সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুনই নদী জলমহাল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে বেখইজুড়া, সুনই, কুষ্টিবাড়িসহ তিন গ্রাম। এসব গ্রামে বাড়িতে কোনও পুরুষ মানুষ নেই। মহিলারা বাড়িতে থেকে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে ধর্মপাশা থানা পুলিশ সংঘর্ষে নিহত শ্যামাচরণ বর্মণের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
উল্লেখ্য, ১৪২২ বাংলা সন হতে চলতি ১৪২৭ বাংলা সন পর্যন্ত বার্ষিক ২৪ লাখ ২৪ হাজার ৬৬১ টাকা ইজারামূল্যে জলমহাল তীরবর্তী সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে ইজারা দেয় সরকার। ওই সমিতির পক্ষে চলতি ১৪২৭ বাংলা সনের ইজারা মূল্যসহ অন্যান্য সরকারি কর যথারীতি পরিশোধ করা হয়। কিন্তু স্থানীয় জলমহালের মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে সমিতির দুই প্রভাবশালী সদস্য চন্দন বর্মণ ও সুবল বর্মণের লোকদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এরপর জলমহালের দখল রাখতে উভয়গ্রুপ মরিয়া হয়ে ওঠে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরেও ২৯ অক্টোবর দুইপক্ষের মধ্যে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পাইকুরাটি ইউনিয়নের নওয়াদার গ্রামের বাসিন্দা তানুয়ার মিয়া বলেন, জলমহাল নিয়ে সমিতির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে দাঙ্গাহাঙ্গামা করে আসছে। তাদের জন্য সাধারণ মানুষের শান্তি নষ্ট হচ্ছে।
আতিক মিয়া বলেন, জলমহালের সংঘর্ষের ঘটনা এখন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে জড়ানো হচ্ছে। অথচ উভয়গ্রুপের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাতের আঁধারে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। নির্মমভাবে শ্যামাচরণ বর্মণকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে।
সমিতির সদস্য চন্দন বর্মণ অভিযোগ করেন, স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যানের মদতে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তিনি সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ঘটনার বিচার দাবি করেন।
অন্যদিকে অপর সদস্য সুবল বর্মণ বলেন, সংঘর্ষের আগের দিন থেকে ধর্মপাশা উপজেলার পার্শ্ববর্তী মোহনগঞ্জ উপজেলার বেশ কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী জলমহালের আশপাশের এলাকায় মহড়া দেয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী সুষেন,রব্বানী,মিষ্টু, কাইয়ুমকে জলমহাল এলাকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে। তাদের নামে মোহনগঞ্জ থানায় হত্যা মামলাসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এ ঘটনার ১৫ দিন আগেও তারা জলমহাল এলাকায় অস্ত্রসহ মোটরসাইকেল মহড়া দিয়েছে। বিষয়টি তারা পুলিশকে জানিয়ে ছিলেন। তারাই খুন ও হামলার ঘটনার ঘটিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ধর্মপাশা উপজেলার পাইকুরাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফেরদৌস রহমান বলেন, জলমহাল দখল ও সংঘর্ষের ঘটনাটি এখন রাজনৈতিকভাবে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান রুকন জড়িত থাকার কোনও অভিযোগ কেউ এখন পর্যন্ত করেনি। বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে প্রবাহিত হলে প্রকৃত দোষীরা পার পেয়ে যেতে পারে।
ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন রুকন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমি সুনামগঞ্জ জেলা সদরে অফিসিয়াল কাজে ছিলাম। নবাগত জেলা প্রশাসকের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ও সুনামগঞ্জ সদরে মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করেছি। পরে রাতে জানতে পারি এ ঘটনার খবর। এতে আমার বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা নেই। আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ফায়দা লোটার জন্য আমার নাম প্রচার করছে। আমি এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করি।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাধারণ গ্রামবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অহেতুক কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা হবে না। এ ঘটনায় রাতেই বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাতে সুনই নদী জলমহালের দখল নিয়ে সমিতির সদস্য সুবল বর্মণ ও চন্দন বর্মণের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ ঘটনায় শ্যামাচরণ বর্মণ নামের এক প্রবীণকে গলা কেটে হত্যা করা হয় এবং ১৫ জন আহত হয়। রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আট জনকে আটক করে। এ ঘটনায় ধর্মপাশা থানায় এখন পর্যন্ত কোনও মামলা দায়ের করেনি কোনও পক্ষ।