X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চালের চেয়ে ময়দার দাম বেশি

গোলাম মওলা
২০ মে ২০২২, ১৭:২৯আপডেট : ২০ মে ২০২২, ১৮:২৬

অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে আটা-ময়দার দাম। সাত-আট মাস ধরে এ দুটি পণ্যের দাম বাড়তির দিকে। টিসিবির দেওয়া তথ্যমতে, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ময়দার (প্যাকেট) দাম এখন ৭০ টাকার বেশি। আর খোলা আটার দাম ৪৬ টাকার বেশি।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই আটা-ময়দার দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে। সম্প্রতি ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধের খবরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের আটা-ময়দার বাজারে। ময়দার দাম এখন চালকেও ছাড়িয়ে গেছে। যদিও এ সপ্তাহে নতুন করে বেড়েছে চালের দামও। অর্থাৎ আগের সপ্তাহের ৪৪ টাকা কেজি দরের মোটা চাল এক টাকা বেড়ে এখন ৪৫ টাকায় এবং ৫৫ টাকা কেজি দরের মাঝারি মানের চালের দাম ৫৬ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। সরকারের বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য এটি। সংস্থাটির হিসাবে, গত এক মাসে ৩১ শতাংশ বেড়েছে খোলা আটার দাম। আর গত এক বছরে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে ৬০ শতাংশের বেশি।

টিসিবির হিসাবে, বাজারের সবচেয়ে ভালো চালের দাম এখন ৬৮ টাকা কেজি। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ময়দার (প্যাকেট) দাম এখন ৭০ টাকার বেশি। টিসিবি বলছে, এখনও ৪৫ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ৫৫ টাকার নিচে ময়দা পাওয়ার সুযোগ নেই। এমনকি ক্রেতাদের প্রতিকেজি খোলা আটা কিনতে এখন খরচ পড়ছে ৫০ টাকার বেশি। টিসিবির হিসাবে, সবচেয়ে কম দামি খোলা আটার দামও এখন ৪৬ টাকার বেশি। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে খোলা ময়দার দাম বেড়েছে কেজিতে ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ গত বছরে যে ময়দা ৩৬ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত, এখন সেই ময়দা ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি দরে।

আর এক বছরে প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের এই সময়ে ৪৫ টাকা কেজি প্যাকেট ময়দা এখন ৬৮ থেকে ৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

টিসিবি বলছে, গত এক বছরে খোলা আটার দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। অর্থাৎ গতবারের এই সময়ে ৩২ টাকা কেজি খোলা আটা এখন ৫০ টাকা কেজিতে কিনতে হচ্ছে।

শুক্রবার (২০ মে) রাজধানীর খুচরা বাজারে দেখা গেছে, আটা ও ময়দায় মানভেদে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বাড়ছে। আর এক মাসের ব্যবধানে তা কেজিতে ১০ টাকা ছাড়িয়েছে। সয়াবিন তেল নিয়ে ভোগান্তির মধ্যেই আটা, ময়দার এই দাম বৃদ্ধিতে শঙ্কিত ভোক্তারা। বিশেষ করে বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।

গাজর, বরবরটি ও কাঁকরলের কেজি একশ’ টাকা

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে বছরে ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে ১১ লাখ টন গম দেশে উৎপাদিত হয়। বাকিটা আমদানি করা হয়। আমদানির বড় অংশ আসতো রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। বাকিটা ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করা হতো। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে দেশে মোট গম আমদানির ৬৩ শতাংশ, কানাডা থেকে ১৮ শতাংশ ও বাকিটা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তবে গত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ভারত থেকে গম আমদানি বেড়েছে। এই সময়ে মোট গম আমদানির ৪৫ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে, কানাডা থেকে ২৩ শতাংশ, ভারত থেকে ১৭ শতাংশ আমদানি করা হয়। বাকিটা অন্য দেশগুলো থেকে আমদানি করা হয়।

জানা গেছে, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশ দুটি থেকে আর গম আমদানি করা যায়নি। এরপর দেশের ব্যবসায়ীরা গম আমদানিতে ভারতমুখী হয়। কিন্তু এখন ভারতও গম রফতানি বন্ধ করেছে। যদিও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ভারত গম রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলেও চিন্তার কোনও কারণ নেই। সরকার আরও পাঁচটি দেশ থেকে গম আমদানির পথ খুঁজছে। ইতোমধ্যে কানাডার হাইকমিশনারের সঙ্গে গম আমদানির বিষয়ে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ভারতও গম দেবে। তাই গম নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।

উল্লেখ্য, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে গত ১ জুলাই থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে মোট ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টন গম আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে গত ১ মার্চ থেকে ১২ মে পর্যন্ত গম আমদানি হয়েছে ৬ লাখ ৮৭ হাজার টন। বর্তমানে সরকারের কাছে মজুত আছে ১ লাখ ১২ হাজার টন গম।

বাড়ছে রসুনের দাম

অস্বাভাবিক দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে রসুন। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের সপ্তাহ থেকে এই পণ্যটির দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। নতুন করে দেশি রসুনের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ টাকার মতো। অর্থাৎ গত সপ্তাহে যে রসুন ৯০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যেত, এখন সেই রসুন কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা দিয়ে। দেশি রসুনের পাশাপাশি আমদানি করা রসুনের দামও বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকার মতো। অর্থাৎ গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া ১৪০ টাকা কেজি দরের রসুন এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে।

বেড়েছে ডিমের দাম

গত সপ্তাহের পর এ সপ্তাহেও বেড়েছে ডিমের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনে ১০ টাকা বেড়েছে। এখন এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১১০ টাকা।

চালের চেয়ে ময়দার দাম বেশি সয়াবিন ও পেঁয়াজ

এদিকে খোলা সয়াবিন তেল গত সপ্তাহের মতো প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা। আর বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ থেকে ৯৮৫ টাকা। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ এখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাংসের দাম

এদিকে ঈদের আগে কেজি ৭০০ টাকায় উঠে যাওয়া গরুর মাংসের দামে কোনও পরিবর্তন আসেনি। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে বেশ কিছু মহল্লার সাপ্তাহিক ব্যবসায়ীরা গরুর মাংসের কেজি বিক্রি করছেন ৭২০ টাকা কেজি দরে।

গরুর মাংস বাড়তি দামে বিক্রি হলেও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমে এখন ১৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা। আর ঈদের আগে ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি আগের মতোই ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

মাছের দাম

গত সপ্তাহের মতো রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। শোল মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। কৈ মাছের কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। পাবদার কেজি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। ৫০০-৬০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৬০ টাকা।

কয়েকটি সবজির কেজি ১০০ টাকা

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের পর থেকেই কাঁচা সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বেশি। এরপর আবার বৃষ্টির কারণেও বাজারে তেমন সবজি আসছে না। ঢাকায় আনার পথে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে প্রতিকেজি সবজিতে ১৫-২০ টাকা দাম বেড়েছে খুচরা বাজারে। এরমধ্যে তিনটি সবজির কেজি এখন ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি সবজির কেজি ১০০ টাকার কাছাকাছি। বাকি সবজিগুলোর দামও বেশ চড়া। ৫০ টাকার নিচে হাতে গোনা দুই-একটি সবজি পাওয়া যাচ্ছে।

শুক্রবার (২০ মে) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন গাজর। এই সবজিটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে গাজরের কেজি ছিল ৭০ টাকা। গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া বরবটির দাম বেড়ে এখন ১০০ টাকা। কাঁকরোলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা করে। এক সপ্তাহ আগে এই সবজিটির কেজি ৬০ টাকার মধ্যে ছিল। এছাড়া করলা ও বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। কাঁচা পেঁপের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। কাঁচা কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা। ঢেঁড়স ও পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। ঝিঙে ও চিচিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সবজির বাজার ঊর্ধ্বমুখী, তীব্র গরমকে দুষছেন বিক্রেতারা
সোনার দাম কমেছে, আজ থেকেই কার্যকর
ওঠানামা করছে মুরগির দাম, বাড়ছে সবজির
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!