X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

'বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক শুধু প্রযুক্তির স্বর্গ নয়, ভ্রমণেরও তীর্থ হবে'

হিটলার এ. হালিম, সিলেট থেকে ফিরে
২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:০০

শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) সিলেটে বিমান থেকে নামতেই সকালের ঝকঝকে রোদ। অপেক্ষমান মাইক্রোবাস সাংবাদিকদের তুলেই ছুটলো। ডানে থোকায় থোকায় চা বাগান ফেলে দ্রুত ছুটছি আমরা সবাই। পথে আলাপে মত্ত এ ওর সঙ্গে। আলাপের শ্রোতা বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটি সিলেটের উপ-প্রকল্প পরিচালক ফিরোজ আহমেদ। কথা শেষ না হতেই আমাদের মাইক্রোবাস গিয়ে পড়লো বিশাল বিল এলাকায়। এত বড় বিল পেরিয়ে যেতে হবে? ফিরোজ আহমেদ বললেন, বেশি দূর না। বিলের মাঝামাঝি আমাদের গন্তব্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, সিলেট সেখানেই।

শুকনো মওসুম। ঘাসভর্তি বিলের দুই পাশে গরু চরছে। অল্প কিছু লোকজনের আনাগোনা। বিলের মাঝ চিরে চলে গেছে রাস্তা। শেষ দেখা যায় না। দৃষ্টির বাধা হয়ে দাঁড়ায় কুয়াশা। গাড়ি চলতে চলতেই কোম্পানীগঞ্জ লেখা সাইনবোর্ডটা দেখলাম। দূর থেকে দেখা গেল একটা ভবন, টাওয়ার মতো। 

'বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক শুধু প্রযুক্তির স্বর্গ নয়, ভ্রমণেরও তীর্থ হবে' মিনিট বিশেক পর হাইটেক সিটির কাছাকাছি আমরা। মূল রাস্তার পাশেই লেক। তার উপরে দৃষ্টিনন্দন সেতু। সেতু পেরিয়ে গাড়ি থামলো একটি ভবনের সামনে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক সিলেটের প্রশাসনিক ভবন ওটা। পাশে ব্যাংক ভবন। কুয়াশার কারণে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজ উড়তে ২ ঘণ্টা দেরি করেছিল বলে দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম অনুষ্ঠান প্রায় শেষ। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্টেপ-২১ সলিউশনস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষর হলো এর মধ্যে। প্রতিষ্ঠানটি হাইটেক পার্কে জায়গা বরাদ্দ পেয়েছে।

ধূ ধূ বিরানভূমির মাঝে প্রায় ১৬৩ একর জায়গায় তৈরি হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক-সিলেট। মরুভূমি হলে এটা হতো নির্ঘাৎ মরুদ্যান। আবার বর্ষা এলেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে থাকে বিলটি। জলজমিনে জেগে থাকে কেবল এই সিটি। ড্রোনের চোখে লাগে অপূর্ব। ২০ ফুট গভীর বিলের বিশাল অংশ ভরাট করেই তৈরি করা হয় এই পার্ক। 

কর্তৃপক্ষ জানালো, এমনভাবে ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে, বড় বড় বন্যা হলেও প্রকল্পে পানি উঠবে না।

দূর থেকে যেটাকে টাওয়ার মনে হচ্ছিল ওটা সফটওয়্যার ভবন। যার আরেক নাম সেভেন-ডি। নির্মাণকাজ শেষ হয়নি এখনও। মার্চের মধ্যে শেষ হবে বলে জানালেন পার্কের প্রকল্প পরিচালক ব্যারিস্টার গোলাম সারোয়ার। তিনি বললেন, এরইমধ্যে প্রকল্পের ৯২ শতাংশ অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ব্যয় হচ্ছে মোট ৩৩৬ কোটি টাকা। 

'বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক শুধু প্রযুক্তির স্বর্গ নয়, ভ্রমণেরও তীর্থ হবে' গোলাম সারোয়ার আরও জানান, এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। যা শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। তবে তিনি আশাবাদী, মার্চের মধ্যে পুরো নির্মাণকাজই শেষ হবে।

নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ, পানির লাইন ও রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ। গ্যাস লাইন বসানোর কাজ চলছে। থাকবে উচ্চগতির ইন্টারনেট। 

এই প্রকল্পের বড়  চ্যালেঞ্জ কী ছিল জানতে চাইলে গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আগে শহর থেকে এখানে আসতে লাগতো ২ ঘণ্টারও বেশি। এখন ১৫-২০ মিনিট লাগে। আবার বর্ষার মধ্যেই মাটি ভরাট করতে হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে আমরা একটি সফল সমাপ্তির দিকে পৌঁছেছি।’ তিনি আরও জানান, সিলেট চেম্বার অব কমার্স তাদের আশ্বাস দিয়েছে, সিটি সংলগ্ন রাস্তায় যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করে দেবে।

প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেলো, প্রকল্পের বেশিরভাগ অংশে মাটি ভরাটের কাজ শেষ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লটের দিকে ভূমি উন্নয়নের কাজ চলছে। সিটির ভেতর নির্মিত রাস্তা ধরে দক্ষিণ দিকে এগোলে দেখা যাবে টাওয়ারের মতো সফটওয়্যার ভবন। এখানেই হবে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার। এর জন্য ৭ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

জানা গেলো, প্রশাসনিক ভবনের পূর্ব দিকে যে খোলা জায়গা আছে সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করা হবে। থাকবে ডরমিটরিও।   

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক-সিলেট সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘এখানে যেসব কোম্পানি আসবে তাদের অনেক সুবিধা দেওয়া হবে। সুবিধা না দিলে কেউ তো এখানে আসবে না, টাউনশিপও গড়ে উঠবে না। তা না হলে সিটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।’ 

তিনি আরও জানান, ৮টি প্রতিষ্ঠানকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সনি, আরএফল, ব্যাবিলন ইত্যাদি। তিনি আশাবাদী এই প্রকল্পে ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। 

হোসনে আরা বেগম বলেন, প্রকল্প এলাকায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মাণ করা হবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি অঙ্গন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল থাকবে। শিগগিরই এসবের নির্মাণকাজ শেষ হবে।

জানা গেল, ৩২ একর জমি বরাদ্দ নিয়েছে সনি। এখানে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে প্রতিষ্ঠানটি। ২০ একর জায়গা নিয়েছে আরএফল। প্রতিষ্ঠানটি সেখানে তাদের ভিশন ব্র্যান্ডের ৬৬টি আইটেম তৈরি করবে। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই লক্ষ্য হলো এখানে নির্মিত পণ্যগুলো ভারতের ৭টি রাজ্যে (সেভেন সিস্টার্স) রফতানি করা। জায়গা বরাদ্দ নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানগুলোকে পার্ক কর্তৃপক্ষ ৬ মাস সময় দেবে সংশ্লিষ্টদের কারখানার ডিজাইন জমা দেওয়ার জন্য। এরইমধ্যে হাইটেক পার্কের ব্যাংক ভবনে অগ্রণী ব্যাংক জায়গা বরাদ্দ নিয়েছে বলে জানা গেছে।  

'বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক শুধু প্রযুক্তির স্বর্গ নয়, ভ্রমণেরও তীর্থ হবে' শুক্রবার সারাদিনই কেটে গেলো পার্ক দেখে। দিনভর চললো স্টার্টআপদের নিয়ে প্রতিযোগিতা ‘স্টার্টআপ কম্পিটিশান-২০২১ (সিলেট চ্যাপ্টার)।’ প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, পরিকল্পনা কমিশনের সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী, প্রমুখ। দিনব্যাপী প্রতিযোগিতা ও কর্মশালায় ২৬ প্রতিযোগী অংশ নেয়। এরমধ্যে ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ীদের (স্টার্টআপ) আইটি ব্যবসা পরিচালনা ও গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, সিলেটে বিনামূল্যে জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হবে। তারা একটি নির্দিষ্ট সময়কাল সেখানে তাদের স্টার্টআপের ইনকিউবেশন তথা প্রাথমিক পর্যায় পার করতে পারবেন। বিজয়ী প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রথম হলো টাবসা স্টুডিও, দ্বিতীয় খানিদানি, তৃতীয় ইকো আইটি, চতুর্থ এইড ফর অল, পঞ্চম ফার্মার্স স্মাইল, ৬ষ্ঠ স্মার্ট সিটি ফর লাইফ, ৭ম রি-ইসার্চ, ৮ম হাটবাজার, ৯ম অপারাজেয় টকস ও দশম এআরএফ।

স্টার্টআপ খানিদানি সিলেটভিত্তিক অনলাইন ফুড ডেলিভারি অ্যাপ। এই নামে তাদের ওয়েবসাইটও আছে। খানিদানির তিন সদস্য জানালেন, তারা শুরু করেছেন সিলেট থেকে। পর্যায়ক্রমে বিভাগের অন্যান্য জেলা শহরে তাদের সেবা বিস্তৃত করবেন। এরইমধ্যে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে অ্যাপটির।  

সারাদিনের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ঘুরে দেখে যখন ফেরার অপেক্ষায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে- ঠিক সে সময় ডুবছিল সূর্য। সবাই সাক্ষী হলো এক অভূতপূর্ব দৃশ্যের। শুকনো বিলের ঘাসে টুপ করে হারিয়ে গেল ডিমের কুসুমের মতো সূর্যটা। প্রকল্পে ঢোকার মুখে সেতুতে দর্শানার্থীদের ভিড়। ছবি তুলতে ব্যস্ত সবাই। প্রকল্প কর্মকর্তা বললেন, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক-সিলেট শুধু প্রযুক্তির স্বর্গ নয়, ভ্রমণেরও তীর্থ হবে।  

ছবি : প্রতিবেদক ও সংগ্রহ

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!