X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

যৌনশিক্ষা কী, কেন বাড়ছে যৌনবিকৃতি?

উদিসা ইসলাম
১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১০:০০আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১০:০০

 

সহপাঠী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর নতুন করে পাঠ্যপুস্তকে যৌনশিক্ষা বিষয়টিকে যথাযথভাবে উপস্থাপন ও শিক্ষাদানের বিষয়ে আলাপ উঠেছে। শারীরিক শিক্ষা বা যৌন ও প্রজনন শিক্ষা বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু টেক্সট পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও অভিযোগ আছে, শ্রেণিকক্ষে সেসব পড়ানো হয় না।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব অধ্যায় তাদেরকে না পড়িয়ে ‘নিজেরা পড়ে নিও’ পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রশ্ন হলো, কী এই যৌনশিক্ষা? কেনই বা সেটা ক্লাসে পড়ানো যায় না। গবেষকরা বলছেন, বয়সভিত্তিক যৌনজীবনকে তুলে ধরার শিক্ষাই যৌনশিক্ষা। যার ব্যবস্থা না থাকায় বাজারে সস্তা ও বিকৃত টেক্সটবই পড়ছে শিক্ষার্থীরা। যার কারণে বাড়ছে বিকৃতি। মনোবিশ্লেষকরা বলছেন, সঠিক যৌনশিক্ষা না পাওয়াতেই কিশোর থেকে যুবক বয়সীদের মধ্যে যৌনবিকৃতি তৈরি হচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকে যৌনশিক্ষার যথাযথ টেক্সট সংযুক্ত করা গেলে এবং সামাজিক জীবনাচরণ সম্পর্কে পারিবারিক শিক্ষা দেওয়া গেলে অপরাধপ্রবণতা কমবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতেমা সুলতানা শুভ্রা দীর্ঘদিন যৌনজীবন ও এ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ করছেন। নারী সারভাইভারদের নিয়ে কাজের এক পর্যায়ে যখন কিনা পুরুষ অভিযুক্তদের নিয়ে কাজ করতে গেলেন তখন তার ভিন্ন কিছু অভিজ্ঞতা হয়। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য করলাম আমাদের দেশে যৌনশিক্ষার উৎস যৌনবিকৃত বই। ছেলেরা মোবাইলে সেগুলোর ডিজিটাল সংস্করণ পড়ে। সেখান থেকে তারা যা শেখে সেটা যৌনশিক্ষা নয়। যৌনশিক্ষা একটা সার্বিক বোঝাপড়া। বয়স অনুযায়ী এটার আচরণ শিখতে হবে। একইসঙ্গে বয়স অনুযায়ী শারীরিক প্রস্তুতি, নারী পুরুষের সম্পর্ক, পুনরুৎপাদন, যৌনকাজ সবই এর আওতায় আনতে হবে। কিন্তু যখন সেই সুযোগ নেই এবং বইতে কেবল তারা রগরগে বর্ণনাই পাচ্ছে, তখন এর প্রয়োগ যে আরও ভয়াবহ হবে সেটাই স্বাভাবিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিকৃত বিবরণসহ বইগুলোতে নারীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করা হয় না। বরং আশেপাশে যত নারী চরিত্র আছে, তাদের সবার সঙ্গে যৌনসম্পর্কের বিবরণ থাকে। তা কখনোই সঠিক শিক্ষা হতে পারে না। ভুলে গেলে চলবে না যৌনশিক্ষা কখনোই পর্নগ্রাফি নয়।’

পারিবারিকভাবে যৌনশিক্ষা দিতে হবে উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাদেকা হালিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সন্তানদের শেখাতে হবে- তুমি কী করতে পারবে আর কী পারবে না। এখন নতুন পাঠ্যপুস্তক বেশি দরকার। ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে অবশ্যই যৌনশিক্ষা সম্পর্কিত বই পাঠ্যপুস্তক আকারে বাধ্যতামূলক করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নৈতিক শিক্ষার যে জায়গাগুলো আছে, সেগুলো আরও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। নিজের ভেতর যদি অন্য কোনও ধরনের ইচ্ছা জাগ্রত হয় সেটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত সেটাও শেখার আছে। পরিবার থেকেই সে শিক্ষা আসবে।’

সন্তানের সঙ্গে তার যৌনজীবন ও এর ধারাবাহিকতা নিয়ে আলোচনার রেওয়াজ আমাদের সমাজে নেই। এ কারণেই এ নিয়ে নানান সমস্যা দেখা দেয় বলে মনে করছেন মনোরোগ বিশ্লেষকরা। নিজের ১৫ বছরের সন্তানের মধ্যে বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষার বিষয়টি ধরতে পেরে বিষয়গুলো নিয়ে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করে নিজেই কাউন্সিলরের ভূমিকায় নামেন এক অভিভাবক। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানকে সঠিক পথ দেখানো আমারই কর্তব্য। সে বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে বিভিন্ন বিকৃত টেক্সট পড়ে এক ধরনের ফ্যান্টাসির ভেতর ঢুকে গিয়েছিল। আশপাশের সব নারীকেই সে তার যৌনজীবনের অংশ ভাবতে শুরু করেছিল। সঠিক বিষয়টা বোঝানোর পর সে ফ্যান্টাসি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। ফলে পাঠ্যপুস্তকে লুকোছাপা না করে বিষয়গুলো সরাসরি উল্লেখ করাটা জরুরি।’

কেবল পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি এবং তা পাঠদানের মধ্যে সীমিত না থেকে পরিবারের সম্পৃক্ততাও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে বয়স অনুযায়ী পাঠদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের ভেতরেও কাজ করতে হবে। পরিবারে যদি বিপরীত লিঙ্গের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকে, মানুষের মতামতকে মূল্য দেওয়া না শেখানো হয়, পরিবারের ভেতর বাবা মায়ের সম্পর্কে যদি সামঞ্জস্য না থাকে; তবে শুধু পাঠ্যপুস্তকে কোনও লাভ হবে না। এটা যেন আর দশটা বিষয়ের মতো আরেকটি সাবজেক্ট হিসেবে না থাকে। আর পাঠ্যসূচিতে যা অন্তর্ভুক্ত করা হবে তা অবশ্যই আমাদের সমাজ ও সংস্কৃতি অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের পাঠদানের আগে প্রতিটি বিদ্যালয়ের অন্তত দুজন শিক্ষককে এ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে উল্লেখ করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মেখলা সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যৌনশিক্ষা কী এবং যাদের এ বিষয়ে জানা নেই তাদের কীভাবে পাঠদান করানো হবে, তা নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতেই হবে। প্রথমত এই বিষয়গুলোকে আমাদের সমাজে অনুচ্চারিত, গোপন এবং লজ্জার বিষয় বলে ধরা হয়। সেগুলো যখন শ্রেণিকক্ষে বলা হবে তখন কতটা গ্রহণযোগ্য হবে সেটাও বিবেচনায় নিয়ে কাজটি শুরু করতে হবে। শিক্ষকদেরও শেখানোর আছে বলছি, কেননা প্রজনন শিক্ষা আর যৌনশিক্ষা এক বিষয় নয়। যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া শিক্ষকও এটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন না। এমনকি এ বিষয় পড়ানোর সময় তাদের মধ্যে জড়তা থাকলে সেটাও ভুল বার্তা দেবে। শিক্ষার্থীরা তখন এটাকে নিষিদ্ধ কিছু হিসেবেই দেখবে।’

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
কয়রায় সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই