X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ

৫ মাস আগেই সরকারের টার্গেট পূরণ

গোলাম মওলা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০১:৫৫আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৮:৫২

জাতীয় সঞ্চয়পত্র বাজেট ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।কিন্তু অর্থবছরের ৫ মাস বাকি থাকতেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে ১৬ হাজার ৬০২ কোটি ৯৭ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে সরকার। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সরকার নিট ১৬ হাজার ৬০২ কোটি ৯৭ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাত মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। যার পরিমাণ ৭ হাজার ২৯৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৭০ কোটি ২১ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এই সময়ে ডাকঘরের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার ৮৮ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র। বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ৬ হাজার ১৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৩১৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

তথ্য অনুযায়ী,সাত মাসে মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪৯০ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। আর সুদ হিসাবে পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ডাকঘরের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হয়েছে।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে চাহিদার চেয়ে বেশি টাকা পাওয়ার কারণে সরকার ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণ কমে এক লাখ ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ছয় মাস আগে গত জুন শেষে যা এক লাখ ৫ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা ছিল।এ হিসাবে ছয় মাসে সরকারের নিট ঋণ কমেছে ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের মোট ঋণের মধ্যে ৯৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে। বাকি ৮ হাজার ১৭৯ টাকা নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে।অন্যদিকে আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যাংকে সঞ্চয়ের আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যাংকের গ্রাহকরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক আমানতের সুদহার বর্তমানে সাড়ে ৬ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের সুদহার এখনো ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এ অবস্থায় অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছে।

বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.৬৭ শতাংশ। তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয় পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.২৮ শতাংশ এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১.০৪ শতাংশ। অন্যদিকে তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে সুদ দেওয়া হচ্ছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ সুদ দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিনিয়োগ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে অলস টাকা পড়ে থাকবে। আর এই অলস টাকার পেছনে কোন ব্যাংকই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে চাইবে না। ফলশ্রুতিতে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়েই আমানতের সুদ হার কমিয়েছে। এ কারণে অনেকে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের প্রতিবেদনে জুলাই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের আয় হয়েছে ১ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১৮ কোটি টাকা বেশি। আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে আয় হয় ২ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৮০ কোটি টাকা বেশি। সেপ্টেম্বরে বিক্রি করে আয় হয় ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪২৭ কোটি টাকা কম। অক্টোবর মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে আয় হয় ২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ৩ লাখ টাকা,যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৯৬ কোটি টাকা বেশি।নভেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ আসে ২ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে আয় হয় ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে আয় হয় ৩ হাজার ২৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের(সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্যাংকগুলোতে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়া এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছে।যদিও সঞ্চয়পত্রে আগের চেয়ে সুদের হার কমানো হয়েছে।তিনি বলেন,সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোনও স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে,এ কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে।

এদিকে,গত বছরের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ২ শতাংশ কমায় সরকার।তা সত্ত্বেও গত বছরগুলোর তুলনায় চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ।সাধারণত বাজেট ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার ঋণ নিয়ে থাকে।এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত খাত।ব্যাংকবহির্ভূত খাতের প্রধান উৎস সঞ্চয়পত্র বিক্রি।এছাড়া ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতেও ঋণ নেওয়া হয়।

গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার।সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে করা হয় ২১ হাজার কোটি টাকা। তবে গেল অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ২৮ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা পায় সরকার।

/এপিএইচ/আপ-এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
সর্বাধিক পঠিত
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে