X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

কলমানিতে সুদের হার বেড়েছে তিন গুণ

গোলাম মওলা
১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০১আপডেট : ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:০১

হঠাৎ কলমানি থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের টাকা ধার নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এ কারণে এই ধারের টাকার সুদও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের তুলনায় কলমানিতে সুদের হার বেড়েছে প্রায় তিন গুণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছরের ১০ জানুয়ারি কলমানিতে সুদহার ছিল গড়ে ২ দশমিক ৭২ শতাংশ। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি কলমানিতে সুদহার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এক রাত বা এক দিনের ধারের জন্য এই সুদহার ধার্য করা হয়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি উন্নতির পর অর্থনীতিতে চাহিদা বৃদ্ধিসহ নানামুখী প্রভাবে ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানি চলছে। এ কারণে সুদের হার বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, তিন কার্যদিবসের ব্যবধানে কলমানিতে সুদহার ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ ধরনের ধারের গড় সুদহার ছিল ৫ দশমিক ৭৭।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) এক দিনের জন্য কলমানি বাজার থেকে ৩ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা ধার নিয়েছে ৬২টি ব্যাংক। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংক ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে টাকা ধার নিয়েছে। কোনও কোনও ব্যাংক ৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদেও ধার পেয়েছে।

তবে যেসব ব্যাংক কলমানি থেকে ১৪ দিনের জন্য টাকা ধার করেছে, তাদের সুদ গুনতে হয়েছে আরও বেশি—১০ শতাংশ। এই হারে ১৫ কোটি টাকা ধার করেছে একটি ব্যাংক।

সোমবার এক দিনের জন্য কলমানি বাজার থেকে প্রায় ৪ হাজার ৪১১ কোটি টাকা ধার নিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক। এর গড় সুদহার ছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রবিবার কলমানি বাজার থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ধার নিয়েছে বিভিন্ন ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, কলমানিতে বিভিন্ন মেয়াদে ধার দেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা ধার দেওয়া হয় এক দিনের মেয়াদে।

১ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, কলমানি বাজার থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা ধার নেওয়া হয়েছে ২ জানুয়ারি।

ওই দিন বিভিন্ন ব্যাংক ৬ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা ধার করেছিল, যার বড় অংশই ছিল এক দিনের মেয়াদে। সর্বশেষ গত রবিবার কলমানি থেকে ধার দেওয়া হয় ৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও ব্যাংকগুলোকে দিতে হচ্ছে তারল্য সহায়তা। সংকট সামাল দিতে প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে অনেক ব্যাংককে। বেসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি এ তালিকায় আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক তাদের কাছ থেকে প্রায় সোয়া ৭ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা নিয়েছে। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর মাসেই নিয়েছে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকারও বেশি। তারল্য সহায়তার পাশাপাশি রেপো সহায়তাও (পুনঃক্রয় চুক্তি) নিচ্ছে কোনও কোনও ব্যাংক। যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে তিনটিরই আমানতের পরিমাণ লাখ কোটি টাকারও বেশি।

ব্যাংক খাতে নগদ টাকার টানাটানির পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া, বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের উৎসে ভাটা পড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনে এলসির দায় পরিশোধ করা, সরকারি ও বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিও আরেকটি কারণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারি খাতের পাঁচ ব্যাংক প্রায় ৭ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা নিয়েছে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা নিয়েছে সোনালী ব্যাংক। এ ছাড়া জনতা ব্যাংক নিয়েছে ২ হাজার ৩৩৫ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক নিয়েছে ২ হাজার ৫১ কোটি ও রূপালী ব্যাংক ৫৩৩ কোটি টাকা নিয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক নিয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

অবশ্য সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম বলেছেন, সোনালী ব্যাংকের কোনও তারল্য সংকট নেই। উল্টো সোনালী ব্যাংক কলমানিতে টাকা ধার দিয়ে আসছে বলে জানান তিনি।

প্রসংগত, করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃৃদ্ধি এবং চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপে আমদানি ব্যয়ে কিছুটা লাগাম টানা গেলেও প্রতিদিনই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে প্রায় ৬৫০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর বিপরীতে বাজার থেকে প্রায় সাড়ে ৬৯ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বার্ষিক আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। সেই প্রবৃদ্ধি বাড়তে বাড়তে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক ৪৭ শতাংশে ওঠে। কিন্তু  সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত আমানতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা বিএনপি: ওবায়দুল কাদের
ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া কি আলোর মুখ দেখবে?
সর্বশেষ খবর
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
‘ভুঁইফোড় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানগুলো মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
গরমে স্বস্তির খোঁজে লোকালয়ে ঢুকছে সাপ, সচেতনতার আহ্বান ডিএমপির
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক