X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি চার ব্যাংক

গোলাম মওলা
২০ জুন ২০১৬, ১৯:৫৮আপডেট : ২১ জুন ২০১৬, ১২:৫০

রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ১৯ প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকারি মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি। এর ফলে মন্দ ঋণের কবলে পড়েছে ওই চার ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপির প্রায় শতভাগই এখন মন্দ ঋণ। এ মন্দ ঋণের বিপরীতে ব্যাংক চারটিকে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। আর প্রভিশন সংরক্ষণ করতে গিয়ে লোকসান বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ১৯টি সংস্থার কাছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের পাওনার পরিমাণ ২৭ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওনা রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কাছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারি সংস্থাগুলোর বিপুল অংকের ঋণের ভারে দাঁড়াতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। একই কারণে বেসরকারি খাত এই ব্যাংকগুলো থেকে প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছে না। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বিনিয়োগে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর আবু আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের দক্ষতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় এখনও লোকসান গুনতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একদিকে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে, অন্যদিকে রাষ্ট্র্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় দিন দিন বাড়ছে।’

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬ এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছিল ৪ হাজার ৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ৩ হাজার ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ৯০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (বিওজিএমসি) ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। গত বছর সংস্থাটি ১ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। আগের বছরে ঋণ ছিল ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা।

আর্থিক সংকট মেটাতে ব্যাংকগুলো থেকে ১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কাছে ব্যাংকগুলোর পাওনা ১ হাজার ২৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) সরকারি এই ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ৬২৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিসি) ঋণের বোঝা আগের বছরের ৩০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৩৯৮ কোটি টাকা হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা আগের বছরের ৭১ কোটি টাকা থেকে ঋণের বোঝা বেড়ে হয়েছে ৩০১ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ২৬৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) ২৬২ কোটি, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিটিবি) ৫২ কোটি (খেলাপি সাড়ে ১০), ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ৪৫ কোটি (খেলাপি ১১ কোটি), বাংলাদেশ বস্ত্রশিল্প করপোরেশন (বিটিএমসি) মোট ঋণ ও খেলাপি ঋণ ২৬ কোটি, বাংলাদেশ সমুদ্র পরিবহন করপোরেশন (বিএসসি) ২৩ কোটি, বাংলাদেশ চলচিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) ৩ কোটি, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) দেড় কোটি এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ৬২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের টাকা পরিশোধ না করায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গেল মার্চ শেষে সোনালী ব্যাংকের ৮ হাজার ২৭২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ৭ হাজার ৩৪২ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ, যা মোট খেলাপি ঋণের ৮৯ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের ৯২ শতাংশই মন্দ ঋণ। গত মার্চ শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১৫৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৪৬৬ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের ৪ হাজার ২৮৩ কোটি টাকাই মন্দ ঋণ। এ হিসাবে ব্যাংকটির মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৮৯ শতাংশ। জনতা ব্যাংকে মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৫১ শতাংশ।

মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রভিশন সংরক্ষণের হার বেড়ে গেছে। এতে চার ব্যাংকের মধ্যে তিনটিরই ইতোমধ্যে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে, সোনালী ব্যাংকের মার্চ প্রান্তিকে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে ১ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির ৫ হাজার ১৫২ কোটি টাকার প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাংকটি প্রভিশন সংরক্ষণ করেছে ৩ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা।

জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে ২৩১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ২ হাজার ২৮৬ কোটি টাকার প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু মার্চ শেষে ব্যাংকটি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ২ হাজার ৫৫ কোটি টাকা।


/এমএসএম/এজে

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
রাফাহতে ইসরায়েলি হামলা ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটদের চাপের মুখে বাইডেন
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতায় নিরুৎসাহের কারণ ব্যাখ্যা করলেন শেখ হাসিনা
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতায় নিরুৎসাহের কারণ ব্যাখ্যা করলেন শেখ হাসিনা
জাল সনদে টেলিটকে চাকরি, পদন্নোতির সময় ধরা ৪ কর্মকর্তা
জাল সনদে টেলিটকে চাকরি, পদন্নোতির সময় ধরা ৪ কর্মকর্তা
পর্দায় বহাল থাকছে বাদ পড়া ‘ওমর’ ও ‘রাজকুমার’
পর্দায় বহাল থাকছে বাদ পড়া ‘ওমর’ ও ‘রাজকুমার’
সর্বাধিক পঠিত
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
শিশু ঝুমুরকে ধর্ষণ ও হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে চোখ মুছলেন র‌্যাব কর্মকর্তা
মিল্টন সমাদ্দার আটক
মিল্টন সমাদ্দার আটক
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
আজও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে, পথচারীদের জন্য শরবত-পানির ব্যবস্থা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
একজন অপরাধীর গল্প বলতে চেয়েছিলেন তিশা
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি