X
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

এখনও আছে ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার

গোলাম মওলা
০২ মে ২০২০, ১৮:৫৯আপডেট : ০৩ মে ২০২০, ০৪:৩৯

তৈরি পোশাক খাত

তৈরি পোশাকের রফতানি আদেশ (অর্ডার) ধরে রাখতে সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ এলাকায় ধীরে ধীরে গার্মেন্ট কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। গার্মেন্ট মালিকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সব কারখানা খুলে দিতে চান তারা। তবে যেসব কারখানার অর্ডার বাতিল হয়েছে, সেসব কারখানা হয়তো নাও খুলতে পারে।
এ ব্যাপারে  তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শ্রমিকদের মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া রাখা হয়েছে শরীরের তাপমাত্রা মাপা, জীবাণুনাশক দিয়ে জুতা পরিষ্কার, হাত ধোয়াসহ নানা ব্যবস্থা।

কেন খোলা হচ্ছে কারখানা?

প্রতি বছর তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করে ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রফতানি করে ৩৪ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪১৩ কোটি) ডলার আয় হয়েছিল। এই অর্থবছরে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৮২০ কোটি) ডলার। এর মধ্যে বিদেশি ক্রেতারা ৮ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আদেশ বাতিল করলেও অধিকাংশ আদেশ এখনও বহাল আছে। কারখানার মালিকরা মনে করছেন, সময়মতো এসব অর্ডারের পণ্য সরবরাহ করতে না পারলে বাংলাদেশ থেকে অর্ডার চিরদিনের জন্য হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

পুরনো অর্ডার আছে অন্তত ৪ বিলিয়ন ডলার

পুরনো অন্তত ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার যাতে হাতছাড়া না হয়, সেজন্য সব কারখানা খুলতে হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যেসব অর্ডার এখনও বহাল আছে, সেগুলো ঠিক রাখতে কারখানা চালু করা হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, প্রতি মাসে গড়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার থাকে। এপ্রিল, মে, জুন ও জুলাই এই চার মাসের অর্ডার থাকার কথা ১২ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৮ বিলিয়ন ডলার বাতিল হয়েছে। বাকি ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার এখনও আছে। এই অর্ডার বাঁচানোর লক্ষ্যেই কারখানাগুলো খোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্রেতাদের হাতে রাখতে হলে কারখানা খুলতে হবে। তার মতে, যদি একবার ক্রেতা হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে আর ফেরানো যায় না।

এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এমনিতেই অর্ডার বাতিল হচ্ছে, যেসব অর্ডার এখনও বহাল আছে, সেগুলোও যদি বাতিল হয়ে যায় তাহলে চিরদিনের জন্য অর্ডার হাতছাড়া হয়ে যাবে। তাতে করে দেশের অর্থনীতি আর দাঁড়াতে পারবে না।  তিনি বলেন, এই করোনা মহামারির শেষ কবে তা কেউ বলতে পারছে না। এই আপৎকালীন মুহূর্তে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে আস্তে আস্তে শিল্প খুলে দেওয়া হচ্ছে। মূলত শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তা ও শিল্পের কথা চিন্তা করেই সরকার-ব্যবসায়ীরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান তিনি।

৮ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় ৮ বিলিয়ন  ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ’র ১১৫০ কারখানার ৩ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়েছে। বাকি অর্ডারগুলো বাতিল হয়েছে বিকেএমইএ’র মালিকদের কারখানায়।

নতুন অর্ডারের সম্ভাবনা

করোনা চলাকালীন সময়ে নতুন অর্ডার সেভাবে আসেনি। তবে কারখানা চালু হলে নতুন অর্ডার আসা শুরু হতে পারে বলে জানান বিকেএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তিনি বলেন, গত এপ্রিল থেকে আগামী জুলাই পর্যন্ত অন্তত ৪ বিলিয়ন ডলারের অর্ডার আছে। সেই অর্ডার অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করতে পারলে একদিকে ক্রেতা হাতে থাকবে, অন্যদিকে আরও নতুন নতুন অর্ডার আসবে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র মুখপাত্র কামরুল আলম বলেন, এখন নতুন অর্ডার না আসলেও বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ক্রেতারা তাদের অফিস খোলা শুরু করেছেন। কিছু কিছু ক্রেতার কাছ থেকে পণ্য তৈরির ইনকোয়ারি আসছে। যেমন জার্মানি থেকে কিছু কিছু ইনকোয়ারি এসেছে। ইতালি থেকেও এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে হয়তো শিগগিরই ইনকোয়ারি পাঠাবে।

খোলা আছে কত কারখানা

বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর হিসেবে ২ মে পর্যন্ত অর্ধেক কারখানা খুলেছে। বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যাদের হাতে কাজ নেই তারা ছাড়া সব কারখানাই ঈদের আগে খোলা হবে। তিনি বলেন, ২ মে পর্যন্ত বিকেএমইএ’র ২৯২টি কারখানা খুলেছে। ঈদের আগে  আরও দুইশসহ মোট শ’ পাঁচেক কারখানা খুলবে। এদিকে বিজিএমইএ’র মুখপাত্র কামরুল আলম বলেন, ১ মে’র আগ পর্যন্ত বিজিএমইএর এক হাজার ৬১ কারখানা খোলা। ৫ মে’র মধ্যে ২ হাজারের বেশি কারখানা খোলা হতে পারে। তবে বিজিএমইএ’র সদস্য নন এমন কারখানাসহ সারাদেশে অন্তত চার হাজার কারখানা খোলা আছে বলে একটি সূত্র দাবি করেছে। বিজিএমইএ’র সূত্র বলছে, সদস্যদের মধ্যে সরাসরি রফতানিকারক ২ হাজার ২৭৪টি কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন ২৪ লাখ ৩৫ হাজার শ্রমিক। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩৮ হাজার শ্রমিক বর্তমানে কাজ করছেন।

সব কারখানা খোলার প্রস্তুতি

ঈদের আগে যাতে অধিকাংশ কারখানা খোলা যায়, সে ব্যাপারে কারখানার মালিকদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ’র মুখপাত্র কামরুল আলম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রত্যেক কারখানা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু করতে পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।  তিনি বলেন, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, আইএলও এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। এছাড়া শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি শ্রমিককে সুরক্ষা দিতে কারখানাগুলোকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। একই সঙ্গে কারখানাগুলো নির্দেশনা মানছে কিনা তা তদারকি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনও শ্রমিক যাতে করোনায় আক্রান্ত না হয়, সেজন্য আগে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর যদি কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েও পড়ে, সেক্ষেত্রে শ্রমিকদের চিকিৎসা ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্য  মালিকদের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা নেওয়া আছে। বিজিএমইএ থেকে মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া আছে।

তিনি বলেন, আরও যদি কিছু করার দরকার হয়, বিজিএমইএ সেটাও করবে। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবে। এজন্য সব কারখানাকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানছে কিনা, সেটি তদারক করতে প্রতিদিনই কিছু কারখানা পরিদর্শন করে বিজিএমইএ’র বেশ কয়েকটি দল। মনিটরিং টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।

তবে অনেক কারখানা পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নির্দেশনার চেয়ে বেশি সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া ধাপে ধাপে কারখানা খোলার কথা থাকলেও সেটি অমান্য করে তাদের অনেকে আগেভাগেই উৎপাদন শুরু করেছে।  আবার দূরদূরান্ত গ্রামগঞ্জ থেকে শ্রমিক আনার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানেননি অনেক পোশাক শিল্পের মালিক। আবার ধাপে ধাপে শ্রমিক বাড়ানোর নির্দেশনা থাকলেও সেটি অনেক ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না। একইভাবে কারখানায় আসা-যাওয়ার পথেও একই সমস্যা হচ্ছে।

যে কারণে দেশের চিকিৎসকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষজন গার্মেন্ট কারখানা খোলার সমালোচনা করছেন। তারা মনে করছেন, কারখানা সব খুলে দেওয়া হলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বিপজ্জনকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেবিচকের মেম্বার সিকিউরিটিকে বাহিনীতে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
বেবিচকের মেম্বার সিকিউরিটিকে বাহিনীতে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
বদলি হজ কী, নারী কি পুরুষের বদলি হজ আদায় করতে পারবে?
বদলি হজ কী, নারী কি পুরুষের বদলি হজ আদায় করতে পারবে?
সাদকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা
সাদকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা
তৃতীয় দিনের মতো যমুনার সামনে জবির আন্দোলনকারীরা
তৃতীয় দিনের মতো যমুনার সামনে জবির আন্দোলনকারীরা
সর্বাধিক পঠিত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক করে জরুরি নির্দেশনা মাউশির
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সতর্ক করে জরুরি নির্দেশনা মাউশির
কমলো স্বর্ণের দাম, কার্যকর শুক্রবার থেকে
কমলো স্বর্ণের দাম, কার্যকর শুক্রবার থেকে
ফ্যাক্টরি পোড়ানোর হুমকি দেওয়া সেই বিএনপি নেতাকে বিমানবন্দর থেকে আটক
ফ্যাক্টরি পোড়ানোর হুমকি দেওয়া সেই বিএনপি নেতাকে বিমানবন্দর থেকে আটক
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ অনুমোদন
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশ অনুমোদন
বাংলাদেশসহ ৫ রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশের অনুষ্ঠান স্থগিত করলো ভারত
বাংলাদেশসহ ৫ রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশের অনুষ্ঠান স্থগিত করলো ভারত