X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বরূপে ফিরে আসুক: প্রধানমন্ত্রী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ জানুয়ারি ২০২১, ২২:০৫আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২১, ২৩:০৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে একটাই চাওয়া—এটি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাক। আজকে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সম্মানজনক বিশ্ববিদ্যালয়, কাজেই আমরা চাই এর পুরনো গৌরব আবারও ফিরে আসুক।

বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্জন—প্রতিটি সংগ্রামের সূতিকাগার হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করেছে—প্রতিটি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, অর্থাৎ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যে সামরিক শাসকরা একের পর ক্ষমতা দখল করতে শুরু করে। পঁচাত্তরের পর দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু অস্ত্রের ঝনঝনানি। সেখানে অস্ত্র, বোমাবাজি, মেধাবী ছাত্রদের বিপথে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষার মান নষ্ট করে দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেটা ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশ নষ্ট হয়। সেটাই আমরা হতে দেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবেই একটা জাতিকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল সেই পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট, জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে। আমাদের আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সব একে একে ধ্বংসের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু আবার এর প্রতিবাদও শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই। কারণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। এই প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, এমনকি ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন যে নির্বাচন বিএনপি করেছিল, খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল, সেই আন্দোলন যখন শুরু হয়, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। তার ফলে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে খালেদা জিয়াকে পদত্যাগ করতে হয়। এরপর নির্বাচন হয় জুন মাসের ১২ তারিখে, তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, দ্বিতীয় হচ্ছে শিক্ষার মান উন্নত করা এবং শিক্ষার পরিবেশ ঠিক করার ওপর গুরুত্ব দেই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল—বাংলাদেশের মানুষ একটি সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত ভবিষ্যৎ পাবে, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ পাবে। কিন্তু একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া এটি কখনোই সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এটা একান্তভাবে অপরিহার্য। কারণ, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ছেলেদের প্রথম দুটো কম্পিউটার কিনে দিয়ে বলেছিলাম, তোমরা দ্রুত শুরু করো। এখন শুনলে অবাক লাগবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হতে পেরে তিনি নিজে সত্যিই গর্বিত বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার পরিবারের সকলেই, আমার ছোট ভাই শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। আমার ছোট ভাই শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিল। আমার স্বামীও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং একটি হলের ভিপিও ছিলেন। এছাড়া আমাদের পরিবারের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাসে সারা বিশ্ব স্থবির। আমিও ঘরে অনেকটা বন্দি। মাঝে মাঝে মনে হয়, ২০০৭ সালে যখন গ্রেফতার হয়েছিলাম, তখন একটা ছোট কারাগারে ছিলাম—এখন মনে হয় বড় কারাগারে আছি। যার কারণে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে না পারাটা সত্যিই আমার জন্য অনেক কষ্টের, খুব দুঃখের। মনটা পড়ে আছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে।’

ভারতকে ধন্যবাদ, আরও ভ্যাকসিন আসছে

প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থাকবে না। ইতোমধ্যে আমরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ভারত থেকে উপহারস্বরূপ পেয়েছি, যেটি এসে পৌঁছে গেছে। এজন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আর আমরা যেটা টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটা ২৫-২৬ তারিখের মধ্যে এসে পৌঁছাবে। কাজেই কীভাবে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে সেসব পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি। অর্থাৎ, করোনা মোকাবিলায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবো, সেটাই আমরা আশা করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে আমরা চাই, এটি তার পুরনো গৌরব ফিরে পাক। আজকে যখন বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশে সর্বোচ্চ সম্মানজনক একটি বিশ্ববিদ্যালয়, কাজেই এর পুরনো গৌরব আবার ফিরে আসবে। এখানে জ্ঞানের চর্চা হবে, গবেষণা হবে, শিক্ষার প্রসার ঘটবে। আমাদের সকল অর্জনের বাতিঘর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সে আলো ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলাদেশে।’

সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠা করা, পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাকে যেমন গুরুত্ব দিয়েছি, সেইসঙ্গে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় আমরা তৈরি করে দিচ্ছি, যেটা আমি প্রথম শুরু করেছিলাম ৯৬ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। কারণ, বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে অনীহা ছিল ছাত্রদের। সেই অনীহা দূর করার জন্য এভাবে নামকরণ করে যাত্রা শুরু করি। এখন তো আমরা বহুমুখী বিশ্ববিদ্যালয় করে দিচ্ছি। আমি চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখলে হবে না, এটি একটি প্রতিষ্ঠান। যেটা আমাদের প্রতিটি অর্জনের পথ দেখিয়েছে। কাজেই সে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও সুন্দরভাবে উন্নত হোক, সেটাই আমরা চাই। আর সেদিকে লক্ষ রেখে আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। আগামী দিনে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের যে দক্ষ মানবশক্তি দরকার, এ দক্ষ মানবশক্তি গড়তে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখান থেকে যাত্রাটা শুরু হতে পারে। যাকে অনুসরণ করে সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় যেন সেভাবে কাজ করে। আমাদের যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসবে বা বিশ্ব যখন এগিয়ে যাবে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরা যাতে চলতে পারি। সেভাবেই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার দিশা দিতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে তার কেন্দ্রবিন্দু। আমরা সেটাই চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এটা অনেক পুরনো একটা বিশ্ববিদ্যালয়, আমরা শতবর্ষ উদযাপন করছি। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানসম্পন্ন একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সেটাই আমরা চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। এখন শিক্ষকদের দায়িত্ব ছাত্রদের শিক্ষাটা যেমন দেওয়া এবং ছাত্রদের দায়িত্ব শিক্ষা গ্রহণ করা। কারণ, শিক্ষিত মানুষ ছাড়া কোনও জাতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। আমার পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব ধরনের সহায়তা পাবে। এতটুকু একজন অ্যালামনাই হিসেবেও আমি বলতে পারি। আমাদের বাধা অতিক্রম করে যেতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন গবেষণা করা। গবেষণা ছাড়া কোনও অর্জন সম্ভব না। ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে দেখলাম, গবেষণার জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো যেটুকু পেতো, তা দিয়ে চলতো। কিন্তু গবেষণার জন্য আলাদাভাবে যে একটা সুযোগ সৃষ্টি করা দরকার, তা কিন্তু হতো না। আমরা প্রথম শুরু করলাম আলাদাভাবে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে গবেষণাকে গুরুত্ব দিতে। যার ফসল আজকে বাংলাদেশ পাচ্ছে। আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে যে এগিয়ে যাচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ যে গড়ে তুলেছি, তার সবই গবেষণার ফসল।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘গবেষণাকে সবসময় গুরুত্ব দিতে হবে। আমি অনুরোধ করবো, গবেষণাকে গুরুত্ব দেবেন, সেটাই আমরা চাই।’  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বঙ্গবন্ধুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

/এমএইচবি/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
ইউরোপ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে: সতর্ক ম্যাক্রোঁর
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
রবিবার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে, শনিবারও ক্লাস চলবে
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
অবৈধ ব্যবহারকারীদের ধরতে বাড়ি বাড়ি যাবে তিতাস
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
ছক্কায় মুশফিকের ‘আউট’ নিয়ে যা বললেন রনি
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা