X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

গৃহহীনদের স্বপ্ন হলো সত্যি

সাদ্দিফ অভি, খুলনা থেকে
২৩ জানুয়ারি ২০২১, ২১:৫৯আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২১, ২১:৫৯

দোচালা কুঁড়ে ঘরে কিংবা পরের জায়গার বারান্দায় শুয়ে নিজের একটি ঘরের স্বপ্ন দেখাই যায়। কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাই নেই তাদের সে স্বপ্ন সত্যি কী আদৌ হয়? হয়েছে!  দক্ষিণবঙ্গের গৃহহীন-ভূমিহীনরা নিজের ঘরের মুখ দেখা শুরু করেছে। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) দক্ষিণবঙ্গসহ সারাদেশের ৪৯২টি উপজেলার প্রায় ৭০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীনকে সেমি-পাকা ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে এই ঘরগুলো তাদের দেওয়া হয়। মুজিববর্ষে এই ঘরগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার।

“আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার”—এই স্লোগান নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আবাসন সুবিধার আওতায় আনার জন্য জমি ও গৃহ প্রদান করার উদ্যোগ নেয় সরকার। বিগত ৩ দিন দক্ষিণবঙ্গের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ঘুরে দেখা গেছে গৃহহীনদের মধ্যে ঈদের মতো আনন্দ। নতুন ঘর নিয়ে নতুন করে আবারও স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন তারা। ২ শতাংশ জমির মালিকানা এবং দুই বেডরুমের বাড়িতে পুরনো সংসার আবার প্রাণ পেতে যাচ্ছে নতুনের মতো।

গৃহহীনদের স্বপ্ন হলো সত্যি

আশ্রয়ণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়,  ‘দেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’– প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা বাস্তবায়নে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১ এবং  জমি আছে কিন্তু ঘর নাই, এমন পরিবারের সংখ্যা ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি পরিবারকে দুই শতক সরকারি খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানসহ দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সেমি-পাকা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ২১ জেলার ৩৬ উপজেলার ৪৪টি প্রকল্পে ৩ হাজার ৭১৫টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।

খুলনা

মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘরসহ জমি প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সারাদেশের মতো খুলনার নয়টি উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ৯২২টি পরিবারকে ঘরসহ জমি দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ডুমুরিয়া উপজেলায় সংযুক্ত হয়ে শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে এই কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ডুমুরিয়ায় একসঙ্গে ৬২টি ঘর তৈরি করা হয়েছে।

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার কাঁঠালতলা গ্রামে একসঙ্গে তৈরি করা হয়েছে ৬৪টি ঘর। এদিন প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত হওয়া অবস্থায় জেলা প্রশাসন গৃহহীনদের হাতে তুলে দেন বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র। অনুষ্ঠানে উপকারভোগী হতদরিদ্র শারমিন প্রধানমন্ত্রীর সামনে কথা বলতে গিয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি না দিলে আমি কোনওদিন ঘর করতে পারতাম না। আপনি এভাবে আমাদের মাঝে অনেকদিন বেঁচে থাকুন। আল্লাহ যেন এভাবেই আপনার মাধ্যমে আমাদের সহযোগিতা করেন।’

গৃহহীনদের স্বপ্ন হলো সত্যি

সাতক্ষীরা

মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সাতক্ষীরার ৭টি উপজেলায় ১ হাজার ১৪৮টি বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে উপহারের আওতায়। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ফিংড়ী ইউনিয়নের গাভা গ্রামে একসঙ্গে বাড়ি তৈরি হচ্ছে ১০০টি। তাছাড়া শনিবার সদর উপজেলার ১৩০টি পরিবারকে বাড়ির কাগজপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে তৈরি গাভা গ্রামের এই বাড়িগুলোর সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকেই তাদের ঘরের সামনে উপস্থিত আছেন। কেউ বসে কাজ দেখছেন, কেউবা পানি দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই তারা তদারকি করছেন। এমনকি মেঝে সমান করতে মাটি ভরাটের কাজটি তারা নিজ উদ্যোগে করেছেন।

প্রায় ৭০ বছর বয়স্ক রেজাউল ঘর পাওয়ার পর থেকে সারাদিন এখানেই অতিবাহিত করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার একটা বাড়ি দিসে এতেই আমার জীবন কাটি যাবে।’

বাগেরহাট

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসন জানায়, যাচাই-বাছাই করে ‘ক’ তালিকায় থাকা পরিবারের মধ্যে অধিক দরিদ্রদের দেওয়া হয়েছে ৪৩৫টি ঘর। পর্যায়ক্রমে দেওয়া হবে তালিকার অন্যান্যদের। সেখানকার বাসিন্দাদের সুপেয় পানির চাহিদা মিটাতে খনন করা হচ্ছে একটি মিষ্টি পানির পুকুর,  রয়েছে সংযোগ সড়ক। বন বিভাগের সহায়তায় ওই প্রকল্প এলাকা জুড়ে সবুজ বনায়নের আওতায় আনারও উদ্যোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের।

ঝড় জলোচ্ছ্বাস বন্যায় বছরের পর বছর কুঁড়ে ঘরে জীবনযুদ্ধ শেষে একটি সেমি পাকা বাড়ির মধ্যে আবারও নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করছে বাগেরহাটের শরণখোলায় শতাধিক পরিবার। শনিবার ৯২ পরিবার তাদের ঘরের কাগজপত্র বুঝে পায়।

শরণখোলার উপকারভোগী অপর্ণা রানী বলেন, ‘বৃষ্টি আসলে টিনের চালের ফুটা দিয়ে পানি পড়তেই থাকে। ঝড় জলোচ্ছ্বাস হইলে চাল নিয়ে যাইতো উড়াইয়া। এসবের মধ্যে দিয়েই ১২ বছর ধরে এখানে বাস করি। প্রধানমন্ত্রী ঘর না দিলে এভাবেই আমাদের চলতে হইতো। এখন আর আমাদের কষ্ট হবে না। উনি না দিলে আমরা কোনোদিন ঘর করতে পারতাম না।’

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ
জবি শিক্ষার্থী মীমের অভিযোগের বিষয়ে যা বললেন ডিবি হারুন
জবি শিক্ষার্থী মীমের অভিযোগের বিষয়ে যা বললেন ডিবি হারুন
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ব্যাপারে যা বললেন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ব্যাপারে যা বললেন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক
গানের শহরে খালিদ খালিদ কান্না...
গানের শহরে খালিদ খালিদ কান্না...
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই