X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চার হাজার মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন গলার কাঁটা!

সঞ্চিতা সীতু
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৮:০৮আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:২৫





বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চার হাজার মেগাওয়াটের কেন্দ্র এখন বিদ্যুৎ বিভাগের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীত আর গ্রীষ্মে উৎপাদন-বণ্টন ভারসাম্য সৃষ্টি না হওয়ায় এ সংকট তৈরি হয়েছে। তবে এ ব্যর্থতার দায় চাপছে সাধারণ মানুষের কাঁধে। খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ যে প্রতিবেদন তৈরি করেছে, তাতে বলা হচ্ছে, এই চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, দেশের গ্রিডভুক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৭ হাজার ৯৬৫ মেগাওয়াট। তবে বয়সের কারণে কোনও কোনও কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। যাতে দেশের প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪২২ মেগাওয়াট।
সোমবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৭ হাজার ৪৮৩ মেগাওয়াট, আর রাতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় উৎপাদন করা হয় ৮ হাজার ৭৬৩ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এই পরিমাণ কেন্দ্র চালানোর পর আর বিদ্যুতের প্রয়োজন হচ্ছে না, সব কেন্দ্র শীতে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বিদ্যুৎ বিভাগের তৈরি প্রতিবেদন সম্পর্কে জানান, সংস্কার, জ্বালানি, সংকট নানা কারণে কেন্দ্র বন্ধ থাকতে পারে। এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। তবে এসব কারণ সমন্বয় করেও আমরা মনে করছি, দেশে এখন শীতের সময় চার হাজার মেগাওয়াট কেন্দ্রকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। যা বিদ্যুতের দামে বাড়তি চাপ তৈরি করছে। সরকার লোকসান গুণছে। এই লোকসানের দায় কোনও একপর্যায়ে সাধারণ গ্রাহকের ওপর বর্তাবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে চার হাজার মেগাওয়াটের কুলিং লোড রয়েছে। যা শীতের সময় একেবারে দরকার নেই। আবার গ্রীষ্মে যা দরকার। বছরে শীতে লোড বৃদ্ধির পরিমাণ সামান্য। এতে করে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বসিয়ে রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শীতে কোনও কোনও সময় বিদ্যুতের চাহিদা চার হাজার মেগাওয়াটের নিচে নেমে যায়। তখন আরও বেশি কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়।
এ বিষয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, ‘এখন আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, চার হাজার মেগাওয়াটের এই লোড ম্যানেজ করা। শীতের সময় এসব কেন্দ্রকে বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। রাত ১১টার পর অফ পিক আওয়ারে বিদ্যুতের চাহিদা একেবারে কমে যায়। তখন কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হয়।’ শিল্পে ওই সময় গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে এ সমস্যা দূর হবে বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপরিকল্পিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে এই চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এখন গলার কাঁটার মতোই মনে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে। বর্তমানে ১৪২টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৭৮টি কেন্দ্র বসে আছে। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র বসে আছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করার সময়ই চিন্তা করা উচিত ছিল যে, শীতে আমাদের এতগুলো বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হবে। এই কেন্দ্রগুলো আবার বেসরকারিখাতে বানানোর ফলে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে প্রতিদিনই। এইখাত পরিকল্পিতভাবে এগুচ্ছে না। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেই উন্নয়ন হয় না। বিদ্যুৎখাতের উন্নয়নের যে মানদণ্ড তার সঙ্গে আমরা যা করছি, তার সঙ্গে সমন্বয়হীন। নীতিনির্ধারক, পরিকল্পনাকারী ও এইখাতের উপর মহলকে আগে চিন্তা করা দরকার।’
শামসুল আলম আরও বলেন, ‘এইগুলো অনুধাবন না করে উৎপাদনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সঞ্চালন লাইন করে ফেললাম, বিতরণ লাইন বানালাম, আর উন্নয়ন হয়ে গেলো, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। এভাবে উন্নয়ন হয় না। একবছরে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। এটি কোনও মানসম্মত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা হতে পারে না। একদিকে ভর্তুকি দিচ্ছি, আর অন্যদিকে ৭৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখেছি। আবার ২০১৮ সালে জরুরি ভিত্তিতে গ্রীষ্মে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো একটির সঙ্গে অন্যটি কনফ্লিক্ট করছে। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে, পেশাদার ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা দিতে হবে।’

/আইএ/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ