X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

৫ সিন্ডিকেটের কবলে ভোজ্যতেল!

শফিকুল ইসলাম
১৮ জানুয়ারি ২০১৬, ১০:৩১আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৬, ১২:২২

সয়াবিন তেল

সরকারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনও কমেনি সয়াবিন তেলের দাম। শনিবারের মধ্যে দেশের সর্বত্র সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও রবিবারও আগের দাম বিক্রি হয়েছে সয়াবিন তেল। জানা গেছে, ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে এই স্বেচ্ছাচারিতার পেছনে রয়েছে ৫ পরিশোধনকারী কারখানার সিন্ডিকেট।  এই সিন্ডিকেটই  নির্ধারণ করে বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য। রাজধানীর কাওরানবাজার, শ্যামবাজার ও মিরপুর ১১ নম্বর বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, এখনও নতুন দামের সয়াবিন তেল কারখানা থেকে সরবরাহ করা হয়নি। আমরা আগের কেনা তেলই বিক্রি করছি। ওই তেল কম দামে বিক্রি করলে তারা লোকসানে পড়বেন বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর পাইকারি বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দেশের অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী কারখানা মালিকরা যদি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আন্তরিক না হন, তাহলে দাম কমানো সম্ভব নয়। তাদের অভিযোগ, দেশের ২/৩টি কারখানার মালিকই ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তারা মিলগেটে নতুন দরে অর্থাৎ লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমিয়ে সয়াবিন সরবরাহ না করলে বাজারে কম দামে তেল পাওয়া যাবে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ৫টি পরিশোধনকারী কারখানা। এই ৫ কারখানার মালিকই নির্ধারণ করেন বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য কত হবে। তারা ঠিক করেন, দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে কত কমবে,আদৌ কমবে কি না?  বর্তমানে দেশের ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানিতে সবগুলো প্রতিষ্ঠান সক্রিয় নেই। এগুলো হলো সিটি গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এসএগ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড,  ব্রাদার্স গ্রুপ, সেভেন সার্কেল এডিবল অয়েল, দাদা গ্রুপ ও নুরজাহান গ্রুপ। সম্প্রতি নূরজাহান গ্রুপ, রুবাইয়া ভেজিটেবল অয়েল ও মোস্তফা গ্রুপ ভোজ্যতেল আমদানি করছে বলে জানা গেছে। সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে সিটি গ্রুপ। পরের অবস্থানে টিকে গ্রুপ। এরপরের অবস্থানে মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ ও বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড। এ গ্রুপগুলোই মূলত বাংলাদেশের ভোজ্যতেলের জাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা গেছে। বেসরকারি কারখানাগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কিছু পরিমাণ সয়াবিন তেল আমদানি করে।

উল্লেখ্য, দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য বছরে ভোজ্যতেলের মোট চাহিদা হচ্ছে ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে সয়াবিনের চাহিদা ১১ লাখ টন, পামঅয়েলের চাহিদা ৩ লাখ টন এবং সরিষা তেলের চাহিদা ১ লাখ টন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে মিল মালিকদের কারসাজি দীর্ঘদিনের। তাদের এই কারসাজি ধরতে অতীতে কয়েকবার রিফাইনারি কারখানার প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও টিকে গ্রুপও বাদ যায়নি। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং টিম মেঘনা ও সিটি গ্রুপের মিলও পরিদর্শন করেছে।

এর আগেও কয়েকবার বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছেন এই সব মিলমালিক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপের পরও তারা ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করেছেন।

সূত্র জানায়, প্রতিবছর রমজানে দেশে ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়ে। ওই এক মাসে দেশে প্রায় পৌনে ২ থেকে দুই লাখ মেট্রিক টন সয়াবিনের প্রয়োজন হয়। অন্যান্য মাসে চাহিদা সোয়া ২ লাখ টন। তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে। মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্নভাবে মনিটরিং করার পরও দাম বাড়ানো থেকে তাদের বিরত রাখা যায় না। তারা শুধু মূল্যবৃদ্ধি নয়,  একযোগে কয়েকজন মিলে আকস্মিক আমদানির পরিমাণও বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ান বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে উৎপাদন খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল। এ কাজটি করছেন আমদানিকারক, উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী। আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম অতীতের যেকোনও সময়ের তুলনায় কম। সেই হিসেবে দেশের কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্যমূল্য নির্ধারণ করেনি। খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম তারা কমিয়েছে খুবই সামান্য। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমার সুফল ব্যবসায়ীরা পেলেও ক্রেতারা পায়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম পাঁচ বছরের মধ্যে এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে অবস্থান করছে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের দাম ছিল ৬০২ ডলার। একই দিন তা সর্বনিম্ন ৫৯৯ ডলারেও বিক্রি হয়েছে। দেশে আমদানির পর এগুলো পরিশোধন করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, প্রচার ও ব্যবসায়ীদের মুনাফাসহ প্রতি লিটারে খরচ পড়ে ৬০  সর্বোচ্চ ৬২ টাকা। কিন্তু খুচরাবাজারে খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা দরে। বোতলজাত সয়াবিন এখনও বিক্রি হচ্ছে ৯৮ থেকে ১০২ টাকা লিটার দরে।

২০১৫ সালের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ৫ দশমিক ৭২ শতাংশ, আগস্টে সামান্য বেড়ে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে কমে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ, অক্টোবরে কমে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, নভেম্বরে কমেছে ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, সরকারকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ভোজ্যতেলের দাম ৫ টাকা কমানোর সুবিধা ভোক্তা পর্যায়ে আসতে কয়েকদিন সময় লেগে যেতে পারে। কারণ, মিলগেট থেকে পাইকারি বাজার হয়ে খুচরাবাজার এবং ভোক্তার হাতে পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগবে। এখানে সিন্ডিকেট বা অসৎ কোনও উদ্দেশ্য নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বিষয়টি সরকারের নজরে আছে। এ সব বিষয় মনিটরিংয়ের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৪টি টিম কাজ করছে।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ রানের নাটকীয় জয় হায়দরাবাদের 
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
মামুনুল হকের জন্য কাশিমপুর কারাগারের সামনে ভক্তদের ভিড়
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা