X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেষ দিনগুলোতে বাইডেনের ডানা ছাঁটার চেষ্টা পম্পেওর

বিদেশ ডেস্ক
১৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৫৪আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৮:৫৪

নীরবে প্রস্থান করতে রাজি নন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বিদেশ নীতির প্রধান সেনাপতি মাইক পম্পেও। শেষ দিনগুলোতে পররাষ্ট্র নীতিতে এমন কিছু মৌলিক সিদ্ধান্ত তিনি দিয়েছেন যা জো বাইডেনকে নিশ্চিতভাবে ভোগাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বাইডেন মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশ নীতি গত চার বছরে বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব, প্রভাব ক্ষুণ্ণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে তার মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিগত মাসগুলোতে বার বার করে বলেছেন, বিশ্বে আমেরিকার 'মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব' প্রতিষ্ঠাই হবে তার বিদেশ নীতির প্রধান লক্ষ্য। এমন লোকজনকে তিনি তার পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন যারা ‘একলা-চলো’ নীতির বদলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী। কিন্তু ক্ষমতার শেষ সময়ে গিয়ে চীন, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত মাইক পম্পেও দিয়েছেন যার পরিণতি জো বাইডেনকে ভোগ করতে হবে।

গত ১০ দিনে গুরুত্বপূর্ণ যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পম্পেও

চীনের স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে তাইওয়ানের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ রাখার যে নীতি যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বেইজিং।

ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন যা নিয়ে জাতিসংঘ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে বলা হয়েছে, এই সিদ্ধান্তে ইয়েমেনে মানবিক দুর্যোগ ভয়াবহ রূপ নেবে।

যে দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে জো বাইডেন বিশেষভাবে ইচ্ছুক, সেই কিউবাকে হঠাৎ করে সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্রের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে। ইরানে এখন আল কায়েদা তাদের প্রধান ঘাঁটি তৈরি করেছে এই অভিযোগ তুলে পম্পেও বেশ কিছু সিনিয়র ইরানি নেতা এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। জানা গেছে, এমনকি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নিয়ন্ত্রিত কিছু প্রতিষ্ঠানকেও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসার কোনও ইচ্ছা জো বাইডেনের না থাকলেও তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্কে সুর বদলাতে আগ্রহী। ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিতে ফেরা তার অন্যতম লক্ষ্য। ইয়েমেনের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনে সৌদি আরবের ওপর চাপ তৈরির জন্য ডেমোক্র্যাটদের বামপন্থী অংশের ভেতর থেকে বড় ধরনের চাপ রয়েছে তার ওপর। কিউবার সঙ্গে বৈরিতা দূর করার ব্যক্তিগত ইচ্ছা রয়েছে জো বাইডেনের। কিন্তু বেছে বেছে মাইক পম্পেও শেষ বেলায় ঠিক ওই জায়গাগুলোতে হাত দিয়েছেন।

খোঁচা-অপমান

শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত হননি পম্পেও। গত কয়েক দিন ধরে তিনি এমন সব বিবৃতি দিচ্ছেন যার প্রধান বক্তব্য- ডেমোক্র্যটরা আগেও তাদের বিদেশ নীতিতে আমেরিকার স্বার্থ দেখেনি, এবারও দেখবে না। যেমন, ওবামা সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পুরনো একটি ভিডিও তিনি টুইটারে পোস্ট করেছেন যেখানে কেরি বলছেন যে, ফিলিস্তিন নিয়ে ছাড় না দিলে আরব দেশগুলো ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না। ওই ভিডিও পোস্টের সঙ্গে পম্পেও লিখেছেন, ‘এই মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞকে চিনে রাখুন! তিনি যেটা হবে না বলেছিলেন, আমরা তা করে দেখিয়ে দিয়েছি।’

পম্পেও তার আরেক টুইটে বলেন, ‘জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি তহবিলের যোগানদাতা হিসেবে আমি মার্কিন করদাতা এবং আমেরিকার স্বার্থ দেখেছি।’ এ টুইটের সঙ্গে তিনি একটি ছবি পোস্ট করেন যে ছবিতে বারাক ওবামা, তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুজান রাইস এবং জাতিসংঘে তৎকালীন মার্কিন দূত সামান্থা পাওয়ার রয়েছেন। জো বাইডেনের সরকারেও সুজান রাইস এবং সামান্থা পাওয়ার জায়গা পেয়েছেন।

বাইডেনের বিকল্প কী

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিদেশ নীতি নিয়ে ট্রাম্প সরকারের শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে কী করতে পারেন জো বাইডেন? তার সামনে বিকল্প কী? বাইডেনের উপদেষ্টা শিবির থেকে বলা হচ্ছে, পম্পেওর এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সহজেই এগুলো উল্টে দেওয়া সম্ভব।

বারাক ওবামা সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা বিভাগে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করেছেন শীর্ষস্থানীয় আইনজীবী অ্যাডাম স্মিথ। তাকে উদ্ধৃত করে লন্ডনের ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকা লিখেছে, আইনগতভাবে পম্পেওর এসব নির্দেশনা সবই উল্টে দেওয়া সম্ভব। কারণ এগুলো নির্বাহী আদেশ যা প্রেসিডেন্ট পাল্টে দিতে পারেন। তবে বাতিলের আগে এসব সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে হবে যে কাজে অনেক সময় লাগতে পারে। শুধু যে কালক্ষেপণ হবে তাই নয়, এগুলো বদলাতে গেলে দেশের ভেতরে রাজনৈতিক চাপের মুখোমুখি হতে পারেন জো বাইডেন।

নভেম্বরের নির্বাচনে বাইডেন ফ্লোরিডায় কিউবান-অমেরিকানদের সমর্থন তেমন পাননি। ফলে, কিউবার ওপর বসানো ‘সন্ত্রাসে মদতদাতার’ তকমা ওঠাতে তাকে ১০ বার ভাবতে হবে।

তাইওয়ানের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত বদলানোর ক্ষেত্রেও একই রকম দ্বিধায় পড়তে পারেন তিনি। কারণ চীনকে শায়েস্তা করার ইস্যুতে কংগ্রেসে দুই দলের মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে। সাহস করে মাইক পম্পেও-র শেষ মুহূর্তের এসব সিদ্ধান্তের কিছুটা হলেও হয়তো বাইডেন উল্টে দিতে পারবেন বা দেবেন। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, আস্থার সঙ্কটই হবে বৈদেশিক নীতির ক্ষেত্রে নতুন মার্কিন প্রশাসনের সবচেয়ে বড় সমস্যা।

ইরান ও অন্য দেশগুলো বাইডেনের সঙ্গে নতুন কোনও চুক্তি করতে এখন দুই বার ভাববে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প দেখিয়েছেন, কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিও রাতারাতি উল্টে ফেলা যায়। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: ম্যাক্রোঁ
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিমার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে ভিত্তিহীন তথ্য রয়েছে
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
সর্বশেষ খবর
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছেলে, রান্নাঘরে পুড়ে মারা গেলেন মা
২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল কার্যালয়ে ঠিকাদারকে মারধর২৫ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, পুলিশ বলছে সিসিটিভির ফুটেজ পায়নি
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
উপজেলা নির্বাচন: অংশ নিতে পারবেন না পৌর এলাকার ভোটার এবং প্রার্থীরা
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ