X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

হাতিয়ায় পল্লী চিকিৎসককে নির্যাতন ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৩৬আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:৩৬

নোয়াখালীর হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামে অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে এক পল্লী চিকিৎসককে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ১১ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। সোমবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।

গ্রেফতারকৃতরা হলো– হাতিয়া উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের মোল্লা গ্রামের প্রধান আসামি জিয়া ওরফে জিহাদ (৩০), আদর্শ গ্রামের খবির উদ্দিনের ছেলে ফারুক (৩০), নবীর উদ্দিন ওরফে হোন্ডা নবীর (৩২) পিতা অজ্ঞাত, আবু তাহেরের ছেলে আলমগীর হোসেন (৪০) ও আবদুল করিমের ছেলে আবু তাহের (২৭)।

এ সময় তিনি জানান, গত ১ জানুয়ারি ওই এলাকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল বখাটে যুবক অনৈতিক কাজের অপবাদ দিয়ে স্থানীয় ওই পল্লী চিকিৎসক ও একজন গৃহবধূকে মারধর করে। পরে তাদের একটি গাছের সঙ্গে বেঁধেও মারধর করে। একপর্যায়ে পল্লী চিকিৎসককে নির্যাতনের ঘটনাটি তারা মোবাইল ফোনে ধারণ করে এবং তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি পুলিশের নজরে আসলে রবিবার জেলা পুলিশ সুপার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে নির্যাতনের শিকার ওই পল্লী চিকিৎসক বাদী হয়ে হাতিয়া থানায় ১১ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাতে অভিযান চালিয়ে এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।

এর আগে, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৭ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাতিয়ায় এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করেছে বলে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয় তা প্রকৃতপক্ষে কোনও নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও নয়। তা একজন পুরুষ অর্থাৎ এক পল্লী চিকিৎসককে টেনে ঘর থেকে বের করার দৃশ্য।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, হাতিয়া উপজেলার ২নং চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের এক গৃহবধূকে (৩২) ১ জানুয়ারি রাত ৯টায় তার নিজ বসতঘরে স্থানীয় জিয়া প্রকাশ জিহাদসহ (৩০) পাঁচ জন ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদের বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতে ভিকটিম নিজে বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত ওই পিটিশন মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম ফারুককে নির্দেশ দেন।

হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পিটিশন মামলাটির তদন্তভার ১২ জানুয়ারি গ্রহণ করেন। তিনি গত ১৬ জানুয়ারি ঘটনাস্থলে এসে ভিকটিম নারী, তার স্বামী, ভাই ও বোনসহ স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারেন যে, ভিকটিম আনুমানিক ১০-১১ বছর আগে দরখাস্তে উল্লিখিত উপজেলার চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের বিবাদী ফারুকের মা জাহানারা বেগমের কাছ থেকে ১৫ গণ্ডা জমি কিনে সেখানে ঘর নির্মাণ করে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছে। পরবর্তী সময়ে এই জমি নিয়ে জাহানারা বেগমের পরিবারের সঙ্গে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং বিবাদী ফারুকসহ অন্যরা তাকে জমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বিভিন্ন রকম হুমকি প্রদান করে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সালিশ হয়। গত ১ জানুয়ারি আনুমানিক রাত ৭টায় ভিকটিম স্থানীয় জনতা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় মহিউদ্দিনের বাড়ির পাশ দিয়া রাস্তা অতিক্রমকালে ফারুকসহ তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন ভিকটিমের দিকে টর্চলাইট মারে। তখন তিনি দৌড়ে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মুরগি খামারের সামনের রুমে ঢুকে যা। উল্লেখ্য, তখন পল্লী চিকিৎসক ওই রুমের ভেতরে ছিলেন। এ অবস্থায় ফারুকসহ এলাকার কয়েকজন লোক এসে ওই রুমে তাদের তালাবদ্ধ করে বাইরে থেকে শোর-চিৎকার করতে থাকে। ইতোমধ্যে পল্লী চিকিৎসক রুমের জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ফারুকসহ স্থানীয় লোকজন তালা খুলে তাকে মারধর করে টেনে রুম থেকে বাইরে এনে অনৈতিক কাজে জড়িত বলে সবাইকে জানায়। উত্তেজিত জনতা তাকে ও ওই নারীকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে রুমের সামনে সুপারি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে।

পরবর্তী সময়ে মোর্শেদ বাজার তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ সংবাদ পেয়ে ওই নারী ও মহিউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়ায় এবং কোনও অভিযোগ না থাকায় তাদের স্ব-স্ব অভিভাবকের জিম্মায় দেওয়া হয়। মারধরের দৃশ্য ভিডিও করা হয়েছে বলেও তারা তখন পুলিশকে এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাউকে জানাননি।

ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনাটি নিজ বাড়িতে ঘটেছে উল্লেখ করে ওই নারী ৫ জানুয়ারি বিজ্ঞ আদালতে পিটিশন মামলাটি দায়ের করেন। এতে জিহাদ (৩০), ফারুক (৩০),  মো. ফারুক (৩২), এনায়েত (৩০) ও ভুট্টো মাঝিকে (৩৫) আসামি করা হয়।

এছাড়া বিবাদী ফারুক (৩০)সহ উল্লিখিত বিবাদীরা ডা. মহিউদ্দিন ও জোছনাকে মারধর করে ভিডিও ধারণ করার বিষয়ে পৃথক এজাহার গ্রহণ করে মামলা রুজু প্রক্রিয়াধীন। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।   

আরও খবর: হাতিয়ায় গৃহবধূকে ধর্ষণচেষ্টার তদন্ত চলছে, ভাইরাল ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার: পুলিশ

 

 

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
হলমার্কের দুর্নীতির এক মামলার রায় আজ
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
৫ ঘণ্টা পর ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল স্বাভা‌বিক
সুইডেনের বিপক্ষে পর্তুগাল দলে জায়গা হয়নি রোনালদোর
সুইডেনের বিপক্ষে পর্তুগাল দলে জায়গা হয়নি রোনালদোর
সর্বাধিক পঠিত
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
লিটনের বাদ পড়া নিয়ে যা বললেন হাথুরুসিংহে
পদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
একীভূত হলো দুই ব্যাংকপদ্মার গ্রাহকরা এক্সিম ব্যাংক থেকে আমানত তুলতে পারবেন
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই