X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রম আইন সংশোধনের উদ্যোগ ইইউ ও আইএলওকে জানিয়েছে সরকার

শফিকুল ইসলাম
৩০ অক্টোবর ২০১৭, ২২:১৭আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০১৭, ২২:২৫

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যমান শ্রম আইন ও ইপিজেড শ্রম আইনটি সংশোধনে সরকারের উদ্যোগের বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলওকে জানানো হয়েছে। সোমবার বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে ঢাকায় কর্মরত ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) দুই কর্মকর্তাকে এই উদ্যোগের বিষয়টি জানানো হয়েছে। বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক (চুন্নু), বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, শ্রম পরিদফতরের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ওই বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি মি. কনস্টানটিনোস ভারডিকস, বাংলাদেশে নিযুক্ত আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. শ্রীনিবাস বি রেড্ডি এবং আইএলও  প্রোগ্রাম অফিসার মি. সাইদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

চলতি বছরের জুন মাসে ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ওই সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের এ দুটি আইন আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়―এমন অভিযোগ তুলে আইন দুটি সংশোধনের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে ইভিএ’র (এভরিথিং বাট আর্মস) আওতায় বাংলাদেশকে দেওয়া জিএসপি সুবিধা পর্যালোচনার বিষয়ে শ্রম সম্মেলনে এজেন্ডায় স্পেশাল প্যারা-৪ উপস্থাপন করে। এ পরিস্থিতিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরামর্শ অনুযায়ী বিদ্যমান শ্রম আইন ও ইপিজেড শ্রম আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং এর জন্য সময় প্রার্থনা করেন। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে শ্রম সম্মেলনে উপস্থাপিত স্পেশাল প্যারা-৪ প্রত্যাহার করে নেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

এরই ধারাবাহিকতায় সরকার রবিবার (২৯ অক্টোবর) ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রচলিত এ দুটি আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। উদ্যোগের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে আজ (৩০ অক্টোবর) সোমবার ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি মি. কনস্টানটিনোস ভারডিকস, আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. শ্রীনিবাস বি রেড্ডি এবং আইএলও প্রোগ্রাম অফিসার সাইদুল ইসলামকে অবহিত করা হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ওই সম্মেলনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন স্পেশাল প্যারা-৪ এর এজেন্ডা প্রত্যাহার করে না নিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর বাজারে বাংলাদেশের পণ্য বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে পাওয়া জিএসপি সুবিধা স্থগিত হয়ে যেতে পারতো। 

বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইন মন্ত্রণালয় এ দুটি আইন সংশোধনের খসড়া তৈরির পর তা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলওতে পাঠানো হবে। আইএলও থেকে ওই খসড়া অনুমোদন হয়ে এলে চূড়ান্তভাবে এ দুটি আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করবে সরকার। 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলও  বাংলাদেশকে যে তিনটি পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো হচ্ছে: 

১. বাংলাদেশের প্রচলিত শ্রম আইন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও ) মান অনুযায়ী হতে হবে। আইএলও-র আইনে বলা আছে,  কোনও কারখানায় কর্মরত ১০ শতাংশ শ্রমিক লিখিতভাবে আবেদন করলেই শ্রম সংগঠন করার অনুমতি পাবে। তবে বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ নয়, ৩০ শতাংশ শ্রমিকের লিখিত আবেদন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি বাংলাদেশকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছে আইএলও।

তবে বাংলাদেশ এক্ষেত্রে নমনীয় হয়ে সংশোধনী আনতে রাজি হলেও এক ধাপে ৩০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে রাজি নয়। বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইএলওকে জানিয়ে দেওয়ার পক্ষে নীতিগত সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার।

২. বাংলাদেশের ইপিজেড শ্রম আইনটিও আইএলও’র মান অনুযায়ী করার পরামর্শ এসেছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। এ আইনটিতে আইএলও’র আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বা অতিরিক্ত জুড়ে দেওয়া ধারাগুলো প্রত্যাহারের সুপারিশ আমলে নিয়েছে সরকার।

৩. শ্রম সংগঠনগুলো গঠনের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন পেতে হয়রানি না করা এবং এ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছে আইএলও। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ইইউ ও আইএলও প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশে যে কোনও কারখানায় শ্রম সংগঠন গঠনের ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা রয়েছে।

প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী, কারখানার ৩০ শতাংশ শ্রমিক লিখিতভাবে আবেদন করলে যাচাই বাছাই শেষে শ্রম পরিদর্শকের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী শ্রম সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কাউকেই হয়রানি করা হয় না। কোনও ধরনের জটিলতাও নাই। অনলাইনেও শ্রম সংগঠনের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে এখন কেউ কোনও অভিযোগ করতে পারবে না বলেও জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। 

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন,  বাংলাদেশ এ বছর ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করেছে। এর ৫৫ শতাংশই রফতানি করা হয়েছে ইইউভুক্ত দেশসমূহে। ইইউ বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরামর্শগুলো আমরা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

/এসআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় হামাস যোদ্ধাসহ ৫ ফিলিস্তিনি নিহত
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় হামাস যোদ্ধাসহ ৫ ফিলিস্তিনি নিহত
তারেক রহমানের এপিএসসহ ৭ জনের অভিযোগ গঠন শুনানি অব্যাহত
তারেক রহমানের এপিএসসহ ৭ জনের অভিযোগ গঠন শুনানি অব্যাহত
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
কোরিওগ্রাফার ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৩ মে
কোরিওগ্রাফার ইভানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৩ মে
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি