মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তাধীন থাকায় এনসিসি ব্যাংকের এমডি হিসেবে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের পুনর্নিয়োগ পুনঃবিবেচনার আবেদনও নাকচ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার (৩ আগস্ট) বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি ওই ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে এনসিসি ব্যাংককে বিদায় জানাতেই হলো মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে। গত ৩০ জুলাই ছিল তার প্রথম মেয়াদের শেষ দিন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এতথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মোসলেহ উদ্দিন আহমেদের বিষয় যেহেতু তদন্তাধীন আছে, এ সংক্রান্ত তদন্ত রিপোর্ট এবং চূড়ান্ত ফলাফল বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে এসে না পৌঁছানোয় এ পর্যায়ে আর নিয়োগ দেওয়া গেলো না।
প্রসঙ্গত, যমুনা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) পদ থেকে ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এনসিসি ব্যাংকে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) পদে যোগ দেন মোসলেহ উদ্দিন। ২০১৭ সালের জুলাইতে তিনি এমডির দায়িত্ব পান। গত জুলাইয়ের শুরুতে মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে এনসিসি ব্যাংকের এমডি হিসেবে পুনঃনিয়োগের অনুমোদন দেয় ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক তার পুনঃনিয়োগ আটকে দেয়।
জানা গেছে, গত বছরের এপ্রিলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে মোসলেহ উদ্দিন ও তার স্ত্রীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৪টি ব্যাংক হিসাব, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছয়টি মেয়াদি আমানত, সীমাতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এবং শেয়ারবাজারে চারটি বিও হিসাব পরিচালিত হওয়ার তথ্য পায় বিএফআইইউ। এতে মোট ৩৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা (মার্কিন ডলার বাদে) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য উদ্ঘাটিত হয়।
বিএফআইইউর পর্যালোচনায় বলা হয়, মোসলেহ উদ্দিন কয়েকটি ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় নৈতিকস্খলন, ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর ২(শ)(১) এবং ২(শ)(১৯)-এ বর্ণিত অপরাধ। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শেয়ারবাজারে হিসাব খোলার সময় তিনি অর্থের উৎস সম্পর্কে অসত্য তথ্য দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ জমা ও বিনিয়োগ করেছেন, যা মানি লন্ডারিংয়ের ভাষায় প্লেসমেন্ট হিসেবেও পরিগণিত।
এছাড়াও তিনি সঞ্চয়পত্র ক্রয় বিধিমালার সর্বোচ্চ সীমা একের পর এক লঙ্ঘন করেছেন। নিজ নামে ও স্ত্রীর নামে সাড়ে ছয় কোটি টাকার অধিক সঞ্চয়পত্র ক্রয় ও মুনাফা উত্তোলন করেছেন— যা শুধু রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের শামিলই নয়, একটি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নৈতিকস্খলনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ধরনের একজন ব্যক্তির কাছে একটি ব্যাংক তথা আমানতকারীদের আমানত সুরক্ষিত নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়।
এ ছাড়া মোসলেহ উদ্দিন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) ২০১৮ সালে দাখিলকৃত আয়কর বিবরণীতে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ১৮টি হিসাবের তথ্য গোপন করে মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে সরকারকে বঞ্চিত করেছেন, যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২(শ) ধারা মোতাবেক করসংক্রান্ত অপরাধ।
জানা যায়, ওই সময়ই মোসলেহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিএফআইইউ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দুর্নীতি দমন কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বিএফআইইউর পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন পাওয়ার পর মোসলেহ উদ্দিনের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তার কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ব্যাখ্যা তলব করা হয়।