X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাজেট প্রণয়নে প্রচলিত চিন্তার বাইরে আসতে হবে: অর্থনীতি সমিতি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ এপ্রিল ২০২২, ২০:৫২আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২২, ২০:৫২

বাজেট প্রণয়নের প্রচলিত চিন্তা-কৌশল থেকে সরে এসে মানুষের প্রয়োজনের নিরিখে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

শনিবার (২ এপ্রিল) অর্থনীতি সমিতির ‘বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা ২০২২-২৩ প্রস্তুতি আলোচনা: চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন।

অর্থনীতি সমিতির পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ, রাজনীতিক, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ, সমাজ উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক কর্মী এবং সাংবাদিক নেতাসহ নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি আঞ্চলিক সমস্যা ও সম্ভাবনার আলোকে বাজেটে অন্তর্ভুক্তির জন্য তাদের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘শোভন অর্থনীতি ব্যবস্থায় মানুষের ন্যায়-অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাধ্যমই হলো রাষ্ট্রীয় বাজেট। সে কারণে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ধারণার রাষ্ট্রীয় বাজেট—প্রচলিত অর্থের মূলধারার অর্থনীতিবিদদের ধারণার বাজেট থেকে পদ্ধতিগতভাবে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী।’

তিনি বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নে প্রচলিত অর্থনীতিশাস্ত্রের চিন্তা-ভিত্তিকেই আমরা পুরোপুরি বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করি। প্রচলিত প্রথায় বাজেট প্রণয়নের শুরুটাই হয় টাকা-পয়সাকে মূল অভীষ্ট হিসেবে ধরে নিয়ে। বাজেট প্রণেতারা প্রথমেই যা ঠিক করেন, তা হলো কত টাকা-পয়সা আছে অর্থাৎ রিসোর্স এনভেলপ। কিন্তু শোভন অর্থনীতি ব্যবস্থায় বাজেট প্রণয়ন কর্মকাণ্ডে শুরুটাই হবে ‘কত টাকা-পয়সা আছে’ দিয়ে নতুবা কী কী প্রয়োজন তা দিয়ে। অর্থাৎ ‘এনভেলপ অব থিংস টু ডু’, যার মধ্যে থাকবে মানুষের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, আবাসন, কাজ, বিশ্রাম-বিনোদন, সংস্কৃতিচর্চা থেকে শুরু করে মানুষের সুস্থ-সৃজনশীল বিকাশের জন্য যা-কিছু প্রয়োজন সবই। এক্ষেত্রে টাকা-পয়সা কোনও অর্থেই মূল অভীষ্ট বস্তু হবে না, তা হবে লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম মাত্র।’

সভায় বক্তারা বলেন, ‘দেশে নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু তা টেকসই করা যাচ্ছে না। সরকারি বাজেট প্রণেতা ও নীতিনির্ধারকদের ভেবে দেখা উচিত যে—সবাই যেখানে উন্নতি করছে, সেখানে কেন এক বছরের ব্যবধানে ৯ ধাপ পিছিয়ে ২০২১ সালে বিশ্বসেরা ১০০ বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ৬৭তম স্থানে নেমে এসেছে, দেশের প্রথম রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার গোড়াপত্তনকারী চট্টগ্রামের ৯০-এর দশকের ৪০ শতাংশেরও বেশি রফতানি হিস্যা কমে এখন ১২-১৩ শতাংশ হয়েছে?’

তারা বলেন, ‘এই একবিংশ শতকেও সুঁই থেকে শুরু করে অ্যারোপ্লেন পর্যন্ত সবকিছুর জন্য কেন্দ্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। অথচ সংবিধানের ৯, ১১, ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদে জনগণের প্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় বিষয়াবলি পরিচালনার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু জনকল্যাণমূলক সবকিছু এখন বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, আর তৃণমূলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সব অধিকার সংকোচিত করা হচ্ছে।’

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির চট্টগ্রাম-চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত বলেন, ‘বাজেট প্রণয়নের আগে এনবিআর ব্যবসায়ীদের কথা শোনে, যারা নিজেদের স্বার্থসম্পর্কিত নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরতেই ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের সমস্যা ও চাহিদার কথা বাজেট প্রণয়নের সময় কেউ শুনতে চায় না।’

তিনি বলেন, ‘ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া বড় কোনও বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়নি। নীতিনির্ধারকদের বোঝা উচিত, এভাবে কোনোভাবেই মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন করা সম্ভব না।’

অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, ‘নীতিনির্ধারণী সবকিছু কেন্দ্রীকরণের কারণে রাজধানী ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ধরনের শিল্পের ঘনীভবন হচ্ছে। অথচ বিদেশে পণ্য রফতানির জন্য চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরই দেশের মূল ভরসা। আঞ্চলিক সম্ভাবনার আলোকে পরিকল্পনা করা হলে স্থানীয়ভাবেই নানা ধরনের উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হতো, যা দেশের উন্নয়নকে টেকসই রূপ দিতো।’

সভায় চট্টগ্রাম বিভাগের বক্তারা বেশ কিছু দাবি জানান। দাবিগুলো হলো– উন্নত সুবিধা সংবলিত বিশেষায়িত হাসপাতালসহ, শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দেওয়ান হাট ওভারব্রিজ ও কদমতলি ফ্লাইওভারের কারণে ঝুঁকির মুখে পড়া বর্তমান রেলস্টেশন টাইগারপাসে সরিয়ে নেওয়া, হোল্ডিং ট্যাক্স সামঞ্জস্যপূর্ণ করা, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রযুক্তিসক্ষমতা ও দক্ষতা উন্নয়ন, পোশাক শিল্পের ক্রমহ্রাসমান বিকাশ প্রবণতা রোধ করতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও দক্ষ শ্রমিকের সংকট নিরসন এবং পবিবেশবান্ধব কারখানা প্রতিষ্ঠা, ডেইরি ও পোলট্রি ফার্মের বিরাজমান সমস্যা নিরসন, কুটির শিল্পভিত্তিক ইপিজেড গড়ে তোলা, বিভিন্ন শিল্পের শুল্কমুক্ত কাঁচামাল নিশ্চিত করা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বৃদ্ধি, প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও মাতৃগর্ভকালীন মায়ের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের জন্য অত্যাধুনিক জাহাজের ব্যবস্থা ও জলদস্যুতা রোধ, পার্বত্য জেলাগুলোয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমবায়, স্থানীয় পর্যটন, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ, যুব উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, যোগাযোগ অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ভূমির মালিকানা বিরোধ নিরসন, কক্সবাজার জেলাসহ সৈকত এলাকায় দখল-দূষণ রোধসহ বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, উন্নয়নের নামে মহেশখালীতে পান, লবণ, বাগদা চিংড়ি, ভেটকি মাছ বা কাঁকড়া চাষিদের জমি অধিগ্রহণ বন্ধ করা এবং ক্ষতিপূরণের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া।

/এসআই/এমএস/
সম্পর্কিত
৫০ বছরে পাচার হয়েছে ১১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকা
অর্থনীতি সমিতির ২০ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকার বিকল্প বাজেট
জাপানের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব পেলেন আবুল বারকাত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা