প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী (বীরবিক্রম) বলেছেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো খাদ্য, জ্বালানি এবং সার রফতানি করে গত তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে আট বিলিয়ন ডলার নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ এ কারণেই ডলার ঘাটতিতে পড়েছে। বুধবার (৯ আগস্ট) ‘জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তৌফিক ই ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর অদম্য সাহস পরিকল্পিত বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করেছে। ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট কেনা ৫টি গ্যাসক্ষেত্র দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায় কার্যকর অবদান রাখছে। সমুদ্র আইন এ অঞ্চলে প্রথম করা হয়েছিল, যা সমুদ্রে আমাদের অধিকার নিশ্চিত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ফ্লেক্সিবল পরিকল্পনা নিতে হবে, যাতে বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যেতে পারে। নির্ভরশীলতা কমাতে জ্বালানির বহুমুখিতা বাড়াতে হবে। অনুসন্ধান কার্যক্রম নিয়ে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সমুদ্রে অনেককে দায়িত্ব দেওয়া হলেও ফলপ্রসূ কিছু পাওয়া যায়নি। ২০৪১ সালে উন্নত-সভ্য-মানবিক দেশ গড়তে শেখ হাসিনার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।’
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সৌর এবং বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ওপর জোর দিচ্ছি। ক্ষেত্র বিশেষে অগভীর সমুদ্রেও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবো।’
জ্বালানি সচিব ড. মো. কায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘এই পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করেছে।’
সেমিনারে জানানো হয়—২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৬টি গ্যাসক্ষেত্র বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬২৫ কিলোমিটার। জ্বালানি তেল পাইপলাইনের নতুন কার্যক্রম হয়েছে ৬২৪ কিলোমিটার। তেল মজুত ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯ লাখ মেট্রিক টন, গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে দৈনিক ১ হাজার ২৫৬ মিলিয়ন ঘনফুট। ৪টি নতুন রিগ ক্রয় ও পুনর্বাসন হয়েছে একটি। সরকারিভাবে পেট্রোলিয়াম পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি ৪০ দশমিক ১৬ লাখ মেট্রিক টন ও এলপিজি সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ গুণ। অফশোর বিডিং রাউন্ডের জন্য মডেল পিএসসি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই বিডিং রাউন্ড শুরু করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিদ্যুৎ জ্বালানির সমন্বিত মহাপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছি। ক্রমান্বয়ে জীবাশ্ম জ্বালানির নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিচ্ছি। এ জন্য ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুতের সঙ্গে আরও একটি এক হাজার মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ‘এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন ভুঁইয়া।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ওয়াসিকা আয়শা খান, বিপিসি চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ এনডিসি, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বক্তব্য রাখেন।