X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: গুরুত্ব কেবল সুরমায়, অবহেলিত বেঙ্গল বেসিন

সঞ্চিতা সীতু
১৮ আগস্ট ২০২০, ১৫:০০আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২০, ২০:৩৮

শ্রীকাইলের নতুন গ্যাসক্ষেত্র (ফাইল ছবি) দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলজুড়ে অবস্থিত সুরমা বেসিন বা সুরমা অববাহিকার ওপরেই এককভাবে নির্ভর করা হচ্ছে। অথচ সম্ভাবনা থাকলেও বেঙ্গল বেসিন বা বঙ্গীয় অববাহিকায় কোনও নজর নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বেঙ্গল বেসিনে দ্রুত নজর দেওয়া উচিত।

একমাত্র ভোলা ছাড়া বেঙ্গল বেসিনে খুব বেশি কাজ হয়নি। ভোলায় গ্যাস অনুসন্ধানের আগে এখানে গ্যাস পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়েও অনেকেরই সন্দেহ ছিল। তবে ভোলায় সন্তোষজনক ফল পাওয়ায় এখন সংশ্লিষ্টদের  ধারণা বদলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোলার সঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকায় দ্বিতীয় মাত্রার জরিপ চালানো প্রয়োজন।

বলা হয়ে থাকে, মূলত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশের প্রধান গ্যাস উৎপাদনকারী এলাকা অবস্থিত। ভারতের মণিপুর ও মিজোরাম রাজ্য থেকে বয়ে আসা বরাক নদীর দক্ষিণ তীরের উপনদী হচ্ছে সুরমা। এই সুরমা নদী সিলেট শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বানিয়াচং উপজেলার পশ্চিমে কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং যার সম্মিলিত উত্তাল স্রোতধারাই হলো মেঘনা নদী। ভুবন ও বোকাবিল স্তরসমষ্টি নিয়ে গঠিত মায়োসিন সুরমা সিরিজের নাম এই নদী থেকে উদ্ভূত, সুরমা অববাহিকায় যার বিকাশ খুবই সমৃদ্ধ।

এ অঞ্চলের সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লাতেই দেশের বেশিরভাগ গ্যাসক্ষেত্র অবস্থিত। প্রতিদিন দেশে যে গ্যাস উৎপাদিত হয়, তার প্রায় পুরোটাই আসে সুরমা বেসিন থেকে।

সুরমা বেসিন বা অঞ্চল ঘিরে রয়েছে ২২টি গ্যাসক্ষেত্র। এর মধ্যে বিবিয়ানা, জালালাবাদ, বাঙ্গুরা, মৌলভীবাজার, তিতাস, বাখরাবাদ, শ্রিকাইল, সালদা, সেমুতাং, বিয়ানিবাজার, কৈলাসটিলা ও সিলেটসহ অন্যান্য গ্যাসক্ষেত্র মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন দুই হাজার ৫১১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে।

অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং উত্তরে শিলং মালভূমির পাদদেশ থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর বরাবর বিস্তৃত অববাহিকা নিয়ে গঠিত অঞ্চলকে বলা হয় বেঙ্গল বেসিন। এটি মূলত টারশিয়ারি যুগের শিলাস্তর দিয়ে পরিপূর্ণ। যদিও উত্তরবঙ্গের ভূগর্ভে অতি প্রাচীন পারমিয়ান যুগের শিলাস্তর বিদ্যমান। ভূত্বকীয় ভারতীয় প্লেট এবং এশিয়ান প্লেটের সংঘর্ষের ফলে বঙ্গীয় অববাহিকার উৎপত্তি হয়েছে। এই এলাকায় বাংলাদেশের ভোলা ছাড়াও বরিশাল, শরীয়তপুর, মাদারীপুরে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একাংশও বেঙ্গল বেসিনের অংশ। ইতোমধ্যে ওই এলাকায় অনুসন্ধান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ উন্নত মানের কয়লার মজুত পাওয়া গেছে। তবে এখান থেকে কয়লা তোলার বিষয়ে সরকার দীর্ঘমেয়াদি লাভ-ক্ষতি পর্যালোচনা করছে। সম্প্রতি জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই- ইলাহী চৌধুরী  বলেছেন, সরকার কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে কৃষি জমি বিনষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ওই এলাকার পানির উৎস ধ্বংস হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছে। এজন্য একটি জরিপও পরিচালনা করেছে।

আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং বা ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা তোলার পর সেখানকার ভূমি ধসে যায়। এছাড়া ওপেন কাট বা উন্মুক্ত খনন করলে বিশাল এলাকার মাটি তুলে ফেলতে হয়। ফলে সেখানে পানির প্রাকৃতিক উৎস বিনষ্ট হয়। এর পরিণতিতে বিশাল এলাকাজুড়ে মরুকরণ হতে পারে। তখন আর ওই এলাকায় কৃষি কাজ করা সম্ভব হয় না। সঙ্গত কারণেই সরকার শষ্য ভাণ্ডার বিনষ্ট করতে চায় না। কিন্তু গ্যাস অনুসন্ধানে এ ধরনের কোনও সংকট নেই। ফলে ওই এলাকায় গ্যাসের অনুসন্ধান চালানো যেতেই পারে বলে মনে করেন জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিশেষজ্ঞরা।

জানতে চাইলে ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মূলত সুরমা অববাহিকায় আমাদের অনুসন্ধান বেশি হয়েছে। এই অববাহিকায়  সিলেট অঞ্চল পড়ে।  বড় বড় বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র ওই এলাকায় অবস্থিত।’  তিনি বলেন, ‘এর অর্থ এই নয় যে, স্থলভাগের অন্য এলাকায় গ্যাস পাওয়া যাবে না। এখনও অন্য অববাহিকা তথা বেঙ্গল বেসিনসহ আরও বেশকিছু ছোট ছোট স্ট্রাকচার বা কাঠামো আছে। সেখানেও  সম্ভাবনা আছে। ফলে ওইসব জায়গায়ও অনুসন্ধান করতে হবে। স্থলভাগের সব সম্ভাবনাই অনুসন্ধান করে দেখা দরকার বলে আমি মনে করি।’

অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের সব দেশের মতো সম্ভাবনাময় স্ট্রাকচারে  আমাদের দেশেও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।  অন্য দেশগুলোতে যখন সম্ভাবনাময় জায়গাগুলোতে সম্পদের পরিমাণ কমতে শুরু করে, তখন তারা অন্য স্ট্রাকচারে  অনুসন্ধান চালায়।  অনেক দেশেই দেখা গেছে, এতে সম্ভাবনাময় কূপগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ গ্যাসও পাওয়া গেছে।  ফলে আমাদেরও এখন উচিত একই পথ অনুসরণ করা এবং যেসব জায়গায় স্ট্রাকচার আছে সেখানেই অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া। এতে করে হয়তো দেখা যাবে, আমরা কোনও বিপুল পরিমাণ  সম্পদের সন্ধান পেতে পারি।’

/এপিএইচ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
জাহাজেই দেশে ফিরবেন এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
তাপপ্রবাহের গেটওয়ে যশোর-চুয়াডাঙ্গা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প বাংলাদেশের পর্দায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট