চলতি বছরের মে মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এর আগের মাসে, অর্থাৎ এপ্রিল মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সোমবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
সার্বিক মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে মে মাসে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত উভয় ধরনের মূল্যস্ফীতিই সামান্য হ্রাস পেয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশে, যা এপ্রিল মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ।
বিবিএসের ব্যাখ্যায়, মে মাসে ২০২৪ সালের তুলনায় পণ্য ও সেবা কিনতে একজন ভোক্তাকে প্রতি ১০০ টাকায় অতিরিক্ত ৯ টাকা ৫ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। অর্থাৎ পণ্যমূল্য বেড়েছে ৯.০৫ শতাংশ।
শহর ও গ্রামে ভিন্ন চিত্র
মে মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসে ছিল ৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩০ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, শহরাঞ্চলে মে মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৫০ শতাংশ হয়েছে, যা পূর্বের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ হয়েছে; খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
মজুরি বাড়লেও চাপ কমছে না
মূল্যস্ফীতি কমার মধ্যেও জনসাধারণের স্বস্তির সুযোগ কম। কারণ, জাতীয় পর্যায়ে মে মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৮ দশমিক ২১ শতাংশ, যা মূল্যস্ফীতির তুলনায় কম। ফলে বাস্তব অর্থে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আয় বৃদ্ধির গতি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারলে জনগণের জীবনযাত্রার মান ব্যাহত হয়।
বিবিএসের হিসাবে দেখা যায়, মজুরিনির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে ১৪৫টি নিম্নদক্ষতার পেশাজীবীদের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ সবচেয়ে বেশি। তাদের আয় বাড়লেও তা ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য: মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের নিচে
২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত এক বছরে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি ছিল। তবে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রস্তাবিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সরকার আশা করছে, চলতি জুন মাসেই মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশের কোটায় নেমে আসবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা এবং মজুরি বৃদ্ধির হার বাড়ানো না গেলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে না। তাই শুধু পরিসংখ্যানগত হ্রাস নয়, বাজারে বাস্তব মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারকে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।