প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম বলেছেন, কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি আমদানিতে ৩ বছরে ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি ব্যয় হয়েছে। এটার দায় বাংলাদেশের না থাকলেও অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় আমদানির ওপর চাপ কমাতে বর্তমান মজুত থেকে উৎপাদন বাড়ানো ও নতুন অনুসন্ধানের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। তবে পরিবেশ, কৃষি ও পানি ব্যবস্থাপনার বিবেচনায় আপাতত নিজস্ব কয়লা উত্তোলনের বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে না। কিন্তু দিনের চাহিদার বিদ্যুতের কমপক্ষে অর্ধেক সোলার থেকে পাওয়ার বিবেচনা নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটি (বিইএস) দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দর্শন, অর্জন ও বাস্তবায়নের অবস্থা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে ছিলেন— প্রফেসর নুরুল ইসলাম, বিইসি’র সভাপতি ও সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. ম. তামিম, পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সাবেক সদস্য মকবুল ই ইলাহী, পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর, সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান ও জ্বালানি সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদারসহ আরও অনেকে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মঈন উদ্দীন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে দেশি-বিদেশি একক উৎসের প্রতি নির্ভরশীলতা কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন ও পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। আগামীতে স্মল মিডিউলার রিয়াক্টর (এসএমআর) ও মাইক্রো মডিউলার রিয়াক্টর (এমএমআর) স্থাপনের বিষয় সরকারের বিবেচনায় আছে।’
আজিজ খান বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধুর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ছিল, যার ধারাবাহিক বাস্তয়ায়নের ফলেই দেশব্যাপী শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত হয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট দেখা দেয়, যা বাংলাদেশেও প্রভাব ফেলে। একইসঙ্গে বিগত দশকে দেশের জ্বালানি চাহিদা আনুমানিক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলে এই সংকট ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হয়। তবে সেই সংকট মোকাবিলা করে চাহিদা পূরণে সরকারের সঙ্গে কাজ করতে পেরে সামিট গ্রুপ গর্বিত।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে মো. মকবুল-এ-এলাহী চৌধুরী বলেন, ‘জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্টদের আরও নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। জ্বালানি সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ যাচাই-বাছাই করতে হবে এবং জ্বালানি চোরাকারবারি ও দূর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’ তিনি দাবি করেন, সিস্টেমলসের নামে চুরি বন্ধ এবং নিজস্ব মজুত থেকে উৎপাদন বৃদ্ধি করে আগামী এক বছরের মধ্যে স্পট এলএনজি আমদানি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব। আর এককভাবে গ্যাস দেশের পুরো জ্বালানি চাহিদা মেটাতে পারবে না। তাই সময় নষ্ট না করে নিজস্ব কয়লা উত্তোলনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।
ম. তামিম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন অনুসরণ করলেও আমদানি নির্ভরতা থেকে পুরোটা বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই। কিন্তু নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধানে যুগপৎভাবে কাজ করে এবং নিজস্ব কয়লা উৎপাদন করে আমদানি বিলম্বিত করা উচিত। আবার নবানয়যোগ্য জ্বালানি বিশেষ করে সোলার ও বায়ু বিদ্যুতের পরিকল্পিত উন্নয়ন করা জরুরি। তত দিনে দেশের অর্থনীতি জ্বালানি আমদানি ব্যয় সামাল দিতে সক্ষম হয়ে ওঠবে।’
হোসেন মনসুর বলেন, ‘বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব দক্ষ জনবলকে সর্বক্ষেত্রে কাজে লাগানোর ওপর জোর দিতে হবে। আর গ্যাস খাতে কোনও কাজ না করার যে অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে করা হয়েছে, তা যথাযথ নয়।’
বিইসি’র সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এই আলোচনার মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সামগ্রিক অর্জন ও বাস্তবায়নের অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা যাবে। আশা করি, এর মাধ্যমে দেশের জ্বালানি খাত ও ভবিষ্যৎ উপকৃত হবে।’