ১৪৫টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর বেশির ভাগ প্রকল্পই সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশু, খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে। জাতীয় বাজেটের ১০ শতাংশ অর্থ এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। চলতি অর্থবছরে এ খাতে সর্বমোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আসন্ন ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে গঠন করা হবে ‘সোস্যাল প্রটেকশন ইউনিট’। এর অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ৫০ লাখ উপকারভোগীকে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এতে কমবে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা। উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হবে। একইসঙ্গে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হবে। এই কর্মসূচির আওতায় বাজেটে হিজড়া, দলিত হরিজন, বেদে শ্রেণি, দরিদ্র ক্যানসার রোগী ও চা-শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়া হবে।

জানা গেছে, এই কর্মসূচির আওতায় বর্তমানের তুলনায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে। যদিও চলতি বাজেটে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৭ লাখ ২৩ হাজার হতে বৃদ্ধি করে ৩০ লাখে, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলা ভাতাভোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ১২ হতে বৃদ্ধি করে ১১ লাখ ১৩ হাজারে, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪ লাখ হতে ৬ লাখে, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী উপবৃত্তির সংখ্যা ৫০ হাজার হতে বৃদ্ধি করে ৬০ হাজার জনে, দরিদ্র মায়ের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগীর সংখ্যা এবং কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদারদের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে।

আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন নিয়ে দিকনির্দেশনা থাকবে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায়। ইতোমধ্যেই এ বিষয়টি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ, হতাশা ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ীরা অর্থমন্ত্রী ও বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপর পুরোপুরি ভরসা করতে না পেরে তারা বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন।

আরও পড়ুন:

উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষম বণ্টনের বাজেট প্রায় চূড়ান্ত  সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিশেষ অগ্রাধিকার পেলো তথ্যপ্রযুক্তি খাত

উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সুষম বণ্টনের বাজেট প্রায় চূড়ান্ত দেশে হতাশাগ্রস্ত শিক্ষিত বেকার অর্ধকোটি

/এসআই/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
ডিবি পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ গেলো ব্যবসায়ীর
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
ভুয়া মৃত সনদ নিজেই তৈরি করতো মিল্টন: হারুন অর রশীদ
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি