দেশের চলমান স্থবিরতার মাঝে ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ ঘোষণা করেছেন প্রবাসীরা। দেশে যার প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। গত জুন মাসের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত জুলাইয়ে প্রবাসী আয় কমেছে ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসের মধ্যে জুলাই মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। জুলাই মাসে তারা পাঠিয়েছেন ১৯০ কোটি ডলার। অর্থাৎ জুলাই মাসে প্রতি দিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছে ৬ কোটি ১২ লাখ ডলার করে। এটি আগের মাস জুনের চেয়ে কম। জুন মাসে এসেছিল ২৫৪ কোটি ডলার। ওই মাসে গড়ে প্রতি দিন প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার করে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ থাকাসহ নানা কারণে জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কমেছে। কোটা আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় বহু হতাহতের প্রতিবাদে দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। যার প্রভাব ইতোমধ্যে সদ্য সমাপ্ত মাসের রেমিট্যান্সে দেখা গেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, সামনের দিনগুলোতেও যদি প্রবাসী আয় কমতে থাকে, তাহলে অর্থনীতির জন্য খারাপ হবে। অপরদিকে একটি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে অর্থ পাচারকারীরা সক্রিয় হয়। এতে অর্থপাচার বেড়ে যেতে পারে। চলমান অস্থিরতার মধ্যে প্রবাসীরা দেশে অর্থ পাঠালেও দেশে ডলার আসবে না। কারণ এক্ষেত্রে হুন্ডিকে বেছে নেবেন তারা। এর ফলে দেশের অর্থনীতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মাসের প্রথম কার্যদিবসে আগের মাসের রেমিট্যান্সের তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা প্রকাশ করেনি। এদিন বিকালে সাংবাদিকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হকের কাছে রেমিট্যান্সের তথ্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও প্রতিবেদন কমপ্লিট হয়নি। কাজ চলছে, কমপ্লিট হলে জানানো হবে। পরে বিকাল ৫টার দিকে প্রতিবেদন প্রকাশ না করে সংক্ষিপ্তভাবে শুধু জুলাই মাসে কত ডলার এসেছে, তা হোয়াটসঅ্যাপে জনিয়ে দেন তিনি।
মুখপাত্র জানান, জুলাই মাসে ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। আগের বছর জুলাই মাসে যা ছিল ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গেলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস (২০২৩ সালের) জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বর ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ২১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে এসেছে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুন মাসে আছে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স।
এর আগে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। এখন এটা বাড়তে শুরু করেছে।