X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

হঠাৎ কেন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল?

সঞ্চিতা সীতু
১৮ জুন ২০২০, ১২:০৮আপডেট : ২০ জুন ২০২০, ২৩:০৯

বিদ্যুৎ বিল

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা মোয়াজ্জেম হোসেন গত ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ বিল দিয়েছিলেন ৪২৮ টাকা। এরপর মার্চ-এপ্রিল এবং মে, এই তিন মাসে বিল এসেছে দুই হাজার ৬৯৯ টাকা। ফেব্রুয়ারির সঙ্গে সমন্বয় করলে এই তিন মাসে বিল বেশি এসেছে এক হাজার ৪১৫ টাকা।  সমাজের একেবারে প্রান্তিক বাসিন্দা মোয়াজ্জেম ফেব্রুয়ারিতে ব্যবহার করেছেন ৭২ ইউনিট। গত তিন মাসে একসঙ্গে ২১৬ ইউনিটের বিল করা হয়েছে। অর্থাৎ সেখানেও ব্যবহারের পরিমাণ ৭২ ইউনিট করেই। এরপরও এতটা হেরফের কেন? এই প্রশ্ন মোয়াজ্জেমের।

তিনি বলেন, ‘ছোট একটি চাকরির পাশাপাশি স্কুলের পাশে একটি ছোট দোকানে বসতাম। কিন্তু স্কুল বন্ধ থাকায় দোকানও বন্ধ। চাকরির অবস্থাও নড়বড়ে। নানা কারণে সব অফিসেই সংকট। এই পরিস্থিতিতে আমি নিজে কীভাবে আছি সেটাতো আমি নিজে ছাড়া আর কেউ জানে না। আমি তো সাহায্য চাচ্ছি না। কিন্তু মহামারির মধ্যে যে সুবিবেচনা করা দরকার, তাওতো করা হচ্ছে না।’

শুধু মোয়াজ্জেম নন, গত তিন মাসের বাড়তি বিলের এই ধকল পোহাতে হচ্ছে অনেককেই। যারা বিত্তবান, তাদের সংকট না হলেও বিপাকে পড়েছেন মোয়াজ্জেমের মতো আর্থিক টানাপড়েনে থাকা মানুষেরা। মোয়াজ্জেম হোসেনের মতো তাদের কাছেও যে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, মানুষের কি টাকা বেশি হয়ে গেছে যে মাসের পর মাস অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দিচ্ছে বিতরণ কোম্পানি?

করোনার প্রকোপে শহরে ব্যবসা নেই। অনেকে চাকরি থেকে ঠিকঠাক বেতনও পাচ্ছেন না। কিন্তু এরমধ্যেই এই ‘অসঙ্গত’ তৎপরতা ‍শুরু করেছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি। ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত বিল আদায় করা হচ্ছে। সেটি একমাসের নয়, মাসের পর মাস চলছে এই নৈরাজ্য আর গাফিলতি। মানুষের এসব অভিযোগ গেছে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর কান পর্যন্ত। বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে বিল ঠিক করে নিতে বলেছেন তিনি। আর কেউ ঠিক না করে দিলে সরাসরি তাকে মেইল করতে বলেছেন। তিনি সাম্প্রতিক এক সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের অতিরিক্ত বিলের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন। তবে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই অতিরিক্ত বিল করেছে তাদের বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং মন্ত্রণালয় দায় দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ায় তারাও বাড়তি বিল আদায় করেই চলেছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভুল করবেন যিনি ঠিক করবেন তিনি। কিন্তু এক্ষেত্রে ভুল যদি বিদ্যুৎ অফিস করে তাহলে এই বিল ঠিক করতে কেন গ্রাহককে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হবে। আর এসব অন্যায় যাদের দেখার কথা সেই এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন যেন মুখে কুলুপ এঁটেছে। এর মধ্যে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এসব অভিযোগ করলেও তারা যেন কিছুতেই পাত্তাই দিচ্ছে না।

বিদ্যুৎ বিলের ভোগান্তি তুলে ধরে আদাবরের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, ‘লুটেপুটে খাওয়ার আরেক উৎসের নাম বিদ্যুৎ বিল। যেখানে ফেব্রুয়ারি মাসের বিল পর্যন্ত ৩১৮ টাকা পরিশোধ করেছি, মার্চ আর এপ্রিল দুই মাসের জন্য ১০৫৮ টাকা পরিশোধ করেছি, সেখানে শুধু মে মাসের বিল এসেছে ১৫৫৪ টাকা।’

দারুসসালাম রোড থেকে আব্দুল জব্বার জানান, তিনি বাসায় গত দুই মাস ধরে একাই থাকেন। ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহার কম হয়। কিন্তু প্রথম দুই মাসের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিল এসেছে মে মাসে।

একই অভিযোগ করেন মানিকনগরের গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, ‘স্থানীয় অফিসে কথা বলেছি। তারা এখন বিল দিয়ে দিতে বলেছেন, পরে নাকি এডজাস্ট করবে। কিন্তু এইভাবে যদি সবার কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা বিল আদায় করা হয় তাহলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে। আর সবাই কি আসলেই এই অতিরিক্ত বিল দিতে পারবে? এসব বিষয় বিবেচনা করা দরকার। দ্রুত সমাধান করা উচিত। এইভাবে গ্রাহকদের হয়রানি করার কোনও মানে নাই।’

একই ধরনের অভিযোগ করছেন বনশ্রীর বাসিন্দা আব্দুল হাকিম। তিনি জানান, তার বিল আসে তিন থেকে চার হাজার টাকা। মে মাসে তার বিল এসেছে ৮ হাজার টাকা। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকের একটা বাজেট আছে। দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল বললেই তো দিয়ে দেওয়া যায় না। আবার ঘোষণা দিয়েছে জুনের মধ্যে সব বিল পরিশোধ করতে হবে। এত বাড়তি বিল আমরা কেন দেবো। এই স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ হওয়া দরকার।’

এদিকে আবার অনেকে অভিযোগ করেছেন, বিকাশে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার পরও পরের মাসে বকেয়া বিলসহ যুক্ত করে বিল এসেছে। এখন এইসব সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে সেটাই প্রশ্ন।

গ্রাহকদের এমন অভিযোগের পর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছে, করোনা পরবর্তী সময়ে এই বিল সমন্বয় করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘বিল আসলে বেশি আসছে না। আগের দুই মাস রিডিং নেওয়া হয়নি। এইবার রিডিং নিয়ে আগের দুই মাস বাদ দিয়ে বিল করায় অনেকেরই মনে হচ্ছে বিল বেশি এসেছে। এরপরও কারও যদি কোনও বিলের অভিযোগ থাকে উনি তার স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে জানাতে পারেন। ভুল থাকলে ঠিক করে দেওয়া হবে। আমরা কোনও অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তার সমাধান করার চেষ্টা করছি।’

/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউল্যাবে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
ইউল্যাবে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী উদযাপন
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে ডাকসু নির্বাচন কমিশনের বৈঠক
এভিয়েশন সিকিউরিটির নতুন ইউনিফর্ম উদ্বোধন
এভিয়েশন সিকিউরিটির নতুন ইউনিফর্ম উদ্বোধন
এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ ইসলাম
এক দলকে সরিয়ে আরেক দলকে বসানোর জন্য কেউ রক্ত দেয়নি: নাহিদ ইসলাম
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আরও ১১ ব্যাংকের সম্পদ যাচাই করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট
আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট