আজ ৩রা নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ইতিহাসের নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জাতীয় চার নেতা। তাঁদেরই একজন দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কিশোরগঞ্জের কৃতিসন্তান শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রতি বছর এ দিনটি এলেই কিশোরগঞ্জবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে দেশের এই কৃতি সন্তানকে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়া গ্রামে জন্মেছিলেন তিনি। তাঁকে নিয়ে গর্ব করেন এখানকার মানুষ। এ দিনটিতে নীরবে চোখের জল ফেলেন তার স্বজনেরা। তাদের একটাই দাবি, ১৯৭৫ সালে জেলে যে নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তার সুষ্ঠু ও পরিপূর্ণ বিচার দেখতে চান তারা।
দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছিল এলাকার মানুষের প্রতি গভীর মমতা। কখনও সুযোগ হাতছাড়া করতেন না। সময় পেলেই নিজ বাড়িতে ছুটে আসতেন। স্বাধীনতার পর সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর যশোদলে গড়ে তুলেন সুগার মিল, টেক্সটাইল মিলসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা। কিন্তু তার মৃত্যুর পর নিভে যায় সকল সম্ভাবনার আলো।
স্থানীয় গ্রামবাসীরা বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে মোতাবেক প্রায় শত কোটি টাকার প্রকল্পটি সরকারের ঊধর্বতন মহলে পাঠানো হয়। এরপর কমপ্লেক্সের নকশার কাজ শেষ হয়। কিন্তু স্মৃতি কমপ্লেক্সের কাজ এখনও শুরু না হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন তারা। তারা মনে করেন, গ্রামের বাড়ি ঘিরে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়া হলে তাঁর স্মৃতি, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিষয়গুলো মূর্ত হয়ে উঠবে। চলতি বছর শহরের আখড়াবাজার ব্রিজ সংলগ্ন খোলা জায়গায় তাঁর স্মরণে একটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। আর জায়গাটির নাম দেওয়া হয়েছে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বর। যা দেখে নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে।
শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাতিজা ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু বলেন, আমার চাচাকে হত্যার পর আমাদের পরিবারকে চরম অত্যাচার নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে। যা ভাষায় প্রকাশ করার মতন নয়। আমার চাচা দেশের জন্য লড়ে গেছেন, মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছেন। আমরা কিশোরগঞ্জবাসী এ হত্যার রায় দেখার অপেক্ষায় আছি।
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল বলেন, দেশবরেণ্য নেতা আমাদের জেলার কৃতি সন্তান সৈয়দ নজরুল ইসলাকে নিয়ে আমরা গর্ব করি। তিনি দেশের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। আমি মনে করি, এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল তাদের বিচারটি পরিপূর্ণ হয়নি। তাদের বিচার পরিপূর্ণ করে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাতে হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চতুর্থবারের মতো সরকারিভাবে পালন করা হচ্ছে সৈয়দ নজরুল ইসলামের শাহাদাত বার্ষিকী। এ উপলক্ষে শোক র্যালি, আলোচনা সভাসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তাছাড়াও আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন গুলোও আজকের দিনে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।